সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ড. নাজিয়া চৌধুরী বলেছেন, নারী দিবস উপলক্ষে গুণী নারীদের সম্মানিত করা হচ্ছে। যা দেখে আমি অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছি। প্রত্যেকের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলাম। সবাই বিভিন্ন কর্মের সাথে সম্পৃক্ত আছেন। যার যার যোগ্যতায় আপনারা এই অবস্থানে এসেছেন। আপনারা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। তবে নারীদের আরও কাজের পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। যাতে তারা নিরাপদে কাজ করতে পারেন।
তিনি বলেন, শুধু মুষ্টিমেয় কিছু নারীকে এগিয়ে গেলে হবে না। সবাইকে এগিয়ে যেতে হবে। আমি ভারতে একটি সেমিনারে গিয়েছিলাম। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা উঠে এসেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর আগের অবস্থানে নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু মানুষ শুধু বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখছেন। বাকিরা অনেকটাই পিছিয়ে আছে। দেশ উন্নত হতে হলে সবাইকে এক সাথে উঠতে হয়। সেই অবস্থানে আমাদেরকে পৌঁছতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানির যে সেল আছে সেখানে আমি ১২ বছর ধরে কাজ করছি। ছাত্র-ছাত্রীদের বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে কাজ করেছি। সুতরাং এসব বিষয়ে অভিজ্ঞতা রয়েছে। কর্মক্ষেত্রে এখনো আমরা বৈষম্যের শিকার হই। সেই বৈষম্যের জায়গা থেকে আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে। তাহলেই এই ধরণের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান আয়োজন সার্থক হবে। এ ধরণের নারী সম্মাননা অনুষ্ঠান যত বেশি হবে নারীদের মূল্যায়ন তত বেশি প্রসারিত হবে।
শনিবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যায় সিলেট নগরীর দরগাহ গেটস্থ কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সন্নিকটে মেট্রোপলিটন ল’ কলেজের হলরুমে সিএলএবি কর্তৃক আয়োজিত ‘নারী পদক-২০২৩’ সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
গত ৮ মার্চ ছিল আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এই দিবসকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর সেন্টার ফর লিগ্যাল এইড অব বাংলাদেশ (সিএলএবি) সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য নারীদের পদক দিয়ে থাকে। এ বছরও ১৩ জন বিশিষ্ট নারীকে ‘নারী পদক-২০২৩’ প্রদান করা হয়।
সিএলএবি’র চেয়ারম্যান ও মেট্রোপলিটন ল’ কলেজের উপাধ্যক্ষ ড. এম শহিদুল ইসলাম অ্যাডভোকেটের সভাপতিত্বে এবং সিএলএবি’র নির্বাহী সংগঠক অ্যাডভোকেট মো. মামুন হোসেন ও প্রভাষক রনদ্বীপ চৌধুরী লিংকনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন, ইউএস-বাংলা আন্তর্জাতিক সাহিত্য ফোরামের সভাপতি আবুসালেহ আহমদ, জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও সিলেট জেলা নারী উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি মাজেদা রওশন শ্যামলী এবং সিএলএবি সম্মাননা উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক রাহিমা সুলতানা মনি।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন তরুণ লেখক ও কলামিস্ট এবং সিএলএবি’র নির্বাহী সংগঠক অমিতাভ চক্রবর্ত্তী রনি, ছাতক জনতা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এনামুল মুনির।
সংবর্ধিত অতিথিদের মধ্যে অনুভূতি ব্যক্ত করেন, ভারত থেকে নীলাক্ষী সরকার অনুরাধা (শিক্ষাবিদ ও আবৃত্তি শিল্পী), বাংলাদেশ থেকে সাবিহা সুলতানা (উন্নয়নকর্মী), রাহনামা শাব্বীর চৌধুরী (কবি ও সংগঠক), শিখা চক্রবর্তী (সহকারী শিক্ষিকা মধুশহিদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়), শামীমা নাসরিন (নার্সিং অফিসার), সেলীনা আক্তার চৌধুরী (চলচ্চিত্র প্রযোজক) ও অর্পিতা দাস (নারী উদ্যোক্তা)।
সংবর্ধিত অতিথিদের মধ্যে লাইভে অনুষ্ঠান দেখেন শিক্ষাবিদ মমতাজ বেগম (প্রধান শিক্ষিকা, সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ), অজন্তা দেব বর্মন (অভিনেত্রী ও পরিচালক), শ্রীমতি বীণাপাণি নাথ (লোকসংস্কৃতি গবেষক), গৌরী টুডু (শিক্ষিকা, লেখিকা ও সঙ্গীতশিল্পী), মধুমিতা নাথ (প্রধান শিক্ষিকা, শিক্ষা কর্ককর্তা, কবি, সাহিত্যিক ও নাট্য ব্যক্তিত্ব)।
অনুষ্ঠানে কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন ওমর ফারুক এবং উপস্থিত সবাই দাঁড়িয়ে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন। আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ ও সংবর্ধিত অতিথিবৃন্দকে সিএলএবি সংগঠনের পক্ষ থেকে সম্মাননাপত্র এবং ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। এছাড়া কবিতা আবৃত্তি ও গান পরিবেশন করা হয়।