নবীগঞ্জে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি, ত্রাণের জন্য হাহাকার

টানা বৃষ্টিপাত এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে নবীগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এমন বাস্তবতায় শনিবার রাত থেকে রোববার পর্যন্ত প্লাবিত হয়েছে নতুন নতুন এলাকা। নতুন করে বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে উপজেলার ১নং বড় ভাকৈর পশ্চিম ইউনিয়নের ৮/১০টি গ্রাম। বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ইউনিয়নের বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন।

জানা গেছে, দু’দিন ধরে জগন্নাথপুর বাজার সংলগ্ন পাড় ভেঙ্গে ও আমড়াখাই এলাকায় বিবিয়ানা নদীর পানি দ্রুত বেগে প্রবেশ করছে। সৈয়দপুর-ইনাতগঞ্জ সড়কের প্রায় ১ কিলোমিটার জুড়ে রাস্তার উপর হাঁটু, কোন জায়গায় কোমর পানি রয়েছে। ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন।

বান্দের বাজার টু কসবা সড়কের উপর দিয়ে প্রচন্ড বেগে পানি ঢুকছে। এছাড়া কসবা গ্রামের বেশীর ভাগ মানুষই পানিবন্দি রয়েছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষকে কলাগাছের ভেলা দিয়ে যাতায়াত করতে দেখা গেছে। তবে কুশিয়ারা নদীর পানি কিছুটা থমকে যাওয়ায় ডাইক এর অবস্থা স্বাভাবিক রয়েছে। শনিবার গভীর রাত পর্যন্ত রাত জেগে ডাইকের পাড়ের মানুষ পাহারা দিয়েছেন। যদিও নদীর তীরবর্তী বেশ কয়েকটি গ্রামসহ উপজেলার প্রায় কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

এদিকে রবিবার (১৯ জুন) সরকারিভাবে গালিমপুর-মাধবপুর এলাকায় বন্যার্তদের মাঝে ১ হাজার কেজি চাল (২০ বস্তা ৫০ কেজি করে) বিতরণ করা হয়েছে। উপজেলার আর কোথায়ও সরকারি বা বেসরকারিভাবে আশ্রয় কেন্দ্রে বন্যার্ত এবং পানিবন্দি পরিবারে সাহায্য দেয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে নবীগঞ্জে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। কুশিয়ারা নদীর পাড় এলাকায় প্রায় ২/৩ ইঞ্চি পানি কমলেও অন্য এলাকায় দ্রুত বাড়ছে পানি। বন্যার সার্বিক পরিস্থিত ভয়াবহ আকার ধারণ করতে যাচ্ছে।

উপজেলার দীঘলবাক ও ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি গ্রামে পানি ঢুকে প্রবল বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। তলিয়ে গেছে গ্রামীণ জনপদের রাস্তাঘাট। ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের ইনাতগঞ্জ বাজারসহ ৩০/৩৫ গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। তাছাড়া ইনাতগঞ্জ-সৈয়দপুর সড়কের মোস্তফাপুর থেকে পাঠানহাটি পর্যন্ত রাস্তা তলিয়ে গেছে। ঝুঁকি নিয়ে করছে যানবাহন চলাচল করছে। বড় ভাকৈর (পশ্চিম) ইউনিয়নে ইতিমধ্যে জগন্নাথপুর, সোনাপুর, ফতেহপুর, চৌকি, আমড়াখাই ও চরগাঁও গ্রামে কমপক্ষে ৫ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি রয়েছেন।

উপজেলায় সরকারিভাবে ১৩টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। করগাঁও ইউনিয়নে কমপক্ষে ৫/৭টি গ্রাম বন্যায় আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন চেয়ারম্যান নির্মলেন্দু দাশ রানা।

তিনি বলেন, ইতিমধ্যে দুর্গাপুর প্রাইমারী স্কুলে ৫টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। শেরপুর অসংখ্য পরিবারকে সরিয়ে আনা হয়েছে। উপজেলার হাইস্কুল ও কলেজগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে গালিমপুর ও মাধবপুর স্কুলে আশ্রয় কেন্দ্রে শতাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। নাদামপুর স্কুল এন্ড কলেজে ৮টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। ইনাতগঞ্জ হাই স্কুল ও প্রাইমারী স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় দু’শতাধিক পরিবার। মোস্তফাপুর মাদ্রাসায় ২৫ পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। মতিউর রহমান হাইস্কুলে ১১টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়া জগন্নাথপুর এসএনপি উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ, চৌকি প্রাইমারী স্কুল ও বিবিয়ানা স্কুলে প্রায় শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

জগন্নাথপুর হাইস্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সুনীল পুরকায়স্থ জানান, ১নং ইউনিয়নে ৮/১০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। রাতেই এর পরিমান বাড়তে পারে বলে তিনি জানান।

ওই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গৌতম দাশ জানান, এখন পর্যন্ত সরকারী কোন সহায়তা দেয়া তো দূরের কথা সরকারের দায়িত্বশীল কোন কর্তা দেখেননি। গালিমপুর-মাধবপুর ওয়ার্ডের মেম্বার আকুল মিয়া বলেন, উপজেলা প্রশাসন রবিবার ওই এলাকায় ২০ বস্তায় ১ হাজার কেজি চাল বরাদ্ধ দিয়েছেন। ১ শত পরিবারের মধ্যে ১০ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে। এর বাইরে কিছুই দেয়া হয়নি। তবে তা দেয়া হয়েছে তা খুবই প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

ইনাতগঞ্জের বাসিন্দা সাংবাদিক আশাহিদ আলী আশা বলেছেন, ইনাতগঞ্জ হাইস্কুল ও প্রাইমারী স্কুলে প্রায় দু শতাধিক বন্যার্ত মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এখানে সরকারি সহায়তা দেয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মহি উদ্দিন তার ফেসবুক আইডিতে রবিবার (১৯ জুন) সকালে জানান, উপজেলার ১২টি আশ্রয় কেন্দ্রে ২০৫ পরিবার ১ হাজার মানুষের জন্য সাড়ে ৫ হাজার কেজি চাল, দেড় লাখ টাকার শিশু খাদ্য ও ৫০ হাজার টাকার গো খাদ্যের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে সরকারিভাবে। শুকনো খাবারের প্যাকেট প্রস্তুতি চলছে হাতে আসা মাত্রই প্রদান করা হবে।

সরকারিভাবে ২০৫টি পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করার কথা বললেও বেসরকারি হিসেবে প্রায় ৫ শতাধিক পরিবার কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন। অপরদিকে বন্যা কবলিত এলাকার সরকারী প্রাইমারী স্কুলগুলোতে পাঠদান স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।