সৌদিতে নির্যাতিত হবিগঞ্জের নারীর আকুতি

‘দেশে ফিরাইয়া না নিলে আমারে মাইরালাইবো’

মেয়ের ছবি হাতে শিল্পী আক্তারের বাবা-মা

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার আহম্মদাবাদ ইউনিয়নের তৈইগাঁও গ্রামের আব্দুল মজিদের ২৫ বছর বয়সী মেয়ে শিল্পী আক্তার পরিবারের অসচ্ছলতার কথা চিন্তা করে ২০১৯ সালের এপ্রিলে পাড়ি জমান মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে। সেখানে যাওয়ার পর একটি বাসায় গৃহকর্মীর চাকরি নেন শিল্পী। এর পরই তার ওপর শুরু হয় নির্যাতন। কাজে ছোটখাটো ভুল হলেই মারধরের শিকার হন তিনি। প্রতিনিয়ত তাকে শারীরিক নির্যাতন করেন বাসার মালিক ও মালিকের ছেলে-মেয়েরা।

এমন নির্যাতন সইতে না পেরে দেশে মায়ের কাছে পাঠানো ভিডিওবার্তায় কেঁদে কেঁদে বাঁচার আকুতি জানিয়েছেন শিল্পী আক্তার। ওই বার্তায় বলেন, ‘তুমরার কাছে আমি ভিক্ষা চাই। আমারে দেশে ফিরাইয়া নেও। তিন বছর ধইরা আমারে আটকাইয়া রাখছে। আমারে ধরে-মারে। মালিকে মারে, মালিকের পুলা-পুইরেও মারে। খানি (খাবার) একবার দিলে আরেকবার দেয় না। ঘরের ভিত্রে তালা মাইরা রাখে। দেশে ফিরাইয়া না নিলে আমারে মাইরালাইবো, লাশ কইরা বাংলাদেশে পাঠাইবো।’

শিল্পীর মা নূর চান বিবি জানান, ২০১৯ সালের এপ্রিলে সৌদি আরবে যান তার ২৫ বছর বয়সী মেয়ে শিল্পী আক্তার। সেখানে যাওয়ার পর একটি বাসায় গৃহকর্মীর চাকরি পান শিল্পী। তবে শিল্পী নিশ্চিত নন যে তার বাসা সৌদি আরবের কোন রাজ্যের কোন এলাকায়।

শিল্পীর মা আরও জানান, কাজে যোগ দেওয়ার পরই তার ওপর শুরু হয় নির্যাতন। কাজে ছোটখাটো ভুল হলেই মারধরের শিকার হন শিল্পী। প্রতিনিয়ত তাকে শারীরিক নির্যাতন করেন বাসার মালিক, তার ছেলে ও মেয়েরা। প্রথমে মা-বাবা ও অসচ্ছল পরিবারের কথা চিন্তা করে সব নির্যাতন নীরবে সয়ে যান শিল্পী।

শিল্পীর সঙ্গে কথা ছিল দুই বছর সেখানে থাকার পর ২০২১ সালের এপ্রিলে তাকে দেশে পাঠিয়ে দেবে। কিন্তু দুই বছর অতিক্রম হলেও তাকে দেশে পাঠানো হয়নি। উল্টো ভিসার মেয়াদ আরও ১ বছর বাড়ানো হয়েছে। দেশে আসার কথা বললে শিল্পীর ওপর নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনে বর্তমানে শিল্পী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মা-বাবার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলতে চাইলেও কথা বলতে দেওয়া হয় না।

শিল্পীর মা বলেন, আমি আমার মেয়েকে ফিরে পেতে চাই। কিন্তু তারা আমার মেয়েকে দিচ্ছে না। ট্রাভেলসের লোকেরাও আমার মেয়েকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করছে না। সরকারের কাছে আমাদের আকুল আবেদন, আমার মেয়েকে যেন দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।

ঢাকার পুরানা পল্টন এলাকার ৪ সাইট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের পরিচালক খালেদ হোসাইন জানান, মেয়েটিকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ে এক মাস আগে যোগাযোগ করা হয়েছে। আশা করি দ্রুত তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।

চুনারুঘাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সিদ্ধার্থ ভৌমিক বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি। দূতাবাসের মাধ্যমে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবো।