দোয়ারায় ভাঙছে মুক্তিযোদ্ধার বসতভিটা, ‘কথা শুনেননি’ ঠিকাদার

গত কয়েকদিনের অব্যাহত বৃষ্টিপাত এবং পাহাড় থেকে নেমে আশা উজানের ঢলে সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সুরমার ভাঙন এখন তীব্র আকার ধারণ করেছে। নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় শেষ রক্ষা হচ্ছে না উপজেলার জালালপুর গ্রামের প্রাচীন মসজিদ, অসংখ্য বসত-বাড়িসহ খোদ বীরমুক্তিযোদ্ধা উস্তার আলীর বসতভিটে।

সুরমানদীর ভাঙন ভয়াবহতায় মান্নারগাঁও ইউনিয়নের জালালপুর গ্রাম নদী গর্ভে বিলীনের পথে শিরোনামে সম্প্রতি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর নজরে আসে জেলাপ্রশাসনের।

জেলা প্রশাসক জালালপুর গ্রামের জামে মসজিদ ও বীরমুক্তিযোদ্ধা উস্তার আলীর বসতভিটা রক্ষা তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তাদের। সংশ্লিষ্টরা মসজিদ ও বীরমুক্তিযোদ্ধা উস্তার আলীর বসতভিটা রক্ষায় বালিভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার উদ্যোগ নিয়ে একজন ঠিকাদার নিয়োগ করেন। নিযুক্ত ঠিকাদার ভাঙন কবলিত স্থানে বালিভর্তি বস্তা যত্রতত্র ফেলে রাখলেও গত তিন সপ্তাহেও ড্রেসিং করে সুরমার ভাঙনরোধে বস্তা ফেলা হয়নি।

শুক্রবার সরেজমিন জালালপুর গ্রামে গেলে দেখা যায়, সুরমার ভাঙন এখন তীব্র আকার ধারণ করেছ। নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তীর ভেঙে বীরমুক্তিযোদ্ধা উস্তার আলীর বসতবাড়ি, জামে মসজিদ, অটো রাইস মিল চলে যাচ্ছে নদী গর্ভে।

ঝুলন্ত ঘর থেকে বেরিয়ে বীরমুক্তিযোদ্ধা উস্তার আলী হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আমার বাড়ির ছবি এবং একটি দরখাস্ত নিয়া গেলে তিনি তাৎক্ষণিক নির্দেশনার পর পাউবো কর্তৃপক্ষ ও নিযুক্ত ঠিকাদারের খামখেয়ালিপনায় এখন আর শেষ রক্ষা হচ্ছে না আমার বাড়িঘর। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যালয়ে বার বার গেলেও কোন কর্নপাত করেনি কর্তৃপক্ষ। অন্তত ২০ দিন পূর্বে বস্তাভর্তি বালি ফেলা হলে আমার বসত ভিটে ঘরটি ঠেকানো সম্ভব হতো। কিন্তু ঠিকাদার বস্তাভর্তি করে নদীর তীরে শতশত বালির বস্তা ফেলে রাখলেও ভাঙন কবলিত স্থানে ফেলেননি বস্তা। বৃষ্টি হওয়ার এক সপ্তাহ পূর্বে পাউবো’র এসডিও সমশের আলী আমার দায়িত্বে ড্রেসিং করে রাখতে বলেন। আমি প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ করে নদীরপাড় ড্রেসিং করিয়েছি, কিন্তু গত ২০ দিনেও বালির বস্তা ফেলেনি ঠিকাদার।’

তিনি বলেন, ‘গত তিনদিন ধরে অব্যাহত বৃষ্টিপাতে এবং পাহাড়ি ঢলে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে আমাদের গ্রামের পুরনো মসজিদ ও আমার বসতভিটা। আর শেষ রক্ষা হলো না আমাদের।’

একইভাবে তীব্র ভাঙনের কবলে রয়েছে জালালপুর গ্রামের অটো রাইস মিলটিও। অটো রাইস মিল মালিক রাজা মিয়া রাসু বলেন, ‘সুরমার ভাঙন থেকে আর রক্ষা হলো না আমাদের। নদীর তীরে বস্তাবন্দী বালি পানির স্রোতে ভেসে যাচ্ছে, কিন্তু এই বস্তা ফেলা হয়নি ভাঙনরোধে। নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার পূর্বে বালির বস্তা ফেলা হলে ভাঙনরোধ কিছুটা সম্ভব হতো। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে নদীর তীরে যত্রতত্র বালির বস্তা বিনষ্ট হলেও ভাঙনে ফেলা হয়নি বালি।’

জালালপুর গ্রামবাসী বলছেন, ঠিকাদারের খামখেয়ালিপনা আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তার ভাঙন ঠেকানো গেলো না। শুরুতেই বালির বস্তা ফেলা হলে ভাঙনরোধ সম্ভব হতো। এখন নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে আর কিছুই করার নেই।

তারা বলেন, কাজের কাজ কিছুই হয়নি। যে কোনো সময় মসজিদ, অটো রাইস মিল এবং বীরমুক্তিযোদ্ধা উস্তার আলীর বসতবাড়ি নদী গর্ভে চলে যাবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিযুক্ত ঠিকাদার ফারুক মিয়া বলেন, কাজের নির্দেশনা পাওয়ার পরই শ্রমিকরা ভাঙন কবলিত এলাকায় বালির বস্তা ফেলা অব্যাহত রেখেছে। আজকেও ভর্তুকি দিয়ে লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন থেকে বালি এনে বস্তা ভর্তি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রজেক্ট পাশ হওয়ার এতো অল্প সময়ে কি করা যেতে পারে।

এ ব্যাপারে পাউবো সুনামগঞ্জের এসডিও সমশের আলী মন্টু বলেন, জালালপুর গ্রামের ভাঙনরোধে দ্রুত বালির বস্তা ফেলতে ঠিকাদারকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।