আজ বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে বিশ্ব ধরিত্রী দিবস। যে ধরিত্রীতে আমাদের বাস, সে ধরিত্রী সম্পর্কে কতটা জানি আমরা? আসুন চটজলদি জেনে নেই ১০টি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
পৃথিবীর ৯৭ ভাগ পানিই লবণাক্ত
পৃথিবীর তিনভাগ জল একভাগ স্থল, এ তথ্য আমরা অনেকেই জানি। কিন্তু বিশ্বে যত পানি আছে তার ৯৭ ভাগই সুপেয় নয় বরং তা সাগর-মহাসাগরের লবণাক্ত পানি।
আবার পৃথিবীর যত পানি আছে তার সব তরল পর্যায়ে নেই, বরং কঠিন, তরল ও বায়বীয় এই তিন মিশ্র আকারে আছে পানি।
আর ভূ-উপরিভাগের পানি ছড়িয়ে আছে হিমবাহ, জলাভূমি, লেক, নদী, সাগর কিংবা মহাসাগরের আকারে।
পৃথিবী গোলাকার নয়, কমলালেবুর মতো
গ্লোবে পৃথিবী গোলাকার দেখালেও পৃথিবী কিন্তু গোলাকার নয়, বরং কমলালেবর মতো অর্থাছ দুই মেরুর কাছে পৃথিবী কিছুটা চাপা। এই আকৃতিকে বলা হয় উপ-বর্তুলাকার।
আর সব গ্রহের মতোই মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এবং নিজের অক্ষের উপর ঘূর্ণনের কারণে সৃষ্ট কেন্দ্রাতিগ শক্তির প্রভাবে মেরু অঞ্চল কিছুটা চ্যাপ্টা, আর নিরক্ষীয় অঞ্চল কিছুটা চওড়া।
এ কারণেই বিষুব রেখা বরাবর পৃথিবীর ব্যাস এক মেরু হতে অন্য মেরু বরাবর ব্যাসের চেয়ে ৪৩ কিলোমিটার বেশি।
মহাবিশ্ব ঠিক কতটা উপর থেকে শুরু
পৃথিবী থেকে মহাশূন্যের দিকে মাত্র ১০০ কিলোমিটার উপরে উঠলেই কিন্তু আপনি মহাকাশে। অর্থাৎ মহাকাশের সীমানার শুরু পৃথিবী থেকে উপরের দিকে ১০০ কিলোমিটার মাত্র।
বায়ুমণ্ডল ও মহাকাশের এই সীমানা কারম্যান লাইন হিসেবে পরিচিত যা সমুদ্রসীমার একশ কিলোমিটার ওপরে।
আর আমাদের বায়ুমণ্ডলে যত ধরনের পদার্থ আছে, তার ৭৫ শতাংশই সমুদ্র সমতল হতে প্রথম ১১ কিলোমিটারের মধ্যে।
পৃথিবীর উপরে মাটি, কেন্দ্রে লোহা
সৌরজগতের পঞ্চম গ্রহ পৃথিবীর উপরিভাগ যতই জলে মাটিতে নমনীয় হোক না কেনো, পৃথিবীর কেন্দ্র ভয়াবহ গরম ও শক্ত।
পৃথিবীর কেন্দ্রভাগ মূলত লোহা দিয়ে গঠিত আর পৃথিবীর সবচেয়ে অভ্যন্তরভাগ একটি নিরেট বলের মতো বলে মনে করা হয় যার ব্যাসার্ধ প্রায় বারোশো কিলোমিটার।
এটি মূলত লোহা দিয়ে গঠিত, যা পৃথিবীর মোট ওজনের প্রায় ৮৫ শতাংশ। আর আছে নিকেল, যা এই নিরেট বলের প্রায় দশ শতাংশ।
প্রাণের বিকাশ কেবল পৃথিবীতেই
মহাবিশ্বের পঞ্চম গ্রহ পৃথিবী আর নভোমণ্ডলীয় গ্রহের মধ্যে কেবল পৃথিবীতেই রয়েছে প্রাণের অস্তিত্ব।
২০১১ সালে বিজ্ঞানীরা ধারণা দিয়েছিলেন যে প্রাকৃতিক বিশ্বে প্রায় ৮৭ লাখ প্রজাতি আছে, অথচ এখন পর্যন্ত তালিকাভূক্ত হয়েছে মাত্র ১২ লাখ।
পাঁচ বিলিয়ন বছর আগে গঠিত এই গ্রহের আবহাওয়া, ভূতত্ত্ব ইত্যাদি জীবনের বিকাশের অনুকুল হওয়ায় কেবলমাত্র এই গ্রহেই রয়েছে প্রাণের অস্তিত্ব।
মাধ্যাকর্ষণ সর্বত্র সমান নয়
যেহেত পৃথিবী নিখুঁত গোলাকার নয়, ভরও সর্বত্র সমানভাবে বিস্তৃ নয়। আর এর ফলে পৃথিবীতে মাধ্যাকর্ষণ শক্তিও একেক জায়গায় একেক রকম।
যেমন, আমরা যখন বিষুবরেখা হতে মেরু অঞ্চলের দিকে অগ্রসর হই, মাধ্যাকর্ষণ শক্তির তীব্রতা বাড়তে থাকে।
পৃথিবীর চরম বৈচিত্র্যের শেষ নেই
এই পৃথিবী চরম বৈপরীত্যে পূর্ণ। ভৌগলিক এবং জলবায়ুর বৈচিত্রের কারণে প্রতিটি অঞ্চলেরই অদ্ভূত কিছু বৈশিষ্ট্য আছে।
পৃথিবীর উষ্ণতম স্থানের দাবিদার অনেক অঞ্চল আছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ডেথ ভ্যালীতেই এ পর্যন্ত বিশ্বের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। ১৯১৩ সালের ১০ জুলাই ৫৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল থার্মোমিটারে।
এর একদম বিপরীতে আছে অ্যান্টার্কটিকা। ১৯৮৩ সালের ৩১শে জুলাই সেখানে ভস্তক স্টেশনের যন্ত্রে তাপমাত্রা নেমে এসেছিল মাইনাস ৮৯ দশমিক ২ ডিগ্রিতে।
ঢাল আছে পৃথিবীর
পৃথিবীর শক্তিশালী ম্যাগনেটিক ফিল্ড পৃথিবীর সরক্ষা ঢাল হিসেবে কাজ করবে।
এই ম্যাগনেটিক ফিল্ড বিস্তৃত পৃথিবীর অভ্যন্তর থেকে শুরু করে বহিসীমা পর্যন্ত, যেখানে এটি সৌর বাতাসের সংস্পর্শে আসে।
পাশাপাশি এই ম্যাগনেটিক ফিল্ড অনেক প্রাণীকে পথ খুঁজে পেতে সহায়তা করে। আমাদেরকেও কম্পাসের মাধ্যমে দিকনির্ণয়ে সাহায্য করে এটি।
পৃথিবীতে জীবন্ত প্রাণের বৃহত্তম কাঠামো
অস্ট্রেলিয়া উপকূলের দ্য গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ হলো পৃথিবীতে জীবন্ত প্রাণের একক বৃহত্তম কাঠামো। এটি এত বড় যে, মহাকাশ থেকেও এটি দেখা যায়।
প্রায় দু হাজার কিলোমিটার বিস্তৃত এই রিফে অসংখ্য সামুদ্রিক প্রজাতি বাস করে। ১৯৮১ সালে ইউনেস্কো এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে।
সৌরজগতে কেবল পৃথিবীরই আছে টেকটনিক প্লেট
সৌরজগতে একমাত্র পৃথিবীতেই সক্রিয় টেকটনিক প্লেট আছে আর এই এই প্লেটগুলোর নড়াচড়ার কারণে পৃথিবীর ভুপৃষ্ঠ ক্রমাগত পরিবর্তিত হচ্ছে। পৃথিবীতে পাহাড়-পর্বত গঠনের পেছনে এই প্লেটগুলোর ভূমিকা আছে।
এগুলোর কারণেই ভূমিকম্প হয়, আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাত হয়। আবার এই প্লেটগুলো পৃথিবীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কার্বন ডাই অক্সাইডের মতো গ্রিনহাউজ গ্যাসের রিসাইক্লিংয়ে সহায়তা করে।