নিজের ঘরে কবে ফিরবেন জানা নেই বানভাসি বাচ্চু মিয়ার!

টাঙ্গুয়ার হাওর পাড়ের জয়পুর গ্রামের বাচ্চু মিয়া। ৩ ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে ভালই কাটছিল সংসার জীবন। বর্ষাকালে ছোট দু’টি বারকি নৌকা দিয়ে মাছ ধরা আর শুকনো মৌসুমে অন্যের জমিতে কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি। গেল বন্যায় হাওরের আফাল (ঢেউ) তার বসতবাড়ি কেড়ে নিয়েছে। পরে স্ত্রী সন্তান নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেন। এখন পার্শ্ববর্তী গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়িতে থাকা হচ্ছে। সেখানেই ঈদের দিনটা কাটাতে হচ্ছে বাচ্চু মিয়ার পরিবারকে। হারানো ভিটায় নিজের একচালা ঘরটা মেরামত করে কখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন, তা জানা নেই বাচ্চু মিয়ার।

‘বাচ্চাদের বই-খাতা, ঘরের কাপড়চোপড় সবতাই বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। কয়েক বস্তা ধান ছিল তাও নিয়া গেছে। বাইরে মাছ ধরার দুইটা নৌকা বান্ধা আছিল, সকালে আর খুঁজে পাইনি’ কান্না মিশ্রিত গলায় কথাগুলো বলছিলেন বাচ্চু মিয়া। বাচ্চু মিয়া আরো জানান, ‘২দিন আগে ঘর মেরামতের জন্য ১০ হাজার টাকা সহায়তা পেয়েছি। আগে তো খেতে হবে তাই কিছু টাকা দিয়ে হাঁড়িপাতিল কিনেছি। কিন্তু সামান্য এই টাকায় ঘর কিভাবে মেরামত করব বুঝতেছি না।’

ভয়াবহ এই বন্যায় জয়পুর গ্রামের বাচ্চু মিয়ার মতো পার্শ্ববর্তী ৩টি গ্রামের অর্ধ শতাধিক পরিবার হাওরের আফালে তাদের ভিটা হারিয়েছে। সবকিছু হারিয়ে তারা স্বর্বশান্ত। ঈদ তাঁদের কাছে এখন কেবলই সাধারণ একটা দিনে পরিণত হয়েছে।

জয়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, তাহিরপুরে বন্যায় অনেক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কিছু পরিবার আছে যারা ভিটেমাটি সবই হারিয়েছেন। তাঁদের পুর্নবাসনের জন্য সহায়তা জরুরি।

শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী হায়দার জানান, ঘরবাড়ি মেরামতের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের ১০ হাজার টাকা আমার ইউনিয়নের তুলনামূলক বেশি ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের কাছে পৌছে দিয়েছি। তবে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের জন্য আরো সহায়তা প্রয়োজন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, সম্প্রতি একযোগে উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের অপেক্ষাকৃত বেশি ক্ষতিগ্রস্থ এমন ৫০৮টি পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের নগদ অর্থ সহায়তা জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তাহিরপুরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সংখ্যা আরো বেশি। পর্যায়ক্রমে ক্ষতিগ্রস্থ সবাইকে সহায়তা দেওয়া হবে।