দোয়ারাবাজার উপজেলার মোল্লাপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে গত ৬ মাসেও স্বাস্থ্য সহকারী ও ফ্যামেলি প্ল্যানিং কর্মীর উপস্থিতি না থাকায় প্রান্তিক পর্যায়ের জনগোষ্ঠীদের চিকিৎসাসেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। এছাড়া নানা অব্যস্থাপনা এবং দায়িত্বহীন কর্মীর কারণে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সীমান্ত এলাকার সংখ্যা গড়িষ্ঠ প্রান্তিক জনগোষ্ঠী।
নিয়মানুযায়ী, সপ্তাহে তিনদিন অফিস করার কথা স্বাস্থ্য সহকারী এবং ফ্যামিলি প্ল্যানিং কর্মীর। স্বামী স্বাস্থ্য সহকারী এবং স্ত্রী ফ্যামেলি প্ল্যানিং কর্মী হওয়ায় গত ৬ মাসেও একদিন তাঁরা ক্লিনিকে আসেননি। নানা অজুহাত দেখিয়ে কর্তৃপক্ষের নজর এড়িয়ে নিজের দায়িত্বপালনে ফাঁকিবাজি করে আসছেন। অফিসে অনিহা স্বামী স্ত্রী দু’জনের। এসব বিষয়ে নজরদারি নেই যথাযথ কর্তৃপক্ষেরও।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, দোয়ারাবাজার উপজেলার বিভিন্ন কমিউনিটি ক্লিনিকের চিত্র একই রকম।
সরেজমিনে গিয়ে উপজেলার মোল্লাপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হওয়ার সত্যতাও পাওয়া যায়। তবে স্বামী-স্ত্রী যুগল স্বাস্থ্যকর্মীদের পক্ষে সাফাইয়ের কোন কমতি নেই। এসব বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে উন্নত স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার দাবি এলাকাবাসীর।
ওই ক্লিনিকের দায়িত্বরত সিএইচসিপি রিমা বেগম জানালেন, তিনি নিজে প্রতিদিন অফিস করে আসছেন। কিন্তু স্বাস্থ্যসহকারি আব্দুল বাতেন এবং এফডব্লিউএ আজিজুন নাহার গত ৬ মাসেও উপস্থিতি না থাকায় কার্যত স্বাস্থ্যসেবা বিঘ্নিত হচ্ছে।
চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে এ যাবৎ তাদের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর নেই। স্থানীয় লোকজন বলেছেন, আব্দুল বাতেন ও তার স্ত্রী এই কমিউনিটি ক্লিনিকে চাকুরী করেন তা আমাদের জানাই নেই। কারণ তারা কোনোদিন এখানে আসেননি।
বুধবার (০৯ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার মোল্লাপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে গেলে দেখা যায়, অফিস কক্ষ খোলা থাকলেও কেউ নেই। গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতর কথা জেনে ১২টার দিকে সিএইচসিপি রিমা বেগম অফিসে আসলেও ক্লিনিকের এফডব্লিউএ আজিজুন নাহার এবং স্বাস্থ্য সহকারী আব্দুল বাতেনকে উপস্থিত পাওয়া যায়নি।
স্বাস্থ্য সহকারী আব্দুল বাতেনকে মুঠোফোনে অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে জিজ্ঞাসা করার কথা বলেন।
প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, খোদ পরিবার পরিকল্পনার কার্যক্রম নিয়ে। এক সমীক্ষায় দেখা যায়, বোগলাবাজার ইউনিয়নে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয় তিনটি ওয়ার্ডে বিভক্ত করে। গত আগস্ট মাসে তিন ওয়ার্ডে ৬৯ জন গর্ভবর্তী মাকে নিবন্ধিত করা হয়। নিবন্ধনের বাইরে আরও অর্ধশত মা রয়েছেন। এক বছরে এমন পরিস্থিতি হয়েছে যার জন্য দায়ী পরিবার পরিকল্পনা স্বাস্থ্যকর্মী। সচেতন মহল জানান, আজিজুন নাহার ওই এলাকায় তিনি কোন দিন কাজ করেননি।
এফডব্লিউএ আজিজুন নাহার গত ৬ মাসেও উপস্থিত না থাকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, নানা কারণে উপস্থিত হতে পারেননি। তবে এ বিষয়ে কোনও সংবাদ পরিবেশন না করার অনুরোধ জানান।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চৌধুরী রাজিব মোস্তফা বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আবু সালেহীন খান বলেন, জনবল সঙ্কটের কারণে পালাবদল করে স্বাস্থ্য সহকারীদের কাজ করাতে হচ্ছ। তবে ফ্যামিলি প্ল্যানিং কর্মী কোন কাজ করছে না এটা নিশ্চিত হয়েছি।
সিভিল সার্জন ডা. আহমদ হোসেন বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের সকল কর্মীরা নিয়মিত অফিস করার কথা। স্বাস্থ্য সহকারী, ফ্যামিলি প্ল্যানিং কর্মী অফিসে না আসার বিষয়ে তদন্ত করা হবে। সতত্যা পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।