বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের আগের দিন আজ শুক্রবার সকাল থেকে বরিশালে শুরু হয়েছে বাস ও থ্রি হুইলার ধর্মঘট। মালিক সমিতির পক্ষ থেকে কোনোরকম ঘোষণা না দেয়া হলেও বন্ধ রয়েছে অভ্যন্তরীণ এবং দূর পাল্লার রুটের লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচলও। এতে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে লঞ্চঘাটে গিয়ে বিপাকে পড়ে মানুষ।
বিভাগীয় পর্যায়ে ধারাবাহিকভাবে সমাবেশ করছে বিএনপি। গত ২৯ অক্টোবর রংপুরে সমাবেশের আগেই বরিশালে পরিবহন ধর্মঘটের ঘোষণা আসে। তখনই বোঝা গিয়েছিল, ময়মনসিংহ, খুলনা ও রংপুরের চেয়ে বরিশালের আঁচটা একটু বেশি হতে যাচ্ছে। বরিশালে সেই সমাবেশ আগামীকাল শনিবার। এর তিন দিন আগেই গতকাল বৃহস্পতিবার দেশ থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন এক জনপদে পরিণত হয়েছে বরিশাল।
আজ শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে বাস, থ্রি-হুইলারের ধর্মঘট শুরু হয়েছে। সব মিলিয়ে দু-তিন দিনের দুর্ভোগে পড়ল সাধারণ মানুষ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বরিশাল বান্দ রোডের নৌবন্দর (লঞ্চঘাট) ঘুরে দেখা গেল অভ্যন্তরীণ রুটের লঞ্চগুলো সব ঘাটে ভেড়ানো। অনেক যাত্রী পন্টুনে দাঁড়িয়ে। অপেক্ষা করছিলেন ভোলাসহ বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার জন্য।
দ্বীপজেলা ভোলা রুটের এমভি সুপার সনিক-৩-এর মাস্টার আলী আকবর জানান, লঞ্চের মালিক বন্ধ রাখতে বলেছেন।
বরিশালের অভ্যন্তরীণ লঞ্চ মালিক সমিতির সদস্য কামরুল ইসলাম পান্না বলেন, ভোলা ঘাটের ইজারাদাররা লঞ্চ বন্ধ করে দিয়েছেন, যে কারণে অভ্যন্তরীণ ৩২টি লঞ্চের অধিকাংশই চলছে না।
স্পিডবোট মালিক সমিতির নেতা মো. কবির সিকদার বলেন, কেন ভোলা থেকে বোট আসছে না, তা তাঁরা জানেন না।
অভ্যন্তরীণ লঞ্চ মালিক সমিতির আহ্বায়ক মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম বলেন, ‘তেল কেনার পয়সা নাই। যাত্রী ওঠে না। লঞ্চের অবস্থা এমনিতেই খারাপ। কীভাবে লঞ্চ চালাব বলেন।’ আনুষ্ঠানিকভাবে লঞ্চ চলাচল বন্ধের কোনো ঘোষণা তাঁরা দেননি বলেও জানান তিনি।
তবে লঞ্চসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, গতকাল ঢাকা-বরিশাল রুটে রাতে দুটি করে লঞ্চ যাতায়াত করেছে। কিন্তু আজ ও কাল পুরো বন্ধ থাকবে। এটি ওপরের নির্দেশে মালিক সমিতির অলিখিত ধর্মঘট।
পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে কুয়াকাটা পর্যটনস্থল পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় ১৫০টি হোটেল-মোটেল রয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র ও শনিবারে ৮০ শতাংশ অগ্রিম বুকিং হয়ে যায়। আসেন অন্তত ১৫ হাজার পর্যটক।
কিন্তু বিএনপির গণসমাবেশের এক দিন আগেই ঢাকা-কুয়াকাটা রুটে বাস চলাচল বন্ধ থাকার ঘোষণায় পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত। হোটেল-মোটেলে ৮০ শতাংশ অগ্রিম বুকিং বাতিল হয়ে গেছে। এ ছাড়া যাঁরা কুয়াকাটায় ছিলেন, তাঁরাও ভ্রমণ সংক্ষিপ্ত করে চলে গেছেন।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কুয়াকাটায় ৮০ শতাংশ রুম বুকিং হয়ে থাকে। কিন্তু দুই দিন বাস ধর্মঘট থাকার কারণে এরই মধ্যে ৮০ শতাংশ রুমের বুকিং বাতিল হয়েছে।
ধর্মঘট আসলে বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে উল্লেখ করে মোতালেব শরীফ বলেন, এমন পরিস্থিতি পর্যটনকেন্দ্রগুলোর জন্য অশনিসংকেত। পর্যটনসংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারী ও কর্মচারীরা এর ভুক্তভোগী।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে যেখানে ১০ কোটি আয় হওয়ার কথা, সেখানে ব্যবসায়ীদের লোকসান হবে।
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কে এম বাচ্চু বলেন, সপ্তাহের মাত্র দুই দিন কুয়াকাটায় পর্যটক আসেন। এতে ছুটির দিনের দিকে তাঁকিয়ে থাকেন সবাই। আর ছুটির দিনেই ধর্মঘট দিয়ে মাঠে মারল সবাইকে।
অন্যদিকে বিএনপির গণসমাবেশস্থলে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই আসতে শুরু করেছেন নেতা-কর্মীরা। রাতে সামিয়ানা টানিয়ে এবং চাদর বিছিয়ে সেখানে অবস্থান করেছে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী। রান্না, খাওয়া এবং ঘুমও চলছে মাঠেই। বিএনপি নেতারা বলছেন, হাজার বাধা থাকলেও শনিবারের গণসমাবেশ হবে সর্বকালের সর্ব বৃহৎ জনসভা। কোনো বাধাই নেতা-কর্মীদের সমাবেশে আসতে আটকে রাখতে পারবে না।
দ্রব্যমূল্য, লোডশেডিং, দুর্নীতি, লুটপাট, ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তিসহ নয়টি দাবিতে এই সমাবেশের ডাক দিয়েছে বিএনপি। এর আগে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনায় বিভাগীয় গণসমাবেশ করেছে তারা।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর রাতে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় সব বিভাগে গণসমাবেশের সিদ্ধান্ত হয়। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
গত ৮ অক্টোবর চট্টগ্রামে প্রথম কর্মসূচি পালন করে। এরপর ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহে। ২২ অক্টোবর খুলনায়। সর্বশেষ ২৯ অক্টোবর রংপুরে গণসমাবেশ করে বিএনপি।
এরপর আগামীকাল শনিবার বরিশালে, ১২ নভেম্বর ফরিদপুর, ১৯ নভেম্বর সিলেট, ২৬ নভেম্বর কুমিল্লা, ৩ ডিসেম্বর রাজশাহী এবং ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণসমাবেশের মধ্য দিয়ে বিএনপির তৃতীয় ধাপের কর্মসূচি শেষ হবে।