নদীর নিজস্ব ভাষা আছে, আছে আপন কথা। আনন্দে সে হাসে, ছলাৎ ছলাৎ শব্দ করে। বেদনায় সে কাঁদে, দুর্ব্যবহার করে। কখনো হয়ে ওঠে প্রতিশোধপরায়ণ। আবহমানকালের মানুষেরা নদীর সে ভাষা বুঝতে পারত। নদীর প্রতি তাই তাদের আচরণও ছিল ইতিবাচক। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে মানবজাতি চিরসখা সে নদীর কথা ভুলতে বসেছে, নদীর সাথে প্রতিদিন করছে দুর্ব্যবহার। দখল, দূষণ আর ভরাটের মাধ্যমে মানুষ নদী হত্যার নগ্ন খেলায় মেতে উঠেছে। তাই নদী হত্যাকারীদের বিচারের মুখোমুখি করে শাস্তি প্রদানের কোনো বিকল্প নেই।
‘নদীর কথা, নদীর ব্যথা’ শীর্ষক এক মুক্ত আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। আন্তর্জাতিক নদী দিবস-২০২২ উপলক্ষে ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ ও সারি নদী বাঁচাও আন্দোলনের যৌথ আয়োজনে এ সভা বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সিলেট নগরীর ইমজা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বক্তারা বলেন, নদী বাংলাদেশের প্রাণ। নদীবাহিত পলির সঞ্চিতকরণে গড়ে উঠেছে এ জনপদ। জালের মতো ছড়ানো নদীগুলো এ ভূখন্ডের গঠন থেকে প্রতিরক্ষা সর্বক্ষেত্রেই পালন করেছে অগ্রণী ভূমিকা। মহান মুক্তিযুদ্ধে নদীগুলো শত্রুর জন্য অস্ত্র হিসেবে কাজ করেছে। বাঙালির জীবন, সংস্কৃতি ও অস্তিত্বের সাথে নদীগুলো জড়িয়ে আছে ওতপ্রোতভাবে। কিন্তু সে নদীগুলোকে নানামুখী অপরিকল্পিত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্যক্তি বা বেসরকারি সংস্থার পাশাপাশি সরকারি নানা সংস্থার ভূমিকাও অস্বীকারের উপায় নেই। উন্নয়নের নামে স্থানীয় মানুষের মতামতের তোয়াক্কা না করে অনেক অপরিকল্পিত প্রকল্পের নামে নদীবিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ইতোমধ্যে অনেক নদীকে হত্যা করা হয়েছে। কোনো কোনো নদীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। নদী ও তার প্লাবনভূমির প্রাণ, পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্যেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। যে বা যারা এসব নদীবিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত তাদের সবাইকে জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
সভায় পিয়াইন নদীর ব্যাপারে সুনির্দিষ্টভাবে আলোকপাত করতে গিয়ে বক্তারা বলেন, এককালের প্রমত্তা পিয়াইন নদী এখন ধু ধু বালুচরে পরিণত হয়েছে। উত্তর-পূর্ব সিলেটের জীবন ও অস্তিত্বের সাথে জড়িত এ নদী বর্তমানে দখল, দূষণ আর ভরাটের উৎসবে পরিণত হয়েছে। ১৯৫৪ সাল থেকে এ নদী খননেন জন্য স্থানীয় মানুষেরা দাবি জানালেও এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এ নদীর পর্যটন ও খনিজ সম্পদ থেকে সরকার কোটি কোটি রাজস্ব আদায় করলেও নদীকে বাঁচানোর কোনো উদ্যোগ নেই।
বক্তারা অবিলম্বে এ নদী খননের প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।
সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার্স আব্দুল করিম কিমের সভাপতিত্বে ও সারি নদী বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি আব্দুল হাই আল-হাদীর সঞ্চালনায় মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য দেন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম সোবহান চৌধুরী দ্বীপন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আ.ফ.ম জাকারিয়া, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক মোহাম্মদ তাজিম উদ্দিন, সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম, দৈনিক জৈন্তা বার্তা’র সম্পাদক ফারুক আহমদ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. বেলাল আহমদ, সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বেলাল, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সিলেট ব্যুরো প্রধান শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট ইতিহাস ও ঐতিহ্য ট্রাস্ট এর সভাপতি ডা. মোস্তফা শাহ জামান চৌধুরী বাহার, জৈন্তিয়া কেন্দ্রীয় পরিষদের সহ-সভাপদি অ্যাডভোকেট মো. হাসান আহমদ, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলাম, সারি নদী বাঁচাও আন্দোলনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মনজুর আহমদ, জৈন্তিয়া কেন্দ্রীয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. জামাল উদ্দিন ও পুলিশ লাইন উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শাহ আলম।
অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, জৈন্তাপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ফয়েজ আহমদ, জৈন্তিয়া কেন্দ্রীয় ছাত্র পরিষদের সভাপতি মাহফুজুল কিবরিয়া মাহফুজ, গোয়াইনঘাট ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. ফখরুল ইসলাম, আলোকিত গোয়াইনঘাটের সম্পাদক মো. আমিন উদ্দীন, এ.কে নিউজ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসাইন, পুষ্পকলি’র সম্পাদক শাহিদ হাতিমী প্রমুখ।
।