দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে মিলে তৃতীয় স্বামীকে হত্যা

২০২০ সালের ৫ জুলাই বুড়িগঙ্গা নদীর পোস্তগোলা ব্রিজের নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল এক যুবকের মরদেহ। ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে জানা গিয়েছিল মরদেহটি যশোরের চৌগাছা উপজেলার আসলাম হোসেনের।

সেই হত্যাকাণ্ডের ৩১ মাস পর জানা গেল, আসলামের হত্যাকারী তার স্ত্রী উম্মে হাবিবা কণা। ঢাকার কেরানীগঞ্জের এ নারীর তৃতীয় স্বামী ছিলেন আসলাম। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে কণা ছিলেন আত্মগোপনে। তবে দীর্ঘদিন নিজেকে লুকিয়ে রেখেও শেষ রক্ষা হয়নি তার।

র‌্যাব-৬ যশোর ক্যাম্পের সদস্যরা বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) অভয়নগর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছেন। গ্রেপ্তারের পর কণা হত্যার দায় স্বীকার করে জানিয়েছেন, স্বামীর অর্থ-সম্পদ হাতিয়ে নিতেই তিনি একাধিক বিয়ে করতেন।

র‌্যাব ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, যশোরের চৌগাছা উপজেলার কারিকরপাড়া গ্রামের নান্নু মিয়ার ছেলে আসলাম কখনো মাদকের, আবার কখনো মাছের ব্যবসা করতেন। তিনি কেরানীগঞ্জের মেয়ে উম্মে হাবিবা কণাকে বিয়ে করে সেখানেই বসবাস করছিলেন। স্ত্রী কণারও ছিল একাধিক বিয়ে। টাকাওয়ালা যুবকদের টার্গেট করে বিয়ে করতেন কণা। আসলাম ছিলেন তার তৃতীয় স্বামী। আসলামের আগে কণা কুমিল্লার ডালিম হোসেন নামে একজনকে বিয়ে করেছিলেন। আসলামের সংসারে থাকলেও ডালিমের সঙ্গে তার মেলামেশা বহাল ছিল।

র‌্যাব-৬ যশোর ক্যাম্পের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম নাজিউর রহমান জানান, ২০২০ সালে ৫ জুলাই বিকেল পৌনে ৫টার দিকে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার হাসনাবাদ নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মাহবুবুর রহমান বুড়িগঙ্গা নদী থেকে বস্তা ভর্তি সেই মরদেহ উদ্ধার করেন। এ ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামি দিয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা করা হয়। মামলাটিতে একের পর এক তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হলেও মরদেহের পরিচয় পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। পরে ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে তার পরিচয় জানা যায়। এরপর ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তা নিশ্চিত হয় পুলিশ। জানা যায়, মৃত ব্যক্তি যশোরের চৌগাছা উপজেলার পশ্চিম কারিকরপাড়ার আসলাম হোসেন।

এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে তদন্তের এক পর্যায়ে আসলামের স্ত্রী উম্মে হাবিবা কণা এবং কণার দ্বিতীয় স্বামী ডালিম হোসেনের জড়িত থাকার বিষয়টি বেরিয়ে আসে। কুমিল্লার বাসিন্দা ডালিমকে পরে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ডালিম পুলিশের কাছে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জানান, কণা যশোরে আত্মগোপন করে আছেন। এই তথ্যের ভিত্তিতে ও তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে র‌্যাব জানতে পারে আসলামের স্ত্রী উম্মে হাবিবা কণা যশোরের অভয়নগরে আত্মগোপনে আছেন।

এরপর বুধবার সকালে অভয়নগরে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। হত্যাকাণ্ডের আড়াই বছর পর ধরা পড়েন কণা। গ্রেপ্তারের পর কণা তার স্বামীকে হত্যার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, টাকা-পয়সা আত্মসাতের জন্য একাধিক বিয়ে করেছেন। আসলাম তার তৃতীয় স্বামী। টাকা-পয়সা আত্মসাতের পর দ্বিতীয় স্বামীর সহযোগিতায় আসলামকে হত্যা করে মরদেহ বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেওয়া হয়।

গ্রেপ্তার আসামিকে কেরানীগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানান র‌্যাব অধিনায়ক।