নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে, ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত

সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপ থেকে ঘনীভূত হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে পরিণত হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে সাগর আরও বেশি উত্তাল হয়ে পড়ায় দেশের চার সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত এবং নদী বন্দরগুলোতে ২ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি সাগরে অবস্থানরত নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেইসঙ্গে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়।

নিম্নচাপের প্রভাবে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি হতে পারে। তবে উপকূলীয় এলাকায় ভারী বৃষ্টির শঙ্কা রয়েছে।

আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘নিম্নচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। সাগর উত্তাল থাকায় আমরা সতর্কতা সংকেত বাড়িয়েছি। এখনও এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে তা বলা যাচ্ছে না। তবে ঝড়ে পরিণত হওয়ার শঙ্কা থেকে যাচ্ছে। আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।’

আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, আন্দামান সাগর এবং তৎসংলগ্ন দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ঘণীভূত হয়ে নিম্নচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি গভীর নিম্নচাপ আকারে পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও আশেপাশের এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।

আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়— খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা ও সিলেট বিভাগের দু’-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের উপকূলীয় এলাকায় ভারী বৃষ্টি হতে পারে।

আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আজ সকালে গভীর নিম্নচাপটি আগের চেয়ে বাংলাদেশের ভূখণ্ডের এগিয়ে এসেছে। এটি শনিবার ছিল চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে। আজ রবিবার (২৩ অক্টোবর) সকালে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে। একইভাবে কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে এখন আছে ৭৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর এখন আছে ৮৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর এখন ৭৮০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছে। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।

নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্ব্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে।

এ কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

পাশাপাশি উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেইসঙ্গে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।

এদিকে আজ দুপুর ১টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য দেওয়া আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়— খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার অঞ্চলের ওপর দিয়ে পূর্ব বা উত্তর-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ২ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

ভারতের আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, ২৫ অক্টোবর সিত্রাং বাংলাদেশ উপকূলের তিন কোনা কোস্ট এবং সন্দ্বীপের মধ্য দিয়ে স্থলভাগে প্রবেশ করতে পারে। এর প্রভাবে ২৪ অক্টোবর থেকে উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে এবং পূর্ব-পশ্চিম মেদিনীপুরও ভারী বৃষ্টিপাত হবে। এছাড়া উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়াতে ভারী বৃষ্টি এবং কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টি স্থলভাগে প্রবেশের সময় বাতাসের গতিবেগ থাকতে পারে ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার।

প্রসঙ্গত, বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) অধীন জাতিসংঘের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাগর তীরের ১৩টি দেশের আবহাওয়াবিদদের সংস্থা এস্কেপ ঘূর্ণিঝড়ের নাম দিয়ে থাকে। নামের ক্রম অনুযায়ী এবার ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলে তার নাম হবে ‘সিত্রাং’। ‘সিত্রাং’ নামটি থাইল্যান্ডের দেওয়া।