শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে ফের হকারদের দখলে সিলেট নগরের ফুটপাত। নগর ভবনের পেছনে লালদিঘীরপাড়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে হকারদের পুনর্বাসন করলেও ৫ আগস্টের পর থেকে বদলে গেছে দৃশ্যপট।
সাবেক মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী গোপনে দেশ ছাড়া এবং সিটি করপোরেশনের মেয়র-কাউন্সিলরদের অপসারণের পর থেকে অনেকটা ‘অভিভাবকহীন’ অবস্থায় রয়েছে সিলেট নগর। এই পরিস্থিতিতে ফের নগরের বিভিন্ন সড়ক ও ফুটপাত দখল করতে শুরু করেন ভাসমান ব্যবসায়ীরা।
লালদিঘীরপাড় হকার পুনর্বাসন কেন্দ্র ছেড়ে সড়কের দু‘পাশ দখলে নিয়েছে শত শত হকার। নগরের প্রধান প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লার সড়কেও এখন হকারদের দৌরাত্ম্য। ফুটপাত দখল করে বসায় পথচারী হাঁটার পথেও প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে। বেড়েছে যানজট। দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী।
এ অবস্থায় আগামী রোববার থেকে নগরের ফুটপাত দখলমুক্ত ও হকারে উচ্ছেদে নামছে প্রশাসন। বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত আয়োজিত এক সভায় হকার উচ্ছেদ অভিযানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে সভায় সেনাবাহিনী, সিলেট সিটি করপোরেশন, সিলেট হকার ঐক্য পরিষদ, পরিবহন মালিক সমিতি, শ্রমিক সমিতির প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, নগরের রাস্তা-ফুটপাত হকারদের দখলে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী। সরজমিনে দেখা গেছে, নগরীর জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, চৌহাট্টা, আম্বরখানাসহ প্রধান প্রধান সড়কের দু’পাশ দখল করে রেখেছেন হকাররা। কাপড় ও জুতার দোকানীরা পসরা সাজিয়ে রেখেছেন সড়কের অর্ধেক অংশজুড়ে। এছাড়াও সবজি বিক্রেতা, মাছ বিক্রেতারাও রয়েছেন সড়কের উপরে। প্রতিদিন বিকেল হতেই হকারদের উৎপাত বাড়তে থাকে। সন্ধ্যা নামার আগেই সড়কের অর্ধেক হকারদের দখলে চলে যায়।
কলেজ শিক্ষার্থী আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘সিলেট নগরের একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হচ্ছে রাস্তার পাশে ভাসমান ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করতে দেওয়া। লালদীঘি হকার্স মার্কেটে তাদের জন্য নির্ধারিত স্থান থাকা সত্ত্বেও সিলেট নগরের প্রত্যেকটি রাস্তার পাশে তারা বসেন। পুলিশ প্রশাসন কঠোর ভূমিকা পালন করলে এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ মিলবে।’
আম্বরখানা এলাকার ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান হাবিব সিলেট ভয়েসকে বলেন, ‘ফুটপাতে হকার বসার কারণে এই দেখুন আমাদের দোকানের সামনে কী অবস্থা! আমাদের ব্যবসাপাতি একদম লাটে উঠেছে। পুলিশ প্রশাসনকে কঠোরভাবে হকারদের নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আমি জোর দাবি জানাই।’
কলেজ শিক্ষার্থী জান্নাতুল ঊর্মি বলেন, প্রায় প্রতিদিনই আমি কলেজে যাবার জন্য উপশহর থেকে কোর্ট পয়েন্ট পর্যন্ত গাড়িতে আসি। এরপর হেঁটে আসতে হয় চৌহাট্টা। ১০ মিনিটের রাস্তা আসতে লাগে এক ঘন্টা। নগরবাসীদের হাঁটা-চলার জন্য ফুটপাত থাকলেও সেটা দখল করে রেখেছে ভাসমান ব্যবসায়ীরা। ফুটপাতে কেন হকাররা বসবে? হাঁটার সময় আমাদের এমনও পরিস্থিতি আসে যখন চলন্ত গাড়ির সামনে দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে ফুটপাত থেকে হকারদের সরানোর দাবি জানাচ্ছি।’
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সিলেট ভয়েসকে বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে হকাররা তাদের নির্ধারিত জায়গা ছেড়ে রাস্তায় চলে এসেছে। তাদেরকে তাদের জায়গায় চলে যেতে হবে। আজ বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। আগামী শনিবারে আরও একটি বৈঠক হয়েছে। আগামী রোববার থেকে একজন হকারও রাস্তায় বসতে পারবে না। তাদেরকে আগের জায়গায় ফেরাতে পুলিশ ছাড়াও সেনাবহিনী মাঠে থাকবে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. আশিক নুর বলেন, ‘আজ পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে একটি বৈঠকে আমাদের একজন প্রতিনিধি ছিলেন। কী সিদ্ধান্ত হয়েছে তা আমি এখনও জানি না। তবে হকারদের আগের জায়গায় ফেরাতে সিসিকের প্রশাসক কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। সে আলোকে আমরা উদ্যোগ নিচ্ছি।’
উল্লেখ্য, সিলেটে হকার পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু হয় চলতি বছরের ১০ মার্চ। নগরের লালদীঘিরপাড় এলাকায় ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের জন্য সম্প্রতি নির্মিত অস্থায়ী মার্কেটে হকারদের ব্যবসার জায়গা করে দেওয়া হয়। মূলত সিসিকের মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পরপরই সাবেক মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী হকারদের স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেন। প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে নগর ভবনের পাশের লালদীঘিরপাড় এলাকায় অস্থায়ী বিপণিবিতান (মার্কেট) নির্মাণ করা হয়। সেখানে মাটি ভরাট, ইটের সলিং, বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবস্থাসহ সব কাজ শেষে ১০ মার্চ সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে স্থানটি হকারদের ব্যবসার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। সেখানে প্রায় আড়াই হাজার হকার একসঙ্গে বসে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন বলেও জানিয়েছিল সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ।