সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে রাস্তা নিয়ে বিরোধের জেরে তেরো বছরের এক শিশুকে বর্বরোচিত নির্যাতন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি প্রতিপক্ষের লোকজন তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ এনে উল্টো ফাঁসানোর চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেছেন নির্যাতিত শিশুর পরিবার।
গত শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের দক্ষিণ কলাউড়া গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটেছে।
নির্যাতিত শিশুর পরিবার সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের দক্ষিণ কলাউড়া গ্রামের কাতার প্রবাসী সিরাজ মিয়ার পার্শ্ববর্তী বাড়ির মৃত আব্দুল গফুরের পুত্র আজমির উদ্দিনের সঙ্গে বাড়ির রাস্তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এরই জেরে সম্প্রতি কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে প্রতিপক্ষ জমির উদ্দিন ও তার আত্মীয় স্বজনরা উত্তেজিত হয়ে প্রবাসীর স্ত্রী তাছলিমা বেগম (৩৫), পুত্র মোজাহিদ মিয়া (১৩)’র ওপর বাড়িঘরে গিয়ে অতর্কিত হামলা চালায় এবং মারধর করে নগদ টাকাসহ সোকেস ভেঙে স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এই ঘটনাকে চাপা দিতে প্রবাসীর তেরো বছরের পুত্র মোজাহিদ মিয়া চার বছরের এক শিশু কন্যাকে ধর্ষণের চেষ্টায় কামড়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ তোলে এবং পুলিশেও দেয়।
পুলিশ ঘটনার সত্যতা না পেলে অভিযোগকারী জমির উদ্দিন নিজে পুলিশের কাছে লিখিত দিয়ে তাকে আবার ছাড়িয়েও আনেন। ছাড়িয়ে আনার তিনদিন পর গত শুক্রবার শিশু মোজাহিদকে ডেকে নিয়ে ঘরে জমির উদ্দিন তার ঘরে তালাবদ্ধ করে বেধড়ক মারপিট করে রক্তাক্ত জখমী করে। পরে নির্যাতিত শিশুর পরিবার জানতে পেরে ৯৯৯ কল করে এবং খবর পেয়ে দোয়ারাবাজার থানার পুলিশ তাকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠায়।
এ দিকে শিশুকে বেধড়ক মারধরের ক্ষত নিয়ে গত চারদিন ধরে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো প্রতিকার মিলছে না। নিরুপায় হয়ে রোববার বিকেলে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের দ্বারস্থ হয়ে প্রতিপক্ষের পূর্বশত্রুতার জেরে শিশুক ধর্ষণের চেষ্টা অভিযোগ এনে ফাঁসানোর চেষ্টা এবং ওই শিশুকে নির্যাতনের লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন প্রবাসীর স্ত্রী তাসলিমা বেগম।
তাসলিমা বেগম বলেন, ‘প্রতিপক্ষের লোকজন বাড়ির রাস্তা নিয়ে আমাদের সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করে আসছে। এ নিয়ে বিভিন্নভাবে তারা আমাদের কাছে মোটা অংকের টাকাও দাবি করেছে। তাদের চাহিদা মতো টাকা পয়সা না দেওয়ায় শেষ পর্যন্ত আমার শিশু পুত্রকে ফাঁসাতে উঠেপড়ে লাগে। নিজেরা ঘটনা সাজিয়ে স্থানীয় কিছু মাতব্বরদের প্ররোচনায় আমাদের কাছে ১ লাখ টাকা দাবি করে এবং অভিযোগকারী নিজেই থানা পুলিশে লিখিত দিয়ে পুত্রকে ছাড়িয়ে আনে। তাদের চাহিদা মত টাকা না দেওয়ায় শুক্রবার তাকে ডেকে নিয়ে বেধড়ক মারপিট করে। আমরা এর ন্যায্য বিচার চাই।’
দোয়ারাবাজার থানার ওসি বদরুল হাসান বলেছেন, দুইজন শিশু। ধর্ষণের চেষ্টা বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করার কথা বলে অভিযোগকারী নিজেই লিখিত দিয়ে থানা থেকে ছাড়িয়ে নেন। এর তিনদিন পর তাকে বাড়িতে আটকে অভিযোগকারী ও তার আত্মীয় স্বজন শিশু মোজাহিদকে বেধড়ক মারপিট করে। খবর পেয়ে আমরা তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠিয়েছি। নির্য়াতিত শিশু মোজাহিদের অভিভাবকরা এখনও কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।