বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কেউ মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার (৭ জুন) দুপুরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে- লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমসহ দেশের বেশকিছু অনলাইন ও ইলেকট্রনিক সংবাদ মাধ্যমে ‘দেশে বিদেশি একজন নাগরিকের দেহে মাঙ্কিপক্সের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে’ মর্মে একটি তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। যা আসলে সঠিক নয়। দেশে মাঙ্কিপক্সে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যক্তি আক্রান্ত হননি। ভবিষ্যতে কোনো ব্যক্তির আক্রান্তের ঘটনা কখনো ঘটলে তা প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হবে। এই মুহূর্তে দেশে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি নেই।
দুপুরে মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত সন্দেহে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এক তুর্কি নাগরিককে মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বিমানবন্দরের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
শাহরিয়ার সাজ্জাদ জানান, ওই ব্যক্তির শরীরের বিভিন্ন অংশে মাঙ্কিপক্সের কিছু উপসর্গ দেখা গেছে। সেগুলো পরীক্ষা করার জন্য তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
টার্কিশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ওই ব্যক্তি মঙ্গলবার বেলা ২টায় বাংলাদেশে পৌঁছান। বিমানটিতে মোট ২১৬ জন যাত্রী ছিলেন। তাদের বিষয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে মনিটরিং করছে টার্কিশ এয়ারলাইন্স।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে টার্কিশ এয়ারলাইন্সের এক কর্মকর্তা বলেন, ওই ব্যক্তি আদৌ মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত কি না তা এখনো নিশ্চিত নয়। যে ফ্লাইটটিতে ওই ব্যক্তি ঢাকায় এসেছেন সেটিতে মোট ২১৬ জন যাত্রী ছিলেন। আমরা সেই ফ্লাইটের যাত্রীদের নামের তালিকা, ফোন নম্বর ও যোগাযোগের অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করেছি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে যদি এগুলো চাওয়া হয় তাহলে আমরা সেগুলো তাদের দেব। এছাড়া যদি ওই যাত্রীর মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয় সেক্ষেত্রে অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী ফ্লাইটের অন্যান্য যাত্রীদেরও নির্দেশনা দেওয়া হবে।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, ওই যাত্রীর বিষয়ে টার্কিশ এয়ারলাইন্স তুরস্কের দুইজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেছে। তারা জানিয়েছেন, এটা এক ধরনের দাদ রোগ। তুরস্কে অনেকের মধ্যেই এই রোগ রয়েছে। তাছাড়া ওই ব্যক্তির হাত, পা ও মাথায় চুলের নিচে এই দাদের মতো চিহ্ন দেখা গেছে। মাঙ্কিপক্স সাধারণত মাথার চুলের নিচে হওয়ার কথা নয়।
এদিকে দেশে যদি সত্যিই মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায় তাহলে দেশে চিকিৎসার প্রস্তুতি আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের পরিচালক ডা. মিজানুর রহমান বলেন, মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালকে এ ধরনের বিশেষ রোগীদের জন্য ডেডিকেটেড করা হয়েছে। এখানে ১০টি বেডের আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখা আছে। এ ধরনের রোগী এখন পর্যন্ত আমাদের এখানে আসেনি। তবে কেউ যদি আক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হবে। আমরা এক্ষেত্রে প্রস্তুত আছি।
মাঙ্কিপক্স এক ধরনের ভাইরাস জনিত ইনফেকশন, যে ভাইরাস পশ্চিম আফ্রিকা ও মধ্য আফ্রিকার জঙ্গলের ছোট আকারের স্তন্যপায়ী প্রাণী ও ইঁদুর জাতীয় প্রাণীর মধ্যে থাকে।
গত ৭ মে যুক্তরাজ্যে নাইজেরিয়া ফেরত এক ব্যক্তির দেহে মাঙ্কিপক্স ভাইরাস শনাক্ত হয়। ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাচ্ছে।
অল্প সময়ের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন দেশে নানা গোষ্ঠীর মধ্যে মাঙ্কিপক্সের বিস্তার বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানী, সরকার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ভাবনায় ফেলেছে। বড় আকারে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও করছেন অনেকে। তবে বিজ্ঞানীরা এ কথাও বলছেন যে, আমাদের এখনই এটা নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করার দরকার নেই