নকল ওষুধে সয়লাব চুনারুঘাটের ফার্মেসিগুলো

হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার পৌর শহরজুড়ে থাকা ফার্মেসিগুলো নকল ওষুধে সয়লাব। এতে করে সেবার পরিবর্তে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে রোগীরা।

গ্যাস্ট্রিকের চিকিৎসায় জনপ্রিয় ওষুধের একটি হচ্ছে হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালের তৈরি সার্জেল ক্যাপসুলটি। ঠিক একইভাবে জনপ্রিয় স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালের তৈরি সেকলো। শারীরিক নানা জটিলতায় জনপ্রিয় ফিনিক্স, লোসেকটিল, প্যানটনিক্স বা ইটোরিক্স। কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকায় সামান্য শারীরিক সমস্যায়ও মানুষ মুড়ি-মুড়কির মতো এসব ওষুধ সেবন করছেন। কিন্তু এসবের বেশিরভাগেরই নকল তৈরি করে বাজারে বিক্রি করছে একটি গোষ্ঠী।

বাজারে থাকা এসব নকল ওষুধের বেশিরভাগই আটা-ময়দার মিশ্রণে তৈরি অদ্ভুত এক দলা, যার কোনো ঔষধি গুণ নেই। বরং এগুলো সেবনে শারীরিক নানা জটিলতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এর ফলে চিকিৎসক ও রোগীর মধ্যে পারস্পরিক আস্থা কমে যাচ্ছে। শুধু নামি-দামি ওষুধের কোম্পানিই নয়, বরং নাম সর্বস্ব ইউনানি কোম্পানিগুলোও এ নকল ওষুধের কারবারে জড়িয়ে পড়ছে।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক নারী জানান, উত্তর বাজার মেডিকেল হল থেকে তিনি একরাম ল্যাবরেটরিজ ঢাকা নামক প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত এমিটন প্লাস সিরাপ ক্রয় করেন ৩০০ টাকা দিয়ে। কিন্তু কেনার পর দোকান থেকে বের হয়ে যেতেই এক ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি তাকে জানান, এই সিরাপ তিনি ২০০ টাকায় দেবেন।

এতে ঔষধের গুণগত মান নিয়ে সন্দেহ হলে ওই ওষুধের ব্যাপারে তথ্য নেওয়ার চেষ্টা করেন। এই প্রতিবেদকের সাহায্যে পাওয়া তথ্যে তিনি জানতে পারেন, উক্ত ওষুধের ক্রয়মূল্য মাত্র ৪৫/৫০ টাকা। কিন্তু দোকানদার উন্নতমানের ওষুধ বলে তা বিক্রি করেছেন ৩০০ টাকায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উত্তর বাজার, বাল্লা রোড, কলেজ রোডসহ শহর থেকে গ্রামের অনেক ফার্মেসিতে ৫০/৬০ টাকা মূল্যের এন্টিপ্লাস, সিনকারা, দিনার, জিগারা, দিনার পি, পুদিনা পি, পুদিনা এস, পুদিনা ডি ও বায়োডিন সিরাপগুলো বাজারে উর্ধ্বমূল্যে অর্থাৎ ৩০০/৪০০ টাকায় বিক্রি করে রোগীদের সাথে প্রতারণা করে আসছেন।

এছাড়া শুধু নকল বা ভেজাল ওষুধই নয়, চুনারুঘাটে দেদারছে বিক্রি হচ্ছে বিক্রয় নিষিদ্ধ ওষুধও। এলাকায় ভোক্তা অধিকারের অভিযান চালানো হলেও অন্তরালে নিয়মিত ঠকছেন ভোক্তারা। পেশাদার-অপেশাদার নামমাত্র কোর্স করে ডাক্তার ডিগ্রি লাগিয়ে ওষুধ কালোবাজারি চক্রের সাথে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন হাতুরে ফার্মাসিস্ট ও ফার্মেসি ব্যবসায়ীসহ কর্মচারীরা।

চুনারুঘাট পৌর শহরের উত্তর বাজার, হাসপাতাল গেট, মধ্য বাজার, বাল্লা রোড, কলেজ রোড, উপজেলা রোড, সতং রোডে নামে-বেনামে থাকা ফার্মসিগুলো নকল ওষুধ বিপণনের সাথে সম্পৃক্ত বলে জানা গেছে। বিভিন্ন কোম্পানির ওষুধ কালোবাজারি ও চোরাচালানের মাধ্যমে সংগ্রহ করে চকবাজারসহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন ওষুধের দোকানে সরবরাহ করে আসছে অসংখ্য ফার্মেসির পাইকারি বিক্রেতারা। এ সকল নকল ওষুধের গায়ে দেশি-বিদেশি কোম্পানির মোড়কে বিভিন্ন নকল ওষুধ বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানা যায়।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিদ্ধার্থ ভৌমিকের সাথে কথা হলে তিনি জানান, অবশ্যই তিনি এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবেন। তবে এজন্য ড্রাগ কর্মকর্তার অনুমতি ও উপস্থিতি আবশ্যক। তার সঙ্গে যোগাযোগ করে তিনি অভিযান পরিচালনা করবেন।