সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলায় এবারের হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজে শুরুতেই অনিয়ম অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় অপ্রয়োজনীয় বাঁধে কাজ না করার নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী।
শনিবার (৭ জানুয়ারি) সকালে উপজেলার পান্ডারগাঁও ইউনিয়নের করিমপুর গ্রামের নদীর তীরে দেখার হাওরের পিআইসির কাজ পরিদর্শন করে এ নির্দেশনা দেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাওরের ফসল রক্ষাবাঁধে গত বছরের তুলনায় এবছর দ্বিগুণ প্রকল্পের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। গত মৌসুমে বাঁধের কাজে মোট বরাদ্দ ছিল ৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এবার উপজেলায় ১১০ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণে তা দ্বিগুণ করে প্রায় ১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। গত বছর ছিল ৫০টি প্রকল্প এবার বাড়িয়ে ৭২টি প্রকল্পের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যে ৬২টি বাঁধ অনুমোদিত হয়েছে।
গেল ১৫ ডিসেম্বর থেকে বাঁধের কাজ শুরু হওয়ার নির্দেশনা থাকলেও প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শুধুমাত্র উপজেলার দেখার হাওরে ৪টি প্রকল্পের বাঁধে মাটি কাটার কাজ শুরু হয়। ৬২টি বাঁধের অনুমোদন পেলেও বাকী প্রকল্পগুলোতে এখনও কাজ শুরুই হয়নি।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, দেখার হাওরে ফসল রক্ষাবাঁধের যে ৪টি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে এতে বিধিবহির্ভূত বাঁধের কাজ করা হচ্ছে। শুরুতেই বাঁধের গোড়া থেকে এস্কেভেটর দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে। একেবারে দায়সা কাজ এবং বাঁধের স্থায়িত্ব নিয়ে শুরুতেই জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। ওই হাওরে গত দুই বছর যে সকল অপ্রয়োজনীয় বাঁধ বাতিল করা হয়েছিল এবার পাউবোর স্থানীয় কর্মকর্তাদের যোগসাজশে তা আবার প্রস্তাবনায় আনা হয়েছে। এমনকি অপ্রয়োজনীয় বাঁধের কাজই এখন শুরু করা হয়েছে।
স্থানীয় কৃষকদের অনেকেই বলেছেন, প্রতিবছরই কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে সরকার কৃষকদের স্বার্থে হাওরে ফসল রক্ষাবাঁধ দেয় কিন্তু এর উপকার আমরা পাই না। ব্যবসা-বাণিজ্য হয় নেতা, জনপ্রতিনিধি, পাউবোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। এমন অনেক বাঁধ রয়েছে যা অপ্রয়োজনীয়। বছর ঘুরলেই বরাদ্দ দ্বিগুণ বেড়ে যায়, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। প্রয়োজনীয় বাঁধের কাজ শুরুই হয়নি অথচ অপ্রয়োজনীয়গুলোর কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা হচ্ছে।
উপজেলার দোহালিয়া ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর গ্রামের বাসিন্দা দবির আহমদ বলেন, ফসল রক্ষাবাঁধে সুরমা নদীর ভাঙন এলাকা থেকে নদীর পাড় কেটে মাটি ফেলা হচ্ছে।
পাউবোর উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবু সায়েম মো. সাফিউল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর আমরা ৭২টি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। ইতোমধ্যে ৬২ টি প্রকল্পের অনুমোদন হয়েগেছে। কয়েকটি প্রকল্পের কাজও শুরু হয়েছে।’
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা প্রিয়াংকার মোবাইল ফোনে বারবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, ‘কারো স্বার্থের জন্য অপ্রয়োজনীয় বাঁধ তৈরি করতে দেওয়া হবে না। ১৫ ডিসেম্বর থেকে কাজ শুরু হওয়ার কথা, কিন্তু মেশিন দিয়ে মাটি কাটা হবে তাই হয়তো দেরি হচ্ছে, তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ সম্পন্ন করার কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
শনিবার জেলা প্রশাসক ফসল রক্ষা বাঁধ পরিদর্শনকালে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিজন কুমার সিংহ, দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান আল তানবীর আশরাফী চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা প্রিয়াংকা, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আম্বিয়া আহমেদ, দোয়ারাবাজার উপজেলার দায়িত্বে থাকা (পাউবো) এর উপসহকারি প্রকৌশলী আবু সায়েম শাফিউল ইসলাম, কৃষি কর্মকর্তা শেখ মহসিন আলী, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মুনসুর আলী, দোয়ারাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেব দুলাল ধর, পান্ডারগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াহিদ প্রমুখ।