বর্তমানে দেশের অবস্থা সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত। দীর্ঘ এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলমান অস্থিতিশীলতার পর ছাত্রসমাজের নেতৃত্বে দেশের আপামর জনগণ উপহার পেল নতুন এক ভোর। খাঁচায় বদ্ধ পাখিরা মুক্ত হল, ফিরে পেল বাকস্বাধীনতা। দীর্ঘদিন ধরে চলমান এই অস্থিতিশীল অবস্থার কারণে দেশের সকল খাতেই গভীর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। জনস্বাস্থ্য খাতও এর বাইরে থাকে না। দেশে হতাহতের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া, শিক্ষার্থী ও অভিবাবকদের মধ্যে ডিপ্রেশন, স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় সংকট তৈরী হওয়া এবং সামাজিক অস্থিরতা সহ নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়।
সমাজে দাঙ্গা, হতাহত এবং সহিংসতা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে হাসপাতালগুলিতে হতাহত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায় এবং চিকিৎসা ব্যবস্থায় সংকট তৈরী হয়। নির্বিচারে মানুষ হত্যা, হতাহতের ঘটনায় জনগণের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। দেশে খুন এবং হতাহতের শিকার হওয়া বা এগুলোর প্রত্যক্ষদর্শী মানুষদের মধ্যে গভীর ট্রমা সৃষ্টি করে। এই ট্রমা তাদের দৈনন্দিন জীবনকে, পারিবারিক সম্পর্ককে এবং সমাজে অংশগ্রহণকে প্রভাবিত করে। হাসপাতালগুলিতে হতাহত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া এই ঘটনাগুলি ডিপ্রেশন, অস্থিরতা, উদ্বেগ এবং পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারের মতো মানসিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে সমাজে বয়স্ক, শিশু, স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানসিক অস্থিরতা দেখা দেয়।
এ পরিস্থিতিতে দ্রুত সমাধানে পদক্ষেপ না নিলে ফলাফল ভয়াবহ রুপ ধারণ করে। অস্থিতিশীল এই পরিস্থিতিতে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান করতে যে সকল পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে- ১। সমাজে খুন ও হতাহতের সংখ্যা বেড়ে যায়, সুতরাং হাসপাতালগুলিতে জনবল বৃদ্ধি করাসহ জরুরী চিকিৎসা সেবা বৃদ্ধি করা ২। ইমার্জেন্সি এ্যাম্বুলেন্স সেবা বৃদ্ধি করা ৩। একটিভ রেফার্যাল সিস্টেম চালু করা ৪। শিক্ষার্থীদের মানুষিক স্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্ব দেয়া এবং ৫। স্বাস্থ্য কর্মী, পিতামাতা এবং শিক্ষকগণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে কাউন্সিলিং করা। ৬। সাধারণ জনগণের মানসিক স্বাস্থ্যের কাউন্সিল করতে গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার ও প্রচারণা চালানো।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক,বায়োস্ট্যাটিস্টিক্স বিভাগ,জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান (নিপসম)