দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের নুরপুর গ্রামে সুরমা নদী ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে সুরমার ভাঙনরোধে বড় গর্ত, পুকুর ভরাট করা হয়েছিল। কাজ শেষ হওয়ার কিছুদিন পরে নদীর তীরবর্তী পুকুর ও ভাঙন গর্ত থেকে সংঘবদ্ধ একটি সিন্ডিকেট এসকেভেটর দিয়ে অবাধে বালু বিক্রি। চক্রটি ড্রেজিংয়ের বালি বিক্রি করে ইতোমধ্যে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
প্রকাশ্যে বালু বিক্রি করা হলে গ্রামের লোকজন স্থানীয় প্রশাসনকে বারবার অবহিত করেও কোনো প্রতিকার মিলেনি। এমনকি অদৃশ্য কারণে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কর্তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছেন।
গত বুধবার গ্রামের সচেতন মহলের পক্ষ থেকে জেলা পুলিশের কাছে মৌখিক অভিযোগ করা হলে দোয়ারাবাজার থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং জড়িতদের থানায় আসতে বলেন। একইভাবে গ্রামের লোকজন বালু বিক্রির শুরুতেই উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার ভূমি ফয়সাল আহমেদকেও মৌখিকভাবে অবহিত করেও কোনো কাজ হয়নি।
গেল বুধবার গণমাধ্যম কর্মীরা এ বিষয়ে অবহিত করলে এসিল্যান্ড আশ্বস্ত করেছিলেন যে তিনি তা দেখছেন। পরে এর কোনো অগ্রগতি আর দেখা যায়নি।
স্থানীয়রা বলেন, গত বছর সুরমা নদীর দুই তীরেই ভাঙন প্রতিরোধে প্রায় শত কোটি টাকার প্রকল্পের ড্রেজিং কাজ করা হয়। এরই অংশ হিসেবে উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের নুরপুর গ্রামের নদীর তীরবর্তী ভাঙন কবলিত এলাকার বড়গর্ত, পরিত্যক্ত পুকুর, খেলার মাঠ, মসজিদ, মাদ্রাসা এবং স্কুল মাঠ ভরাট করা হয়। কাজ শেষ হতে না হতে নুরপুর গ্রামের আবুল কালামের (সুরুজ মিয়া) পুত্র মইনুল ইসলাম, মৃত তোফাজ্জল হোসেনের পুত্র মামুন মিয়া ও তোফাজ্জল মিয়া নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেট গ্রুপ দেদারসে বালি বিক্রি করে আসছে। গ্রামের লোকজন স্থানীয় প্রশাসনের কাছে বারবার মৌখিক অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার মিলেনি। অধিকন্তু বালু বিক্রি সিন্ডিকেটকে বাধাবিপত্তি দিলে তারা স্থানীয় প্রশাসনের যোগসাজশে বালু বিক্রি করছেন বলে জানান।
নুরপুর গ্রামের শাহ জামাল বলেন, দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশ্যে একটি সিন্ডিকেট ড্রেজিয়ের কোটি টাকার বালু অবাধে বিক্রি করে আসলেও দেখার কেউ নেই। এতে নদী ভাঙন কবলিত নুরপুর গ্রামবাসী ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। গ্রামের মইনুল, মামুন এর নেতৃত্বে প্রকাশ্য এই সিন্ডিকেট দেদারসে বালু বিক্রি করে আসছে। প্রথম দফায় গত ফেব্রুয়ারি মাসে সুরমা ইউনিয়নের গিরিশনগর গ্রামের এখলাছুর রহমান ফরাজীর এসকেভেটর দিয়ে বীরমুক্তিযোদ্ধা আলী আমজদের বন্দোবস্তের ভরাটকৃত পুকুর ও আশপাশ থেকে প্রায় ৬৫ লাখ টাকার বালু বিক্রি করেন।
সাবেক ইউপি সদস্য আলী নুর বলেন, দীর্ঘদিন থেকই সরকারি প্রকল্পের বালু বিক্রি করা হচ্ছে। বালু বিক্রির সঙ্গে জড়িতরা বলছেন ড্রেজিংয়ে তাদের পুকুর ভরাট করা হয়েছিল এখন তারা তাদের পুকুর থেকে বালু বিক্রি করছেন।
বর্তমান ইউপি সদস্য আব্দুর রউফ বলেন, নুরপুর গ্রামে প্রকাশ্য সরকারি ড্রেজিংয়ের বালু বিক্রি করা হলেও প্রশাসনিক কোনো দৃষ্টিগোচর নেই। মৌখিকভাবে প্রশাসনের কাছে মৌখিক অভিযোগ করেও দীর্ঘদিনেও কোনো প্রতিকার মিলেনি। অবাধে বালু বিক্রি করায় নদী ভাঙন কবলিত এলাকার ব্যাপক ক্ষতিসহ রাস্তাঘাট এবং পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে।
জানতে চাইলে সরকারি বালু বিক্রি সিন্ডিকেট সদস্য মইনুল ইসলাম, মামুন মিয়া জানান, তারা বালু বিক্রির সঙ্গে জড়িত নন।
দোয়ারাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেবদুলাল ধর বলেন, সরকারি ড্রেজিংয়ের বালু তোলার সংবাদ পেয়ে পুলিশ পাঠিয়ে তা বন্ধ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি ফয়সাল আহমেদ এর মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফ মুর্শেদ মিশু বলেন, ‘আমি ছুটিতে আছি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এসিল্যান্ডকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’