উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের সত্তোর্ধ্ব ইদ্রিস মিয়া জানান, ‘আমার জীবনের ৫০ বছরে এমন পানি দেখছি না, রাতটা অনেক আতংক নিয়ে পার করছি, এখন কোথায় গিয়ে আশ্রয় নিবো ভাবছি।’
সুনামগঞ্জের সীমান্তবর্তী তাহিরপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতির দিকে যাচ্ছে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন, যাদুকাটা নদীর পানি ফুলে-ফেঁপে জানান দিচ্ছে বন্যার ভয়াবহতার।
এমন বাস্তবতায় সকাল থেকেই আশ্রয়কেন্দ্র ও উঁচু জায়গাতে ছুটছে বিপর্যস্ত লোকজন। আর বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় সন্ধ্যা হতেই অন্ধকারে ডুবে থাকছে গোটা জনপদ। মোবাইল নেটওয়ার্ক স্বাভাবিক না থাকায় অনেকেই তাদের স্বজনদের খোঁজ নিতে পারছেন না। এ নিয়ে জনমনে ভীতি আর উৎকন্ঠা কাজ করছে। রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ অফিসগুলোতে পানি ঢুকে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে গোটা তাহিরপুর উপজেলা।
এদিকে বানভাসি মানুষ ঘর ছেড়ে আশ্রয়ের খোঁজে দিগ্বিদিক ছুটছে। অনেকে গৃহপালিত পশু নিয়েও পড়েছেন বিপাকে। যেখানেই ছুটছেন গৃহপালিত পশুদের সাথে নিয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেক পরিবারের নিজস্ব নৌকা না থাকায় দীর্ঘ সময় ধরে পানিবন্দি অবস্থায় বাড়িঘরে আটকা পড়ে থাকতে হচ্ছে।
তাছাড়া হাট-বাজারগুলোতে পানি ঢুকে পড়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। এসব বানভাসি মানুষের জন্য এখন শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও নিরাপদ আশ্রয় জরুরি হয়ে দেখা দিয়েছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার থেকে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের পানিবন্দি মানুষের জন্য ৪টি স্থায়ী ও ৩০টি অস্থায়ী বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে এসব আশ্রয়কেন্দ্রে বিপর্যস্ত লোকজন পরিবারের সদস্যদের ও গবাদিপশু সাথে নিয়ে ভীড় করছেন।
উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের সত্তোর্ধ্ব ইদ্রিস মিয়া জানান, ‘আমার জীবনের ৫০ বছরে এমন পানি দেখছি না, রাতটা অনেক আতংক নিয়ে পার করছি, এখন কোথায় গিয়ে আশ্রয় নিবো ভাবছি।’
উপজেলার দিঘীরপাড় ও মল্লিকপুর গ্রামের মানুষেরা জানান, ‘এমন বন্যা আগে কখনো দেখিনি, রাত থেকে হুড়মুড় করে ঘরের ভেতর পানি ঢুকতে শুরু করে। ভোর হতেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বন্যাআশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছি।’
বালিজুরি ইউনিয়নের আনোয়ারপুর গ্রামের বাসিন্দা রেজা সিদ্দিকী বলেন, ‘বিদ্যুৎ নেই, মোবাইলে নেটওয়ার্কও কাজ করেনা। কারো সাথেই যোগাযোগ করতে পারছিনা। মনে হচ্ছে ভয়াবহ এক বিপর্যয়ের দিকে আমরা আগাচ্ছি।’
উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের শিক্ষক আফজালুল হক শিপলু ও উদ্যোক্তা মাহবুব মল্লিক জানান, ‘বৃহস্পতিবার রাতে আমাদের পুকুরের কয়েক লক্ষাধিক টাকার মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েও শেষ রক্ষা করতে পারিনি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান কবির বলেন, পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে। প্রয়োজনীয় সব জায়গায় আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি নজরদারির জন্য একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। পানিতে আটকা পড়া মানুষদের উদ্ধারে প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিপর্যস্ত মানুষের মাঝে শুকনো খাবার ও ওষুধ বিতরণ করা হচ্ছে।