চিকিৎসকদের দেওয়া প্রেসক্রিপশনে কোন কোম্পানির ঔষধ লিখেছে তা দেখতে রীতিমত বিরক্তির কারণ হয়ে ওঠেছে নবীগঞ্জে কর্মরত বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা।
প্রেসক্রিপশনে লেখা ঔষধের নাম ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দেখাতে ছবি তোলাকে কেন্দ্র করে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জরুরিবিভাগে চিকিৎসার জন্য যাওয়া অসুস্থ্য রোগীদের ভোগান্তি চরমে পৌছেছে।
জানা গেছে, বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা নিজেদের কোম্পানির উৎপাদিত ওষুধের নাম ডাক্তার প্রেসক্রিপশনে লিখছে কিনা তার প্রমাণস্বরূপ ছবি তুলে ওই কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ইমেইল কিংবা ম্যাসেনজারের মাধ্যমে জানান দেয়। মূলত তারা এটি করে থাকে কোম্পানির কাছ থেকে বাহবা কুড়ানো বা প্রমোশনের জন্য। আর এতে চরম বিব্রত অবস্থার মধ্যে পড়েন রোগী ও স্বজনরা।
রোগী বা তাদের স্বজনরা প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়ে বের হতে বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা তাদের ঘিরে ধরেন। এরপর রোগীর অনিচ্ছা বা তাড়া থাকার পরও প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়ে ছবি তুলতে থাকেন। এতে অসহায় অবস্থায় মধ্যে পড়েন রোগী এবং স্বজনরা।
রোগীদের ভুক্তভোগী স্বজনরা বলছেন, একদিকে রোগী নিয়ে মহাবিপদে, অন্যদিকে ঔষধের প্রেসক্রিপশন নিয়ে ছবি তোলার জন্য টানাটানি আসলেই দুঃখজনক। যে কোন হাসপাতাল বা ডাক্তারের চেম্বার কিংবা বড় ফার্মেসীর সামনে রোগীদের কাছ থেকে প্রেসক্রিপশন চেয়ে নিয়ে কিছু যুবক তার মোবাইলে সেই প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলে নিচ্ছে, এটা এখন নিত্যনৈমিত্তিক একটা দৃশ্য। এমনকি বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানীর মেডিকেল প্রতিনিধি রোগীদের চিকিৎসাপত্র নিয়ে টানা হেচড়া করে। এতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও ফার্মেসীতে ডাক্তারদের পাইভেট চেম্বারের সামনে প্রতিনিয়তই হয়রানি শিকার হতে হচ্ছে রোগীদের। হয়রানি থেকে রেহাই পেতে কতৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন সেবা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা। কোম্পানির প্রতিনিধিদের এই ধরনের হয়রানিতে রোগীরা অতিষ্ঠ।
রোববার (০৭ মে) সরেজমিন নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জরুরি বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, জরুরি বিভাগের সামনে ওষুধ কোম্পানির ৭/৮ জন প্রতিনিধি অবস্থান করছে। প্রেসক্রিপশন নিয়ে টানাটানির পাশাপাশি এদের অনেকে আবার মোবাইল নম্বর দিয়ে রোগী ও তার স্বজনদের বিভিন্ন ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরামর্শ দেয়। ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের এমন দৌরাত্ম্যে রোগী ও স্বজনরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।
জানা যায়, ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা চিকিৎসককে মূল্যবান উপহার দিয়ে থাকেন। এসব উপহারের কারণে চিকিৎসকরাও ওই কোম্পানির ওষুধের নাম লিখে দিচ্ছেন।
সচেতমন মহলের দাবি, ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের উপটৌকনের লোভে চিকিৎসকরা নিম্নমানের ঔষধও লিখে দিচ্ছেন। আর রোগীরা হাসপাতাল বা চেম্বার থেকে বের হলে ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা তাদের ঘিরে ধরে দেখে উপটৌকন কতোটা ফলপ্রসূ হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিনিয়র চিকিৎসক বলেন, ‘অসহায় রোগী ও স্বজনদের হয়রানিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। ছবি তোলা ও হয়রানি করা কোন মতে ঠিক না। কারণ রোগীরা অসহায়। তাদেরকে কোন অবস্থায় বিরক্ত না করাই ভাল।
নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আব্দুস সামাদ বলেন, ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা প্রতি সপ্তাহে শনিবার ও মঙ্গলবার দুপুর ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত ডাক্তারদের চেম্বার ভিজিট করতে পারবেন, অন্য কোন দিন না। এছাড়া রোগীর কাছ থেকে প্রেসক্রিপশনের ছবি তোলা কোন মতে ঠিক না। তাদেরকে একাধিকবার নিষেধ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ডাকা হয়েছে, কিন্তু তারা আসেনি। তাদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।