সিলেটের ক্রিকেটার খালেদ জাতীয় দলের হয়ে খেলছেন। আছে তার বিদেশ প্রীতিও! তার এই বিদেশ প্রীতি উইকেট প্রাপ্তিতে। বিদেশের মাটির গন্ধ পেলেই তিনি উইকেট পাওয়ার নেশায় মত্ত হয়ে ওঠেন।
মাত্র ৯ টেস্টের ক্যারিয়ারে খালেদ উইকেট পেয়েছেন ১৯টি। যার ১৮টিই বিদেশের মাটিতে। সর্বশেষ উইন্ডিজের বিপক্ষে সেন্ট লুসিয়া টেস্টে নিয়েছেন ৫ উইকেট। যা তার ক্যারিয়ারে প্রথম। এখন পর্যন্ত তিনি ৯ টেস্টের ৪টি খেলেছেন ঘরের মাঠে। যেখানে তার উইকেট মাত্র একটি। দেশের বাইরে ৫ টেস্টে উইকেট ১৮টি। সর্বশেষ ৪ টেস্টে এই ১৮ উইকেট। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে দুই টেস্টে ৮ উইকেট নেয়ার পর এবার উইন্ডিজ সফরে প্রথম টেস্টের দুই ইনিংসে ৫ উইকেট নেন। এবার সেন্ট লুসিয়া প্রথম ইনিংসেই পেয়েছেন ৫ উইকেটের দেখা। বিদেশের মাটিতে তিনি একবারই উইকেট শূন্য থেকেছেন। অভিষেকের পরের ম্যাচই খেলেছিলেন হ্যামিলটনে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে। ৩০ ওভারে ১৪৯ রান দিয়ে থেকেছিলেন উইকেট শূন্য।
দেশের মাটি যেন খালেদের জন্য উর্বর নয়। এখানে তিনি ফসল ফলাতে পারেন না। অভিষেক হয়েছিল এই দেশের মাটিতেই। ২০১৮ সালে মিরপুরে জিম্বাবুয়ের মতো দূর্বল প্রতিপক্ষের বিপক্ষে অভিষেক হওয়ার পরও খালেদকে উইকেট শূন্য থাকতে হয়েছিল। এরপর তিনি খেলেন পাকিস্তানের বিপক্ষে। তবে এই খেলার মাঝে তার বেশ লম্বা একটা বিরতি ছিল। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে হ্যামিলটনে খেলার পর মিরপুরে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলতে নেমেছিলেন প্রায় ৩৪ মাস পর। তার এই লম্বা বিরতি ছিল ইনজুরির কারণে। ফিরে এসে তিনি অবশ্য প্রথম উইকেটের দেখা পেয়েছিলেন। উইকেটটি ছিল বেশ ওজনদার। পাকিস্তানের অধিনায়ক এবং সময়ের সেরা ব্যাটসম্যান বাবর আজমকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলে।
খালেদ এরপর ঘরের মাঠে আবার খেলেন উইন্ডিজ সফরের আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। দুই টেস্টে খেলে তিনি উইকেটের মুখ দেখতে পারেননি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলতে নেমেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে সাফল্যের ঝুড়ি নিয়ে। তার ঝুড়িতে ছিল দুই টেস্টে ৮ উইকেট। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ভালো করতে না পারার বেদনা তিনি পুষিয়ে নিচ্ছেন উইন্ডিজ সফরে। অ্যান্টিগা টেস্টে প্রথম ইনিংসে পেয়েছিলেন ২ উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৮৩ রান অতিক্রম করতে নেমে উইন্ডিজের ব্যাটসম্যানরা খালেদের তোপে পড়ে দিশেহারা হওয়ার মতো অবস্থায় পড়েছিলেন। মাত্র ৯ রানে হারিয়েছিল ৩ উইকেট। সব কটিই পেয়েছিলেন ৩ উইকেট। পরে অবশ্য উইন্ডিজকে আর কোনো উইকেট হারাতে হয়নি।
অ্যান্টিগা টেস্টে তিনি দুই ইনিংস মিলে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। এবার সেন্ট লুসিয়া টেস্টে এক ইনিংসেই নিয়েছেন ৫ উইকেট। দ্বিতীয় দিন লাঞ্চের আগে এক ওভারে দুই উইকেট নিয়ে খালেদই বাংলাদেশকে খেলায় ফিরিয়ে এনেছিলেন। যদিও মায়র্সের কারণে সেই ফেরাটা পরে আর ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ । হাতা ছাড়া হয়ে যায়। কিন্তু সেই মায়ার্সকেই আউট করেন খালেদ। তার ৫ উইকেটের মাঝে মায়ার্সের উইকেটকেই তিনি আলাদা করে এগিয়ে রাখছেন। মায়ার্সকে আউট করার আাগে খালেদ আলজারি জোসেফকে আউট করেছিলন। পরে জায়দান সিলসকে আউট করে ৫ উইকেট পূর্ণ করেন। তার ৫ উইকেট উইন্ডিজের রানের চাকাকে আটকাতে পারেনি। ৪০৮ রানে গিয়ে থেমেছে। এরপর আবার বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিং ব্যর্থতায় ইনিংস হারের মুখে বাংলাদেশ। এ নিয়ে খালেদ বলেন, ‘সব ক্রিকেটারের ইচ্ছা থাকে, তার মাইলফলক যেন ‘ইম্প্যাক্টফুল’ হয়, দলের লাভ হয়। টেস্ট ক্রিকেটে হয়তো আমাদের ভালো সময় যাচ্ছে না। তবে সামনে অনেক সময় আসবে, অনেক ভালোভাবে হবে। সবাই জানপ্রাণ দিয়ে চেষ্টা করছে, নিজেকে কীভাবে আরও ভালোভাবে মেলে ধরা যায়।’
হয়তো বাংলাদেশের হার ঠেকানো যাবে না। খালেদের প্রথম ৫ উইকেট লেখা হয়ে থাকবে রেকর্ড বুকের পাতায়। পাঁচ উইকেট নিয়ে খালেদ বলেন, ‘অনেক ভালো লাগছে যে ৫ উইকেট পেয়েছি আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে। অনেক দিন ধরে চেষ্টা ছিল যে ৫ উইকেট কীভাবে নেওয়া যায়। আগেও (ডারবানে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষ ৯২ রানে ৪ উইকেট)। একটা সুযোগ এসেছিল, মিস করে ফেলেছি। এবার চেষ্টা ছিল যেন ৫ উইকেট হয়। খুব ভালো লাগছে। এটা ধরে রাখার চেষ্টা করব।’
পাঁচ উইকেটের মাঝে তিনি এগিয়ে রাখছেন সেঞ্চুরিয়ান মায়ার্সের উইকেটকে। তাকে দ্বিতীয় দিন থেকেই আউট করার জন্য পরিকল্পনা করে যাচ্ছিলেন। পরে তৃতীয় দিন গিয়ে সফল হন।
খালেদ বলেন, ‘প্রতিটি উইকেটই আমার জন্য ছিল স্পেশাল। প্রথমবার ৫ উইকেট পেয়েছি। বিশেষ করে মেয়ার্সের উইকেট ছিল অনেক কষ্টের ফল। গতকাল থেকে ওকে আউট করার চেষ্টা করেছিলাম। আজকে ওকে স্লোয়ার বলে পরাস্ত করেছি। নিজের কাছে ভালো লেগেছে যে পরিকল্পনা করে আউট করতে পেরেছি।’