ময়লার স্তুপ সরিয়ে মাটি ভরাট করে পরিত্যক্ত জমির চেহারা বদলে ফেলা হয়। ইটের সলিং, বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবস্থা করে সারি সারি করে সাজানো হয় পুরো এলাকাকে। ব্যবসার ধরণ অনুসারে কয়েকটি ব্লকে ভাগ করা হয়। ছোট ছোট করে দোকানকোটা বরাদ্দ করা হয় একেকজনকে। সবমিলিয়ে আড়াই হাজার হকারের ব্যবস্থা করা হয় সেখানে। এতে খরচ পড়ে প্রায় কোটি টাকা। পরবর্তীতে ঢাকঢোল পিটিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনও করা হয় এই প্রকল্পের।কিন্তু কিছু সবজি ও মাছ বিক্রেতা ছাড়া আর কোনো হকারের পা পড়েনি নগরীর লালদিঘীর পাড়ের সেই নির্ধারিত স্থানে। ফলে হকারদের দখলেই ছিল নগরীর প্রধান সড়ক-ফুটপাত। অবশ্য এক পর্যায়ে সিসিকের কঠোর অবস্থানের কারণে শেষ পর্যন্ত সড়ক ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল হকাররা।
কিন্তু গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকেই ফের হকারদের দখলে সিলেট নগরীর সড়ক-ফুটপাত।
পরিবর্তিত পরিস্থিতে ফুটপাত দখলমুক্ত করতে একাধিকবার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছে পুলিশ ও সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। তবুও মিলছে না প্রতিকার। উল্টো সিসিকের সঙ্গে ‘চোর-পুলিশ’ খেলছে হকাররা।
নগরবাসীরা বলছেন, হকার উচ্ছেদে সিসিকের কঠোর অবস্থান না থাকায় ফুটপাত দখলমুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। যার কারণে অভিযানের পরপরই আবার সড়ক দখলে নেয় তারা।
অন্যদিকে সিসিক বলছে, হকারদের জন্য নির্ধারিত স্থানে ক্রেতারা না যাওয়ায় এই পরিস্থিতির স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না। ক্রেতাদেরও এ বিষয়ে আরও সচেতন করতে হবে।
বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নগরীর বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা ও আম্বরখানা থেকে শুরু করে প্রধান প্রধান সড়কের দু’পাশ দখল করে রেখেছেন ভাসমান ব্যবসায়ীরা। বাহারি পণ্যের পসরা সাজিয়ে রেখেছেন শত শত হকার। প্রতিদিনিই নগরীর প্রধান সড়কগুলো দখল করে এভাবে ব্যবসা করছেন হকাররা।
এতে করে পথচারীদের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে। দীর্ঘ যানজট দুর্ভোগে ভুগতে হচ্ছে নগরবাসীকে। এতে অতীষ্ট হয়ে পড়েছেন পথচারীরা।
কলেজ শিক্ষার্থী নয়ন ভট্টাচার্য বলেন, ‘ব্যবসা জন্য নির্দিষ্ট জায়গা থাকার পরও হকারা ব্যবসায়ীরা রাস্তার দু’পাশ দখল করে রেখেছেন। এতে করে রাস্তা আরও সংকীর্ণ হচ্ছে। ফলে অসহনীয় যানজটে পড়তে হচ্ছে আমাদের। এভাবে চলতে থাকলে নগরবাসীকে আরও দুর্ভোগ পোহাতে হবে।’
নোমান আহমদ নামের এক ব্যবসায়ী বলেন- ‘বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় আসলেই দেখা যায় হকাররা সড়ক দখল করে তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। সাবেক মেয়র তাদের ব্যবসার জন্য জায়গা করে দিয়েছিলেন কিন্তু তারা ওই জায়গা ছেড়ে দিয়ে বারবার রাস্তায় এসে ফুটপাতে ব্যবসা করছেন। তাহলে এত টাকা খরচ করে কেন তাদেরকে ব্যবসার জায়গা করে দেয়া হলো?’
তিনি আরও বলেন, ‘বারবার প্রশাসন তাদের তাড়ানোর চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কোনো উন্নতি হচ্ছে না। এ বিষয়ে নগর কর্তৃপক্ষকে আরো কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে। তা না হলে কখনও এই সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে না।’
এর আগে, চলতি বছরের ১০ মার্চ নগরীতে স্থায়ীভাবে হকার পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেন সাবেক মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে নগর ভবনের পাশে লালদীঘিরপাড় এলাকায় হকারদের ব্যবসার ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে অস্থায়ীভাবে শেড নির্মাণ করা হয়। যেখানে আড়াই হাজার হকার একসঙ্গে বসে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করতে পারতেন। কিন্তু কিছু সবজি বিক্রেতা আর মাছ বিক্রেতা ছাড়া সেখানে পা পড়েনি কারও।
এ বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকার সিলেট ভয়েসকে বলেন, ‘হকার সমস্যা একদিনে সমাধান করা সম্ভব না। সিটি করপোরেশনের তাদের জন্য জায়গা নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু তারা সেখানে বসছে না। এমনকি নিয়মিত মোবাইল কোর্টের অভিযান পরিচালনা করেও তাদেরকে নিরধারিত স্থানে নেওয়া যাচ্ছে না।
তিনি বলেন-‘আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে আমরা সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। হকার এবং ক্রেতা উভয়ই যদি ওই জায়গায় (হকারদের নির্ধারিত স্থান) যেতে না চান তাহলে এই সমস্যা সমাধান করা যাবে না।
সিসিকের প্রধান নির্বাহী আরও বলেন- ‘যদি এমনটা না হয়, তবে অভিযান চালিয়েও কোনো লাভ হবে না। বরং একদিকে প্রসাশন যাবে অন্যদিকে তারা আগের অবস্থানে ফিরে আসবেন। এ নিয়ে সম্মিলিত বৈঠক করে এর টেকসই সমাধানে নতুন সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’