পদ্মা সেতুর নাট-বল্টু খোলা যুবক দেশের এত বড় স্থাপনা নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে ভিডিও করেছে, ভিডিও আপ করার পরপরই সে তার টিকটক এবং ফেসবুক আইডি ডিঅ্যাক্টিভ করে দিয়েছিল বলে জানিয়েছে সিআইডি। সংস্থাটি বলছে, ‘অপরাধীরা অপরাধ করার পর যেসব কর্মকাণ্ড করে এই যুবকও তাই করেছে। তার গিল্টি মাইন্ড রয়েছে।’
সোমবার (২৭ জুন) দুপুরে সিআইডি সদর দফতরে পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান।
পদ্মা সেতুতে দাঁড়ানো বা ছবি তোলা নিষিদ্ধ হলেও প্রথম দিনে (২৬ জুন) শিথিলতার সুযোগে বায়েজিদ তালহা নামের এক যুবক পদ্মা সেতুর রেলিংয়ের দুটি নাট-বল্টু খুলে ফেলেন। সেটার চিত্র মোবাইল ফোনে ধারণ করে নিজেই তার টিকটক আইডিতে শেয়ারও করে। পরে তাকে আটক করে সিআইডি। আটক বায়েজিদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করা হয়েছে। সিআইডি মামলাটির তদন্ত করবে বলেও জানান পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ।
তিনি ওই যুবকের পরিচয় তুলে ধরে বলেন, ‘গ্রেফতার যুবকের নাম বায়েজিদ তালহা। তার বাড়ি পটুয়াখালীতে। বর্তমানে ঢাকার শান্তিনগরে থাকে। তার টিকটক আইডি প্রকাশ করা ভিডিওতে দেখা যায়, সে নাট-বল্টু খুলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে মন্তব্য করছে। আমরা তাকে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় শান্তিনগর এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছি।’
সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘তার অতীত অপরাধ-কর্মকাণ্ডসহ সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সবকিছু তদন্ত করা হবে।’
এই নাট-বল্টু কোনোভাবেই হাত দিয়ে খোলার কথা নয় উল্লেখ করে রেজাউল মাসুদ বলেন, ‘এটি অবশ্যই কোনও ইনস্ট্রুমেন্ট (যন্ত্র) ব্যবহার করে খোলা হয়েছে, তাদের কোনও পরিকল্পনা আছে। তবে আমরা এখনই এ বিষয়ে বলতে পারবো না। তদন্ত করেই সবকিছু জানানো হবে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় স্থাপনা পদ্মা সেতু। তার কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বড় ধরনের কোনও দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো। সেতুতে কোনও ঘটনা ঘটলে তার উচিৎ ছিল সেতু কর্তৃপক্ষ বা ওখানে থাকা পুলিশকে জানানো। কিন্তু সে সেটা করেনি। এটা অনেক বড় অপরাধ।‘
এই ঘটনায় ওই যুবক তিনটি অপরাধ করেছে উল্লেখ করে বলেন, ‘সে মানুষের অনুভূতিতে আঘাত করেছে, রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে এবং অন্তর্ঘাতমূলক কাজ করেছে। এখানে তার একটি গিল্টি মাইন্ড আছে। এটা অপরাধ।’
ঘটনার সময় তার সঙ্গে আরও একজন ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে অনেক তথ্য আসছে, এখন পর্যন্ত আমরা দুজনের সম্পৃক্ততা পেয়েছি। হয়তো আরও সম্পৃক্ততা আসতে পারে। তাই আমরা এখনই নির্দিষ্ট করে বলতে পারি না কতজন জড়িত। ভিডিওটি আপলোড হওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে আমাদের মনিটরিংয়ে চলে আসে। আমরা এসব মনিটরিং করছি।’
সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ভিডিওটি মুহূর্তে টিকটকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে; যা নিয়ে বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালেও রিপোর্ট হয়। ভিডিওতে দেখা যায় পদ্মা সেতু নিয়ে যুবকটি তুচ্ছ তাচ্ছিল্য এবং ব্যাঙ্গাত্মক অঙ্গভঙ্গি এবং হাসাহাসি করছে। ভাইরাল ভিডিওতে দেখা গেছে- পদ্মা সেতুর রেলিংয়ের দুটি নাট-বল্টু খুলতে সে বলতে থাকে, এই হলো পদ্মা সেতু, আমাদের… পদ্মা সেতু। দেখো আমাদের হাজার হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতু। এই নাট খুইলা এহন আমার হাতে। এ সময় পাশে থেকে আরেক ব্যক্তি বলেন, ভাইরাল কইরা ফালায়েন না।’
এক প্রশ্নের জবাবে সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘অনেক তথ্য আছে, তা সবসময় পাবলিকলি বলা যায় না। তদন্তাধীন বিষয় নিয়ে এখনই মন্তব্য করা ঠিক না। অপরাধী এখন কী বলছে, তা বিবেচ্য বিষয় না। তার মোবাইলটি জব্দ করা হয়েছে। একজন অপরাধী অপরাধ করার পরে যা করে, সেই সব কাজ সে করেছে।’
তার কোনও রাজনৈতিক পরিচয় আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক পরিচয় থাকতে পারে। কিন্তু আমরা তার অপরাধটাকেই গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।’