নতুন কোনও দায়িত্বে আসছেন বেনজীর আহমেদ?

চলতি মাসেই শেষ হচ্ছে বর্তমান আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদের চাকরির মেয়াদ। এরই মধ্যে তার অবসরের প্রজ্ঞাপনও জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পুলিশ প্রশাসন ও সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে গুঞ্জন রয়েছে, ৩০ সেপ্টেম্বর পুলিশ প্রধান হিসেবে চাকরির মেয়াদ শেষ হলেও সরকারি যেকোনও নতুন দায়িত্বে দেখা যেতে পারে বেনজীর আহমেদকে। আবার কারও কারও ধারণা, তিনি রাজনীতিতেও যুক্ত হতে পারেন। তবে অবসরে গিয়ে তিনি আসলে কী করবেন, তা নিশ্চিত হতে অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছু দিন।

২০২০ সালের এপ্রিল মাসে আইজিপি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন বেনজীর আহমেদ। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নেন ওই বছরের মে মাসে। এর আগে তিনি বিশেষায়িত সংস্থা র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) মহাপরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন। তখন বাহিনীটির মহাপরিচালক হিসেবে তার স্থলাভিষিক্ত হন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। একইভাবে নতুন আইজিপি হিসেবে দায়িত্বে আসছেন তিনি।

বেনজীর আহমেদ ১৯৬৩ সালে ১ অক্টোবর গোপালগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ সম্পন্ন করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে পিএইচডি ডিগ্রিও আছে তার। ১৯৮৮ সালে সপ্তম (বিসিএস) পুলিশ ক্যাডারে সহকারী পুলিশ সুপার পদে চাকরিতে যোগদান করেন তিনি।

এরপর বিভিন্ন সময়ে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার, ডিএমপির উত্তর বিভাগের ডিসি, পুলিশ অ্যাকাডেমির প্রধান প্রশিক্ষক, পুলিশ সদর দফতরের এআইজি, পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার টাঙ্গাইলের কমান্ড্যান্ট, পুলিশের ডিআইজি (প্রশাসন ও অপারেশনস) এবং ডিএমপির পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

বেনজীর আহমেদ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বসনিয়া ও কসভোতেও কর্মরত ছিলেন। এছাড়া তিনি জাতিসংঘ সদর দফতর, নিউ ইয়র্কে চিফ মিশন ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড সাপোর্ট সার্ভিসেস হিসেবে এক বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সন্ত্রাস দমন বিষয়ে আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণও নিয়েছেন। সবশেষ পুলিশের শীর্ষ পদে থেকে প্রায় আড়াই বছর বাহিনীটিকে নেতৃত্ব দেওয়ার পর চলতি মাসে অবসরে যাচ্ছেন তিনি।

সবশেষ অবসরে যাওয়া চার জন আইজিপির মধ্যে দুই জন এখনও রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করছেন। আরেকজন যুক্ত হয়েছেন রাজনীতিতে, নির্বাচিত হয়েছেন সংসদ সদস্যও। বেনজীর আহমেদও অবসরের পর কোনও একটি দেশের রাষ্ট্রদূত হতে পারেন বলে ধারণা সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের। আবার কেউ কেউ বলছেন, সরকারি কোনও প্রতিষ্ঠানেই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হতে পারে তাকে। যদিও এ বিষয়ে নাম প্রকাশ করে মন্তব্য করতে রাজি হননি কেউই।

অবশ্য সংশ্লিষ্ট কারও কারও মত, করোনা মহামারির সময় দায়িত্ব পাওয়ার পর বেনজীর আহমেদ পুলিশ সদস্যদের নিরাপত্তার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে প্রতিষ্ঠানকে সামনে নিয়ে এসেছেন। করোনায় মারা যাওয়াদের যখন পরিবারের সদস্যরা ফেলে রেখে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে, তেমন পরিস্থিতিতে এগিয়ে এসেছে পুলিশের সদস্যরাই। সে কারণে কারও কারও ধারণা, রাজনীতির প্রতি বেনজীর আহমেদের আগ্রহ উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এ বিষয়ে চেষ্টা করেও বেনজীর আহমেদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সাবেক আইজিপিদের নানামাত্রিক ব্যস্ততা

ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী

২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। চাকরি শেষে অবসর নিলেও পরবর্তী সময়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয় তাকে। বর্তমানে সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

এ কে এম শহীদুল হক

২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত আইজিপি ছিলেন এ কে এম শহীদুল হক। চাকরি জীবন শেষে বর্তমানে অবসর জীবন পার করছেন সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা। অবসরে লেখালেখি, সামাজিক কাজ ও সাবেক পুলিশ কর্মকর্তাদের সংগঠন নিয়ে চলছে তার কর্মকাণ্ড।

এ কে এম শহীদুল হক বলেন, ‘সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর আমি কোনও সরকারি কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যুক্ত হইনি। আমি আমার প্রতিষ্ঠিত স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও ফাউন্ডেশন এগুলো নিয়ে সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত রয়েছি। সামাজিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শিক্ষার বিস্তারে কাজ করে যাচ্ছি।’ তার প্রতিষ্ঠিত শরীয়তপুরের ‘মজিদ জরিনা হাইস্কুল’ ২০২২ সালে ঢাকা বিভাগে সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে বলেও জানান পুলিশের এই সাবেক কর্মকর্তা।

তিনি আরও বলেন, ‘আমি আমার কর্মজীবনের ওপর পুলিশ জীবনের স্মৃতি নামে একটি বই লিখেছি। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন টেলিভিশন টকশোতেও অংশ নিচ্ছি। এভাবেই কেটে যাচ্ছে সময়।’

হাসান মাহমুদ খন্দকার

২০১০ সালের ৩১ আগস্ট থেকে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত হাসান মাহমুদ খন্দকার আইজিপি ছিলেন। অবসরের পর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান স্পেনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে।

নূর মোহাম্মদ

২০০৭ সালের ২৯ জানুয়ারি থেকে ২০১০ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত আইজিপি ছিলেন নূর মোহাম্মদ। আইজিপি পদে দায়িত্ব পালন শেষে চাকরির মেয়াদ থাকায় পরে তিনি নিয়োগ পান রাষ্ট্রদূত হিসেবে। সেখানে দায়িত্ব পালন শেষে যোগ দেন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। বর্তমানে কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনের সংসদ সদস্য সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ। ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।

নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘পুলিশে চাকরির সময় জনগণের কল্যাণে এবং নিরাপত্তায় কাজ করে গেছি। চাকরি জীবন শেষে জনগণের কল্যাণে এবং জনগণের জন্য কিছু করতে পারার লক্ষ্যেই রাজনীতিতে যোগ দেই। বর্তমানে জনগণের কল্যাণে যতটুক সম্ভব কাজ করে যাচ্ছি।’

তবে শুরুতে রাজনীতি নিয়ে তেমন ধারণা ছিল না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জনগণের কল্যাণের বিষয়গুলো মাথায় রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা দূর করে জনকল্যাণের জন্যই নিজেকে উৎসর্গ রেখেছি।’