পঞ্চগড়ে নৌকাডুবি: নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫৬, নিখোঁজ ৪০

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৬ জনে। এখনো নিখোঁজ রয়েছেনে ৪০ জনের অধিক মানুষ।

মঙ্গলবার সকালে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে দুটি ও বোদার করতোয়ায় দুটি মরদেহ ভেসে ওঠে। পরে স্থানীয়রা দেখতে পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে জানালে মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তবে তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার করা মরদেহগুলোর নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

বিষয়টি নিশ্চিত করে পঞ্চগড় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার তুষার কা‌ন্তি রায় বলেন, আজ সকালে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জের করতোয়ায় দুটি, বোদায় আরও দুটি মরদেহ ভেসে ওঠে। পরে স্থানীয়রা দেখতে পেয়ে আমাদের জানালে মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

তিনি আরও বলেন, পঞ্চগড়সহ আশপাশের জেলার ফায়ার সার্ভিসের আট ইউনিট উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে। এছাড়া রংপুর, কুড়িগ্রাম ও রাজশাহী থেকে আসা তিনটি দলের ৯ ডুবুরি উদ্ধার কাজে অংশ নিয়েছেন।

এদিকে জেলা প্রশাসনের জরুরি তথ্য কেন্দ্রের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ৫১ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ডুবে যাওয়া নৌকাটিতে কতজন যাত্রী ছিলো তার সঠিক তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। তবে নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনরা প্রশাসনের কাছে রোববার রাতে ৬৬ জনের তালিকা দিয়েছেন। সে অনুযায়ী এখনো নিখোঁজ রয়েছেন ৪০ জন।

এর আগে রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের আউলিয়া ঘাট এলাকায় নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। কিছু মানুষ সাঁতরে নদীর তীরে ফিরতে পারলেও অনেকেই নিখোঁজ থাকেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানায়, রোববার দুপুরে মহালয়া দেখতে আউলিয়া ঘাট থেকে নৌকায় বদশ্বেরী ঘাটে যাচ্ছিলেন সনাতন ধর্মাবলম্বীর প্রায় শতাধিক মানুষ। নৌকাটি ছাড়ার শুরুতেই দুলতে থাকে। এক পর্যায়ে দুলতে দুলতে মাঝ নদীতে গিয়ে ডুবে যায়।

এ ঘটনায় মৃতরা হলেন- হাশেম আলী (৭০), শ্যামলী রানী (১৪), লক্ষ্মী রানী (২৫), অমল চন্দ্র (৩৫), শোভা রানী (২৭), দীপঙ্কর (৩), প্রিয়ন্ত (২.৫), রুপালি ওরফে খুকি রানী (৩৫), প্রমিলা রানী (৫৫), ধনবালা (৬০), সুনিতা রানী (৬০), ফাল্গুনী (৪৫), প্রমিলা দেবী, জ্যোতিশ চন্দ্র (৫৫), তারা রানী (২৫), সানেকা রানী (৬০), সফলতা রানী (৪০), বিলাশ চন্দ্র (৪৫), শ্যামলী রানী ওরফে শিমুলি (৩৫), উষশী (৮), তনুশ্রী (৫), শ্রেয়সী, প্রিয়ন্তী (৮), সনেকা রানী (৬০), ব্রজেন্দ্র নাথ (৫৫), ঝর্ণা রানী (৪৫), দীপ বাবু (১০), সূচিত্রা (২২), কবিতা রানী (৫০), বেজ্যে বালা (৫০), দিপশিখা রানী (১০), সুব্রত (২), জগদীশ (৩৫), যতি মিম্রয় (১৫), গেন্দা রানী, কনিকা রানী, সুমিত্রা রানী, আদুরী (৫০), পুষ্পা রানী, প্রতিমা রানী (৫০), সূর্যনাথ বর্মন (১২), হরিকেশর বর্মন (৪৫), নিখিল চন্দ্র (৬০), সুশীল চন্দ্র (৬৫), যুথি রানী (০১), রাজমোহন অধিকারী (৬৫), রুপালী রানী (৩৮), প্রদীপ রায় (৩০), পারুল রানী (৩২), প্রতিমা রানী (৩৯) ও শৈলবালা। বাকিদের নাম-পরিচয় এখনো জানা যায়নি।

এ ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান ও পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দীপঙ্কর রায় বলেন, এখন পযর্ন্ত ৫১ জনের মরদেহ উদ্ধার করে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আমাদের কাছে থাকা তথ্য মতে আরও ৪০ জনের মতো লোক নিখোঁজ রয়েছে। তবে নিখোঁজের সংখ্যা নির্দিষ্ট করা বলা যাচ্ছে না। উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আজ সকাল থেকে ৪ জনের লাশ পাওয়া গেছে। নিখোঁজ বাকিদের উদ্ধারে কাজ চলছে।

ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের সৎকারের জন্য ২০ হাজার টাকা ও আহতদের পাঁচ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন রেলপথমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম সুজন এবং ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান। এ সময় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী সরকারের পক্ষে নিহতদের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।