দেশের অবস্থা হায় হায় কোম্পানির মতো : সিলেটে মির্জা আব্বাস

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মির্জা আব্বাস বলেছেন, বহুদিন আগে আমরা হায় হায় কোম্পানির নাম শুনেছিলাম। যারা না কি মানুষের কাছ থেকে টাকা-পয়সা নিয়ে একসময় পালিয়ে যেত। আজ দেশের অবস্থা হায় হায় কোম্পানির মতো হয়ে গেছে। আজ সারাদেশের কোথাও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক নেই। আওয়ামী লীগ জনগণকে বিদ্যুৎ দেয়ার কথা বলে কুইক রেন্টালের নামে তাদের দলীয় লোকদের ধনী করতে দেশের টাকা লুটপাট করেছে। ডিজেলের জন্য অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র এখন বন্ধ রয়েছে। আর ৩৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন না করলেও তাদেরকে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ ৩৪ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বিদ্যুতের কোনো খবর নেই। বিদ্যুৎ সেক্টরে এই লুটপাট না হলে আজ বানভাসি মানুষকে পুনর্বাসন করা যেত। দেশে ডিজেল নেই, বিদ্যুৎ নেই। শুধু নেই আর নেই। দেশে আজ কিছুই নেই। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগের লুটপাটের কারণে দেশের মধ্য আয়ের মানুষরা আজ নিম্ন আয়ের হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বেসামাল লুটপাট করে দেশকে আজ হায় হায় কোম্পানিতে পরিণত করেছে। এই দেশ একদিন এভাবেই শেষ হয়ে যাবে।

সোমবার (২৫ জুলাই) দুপুরে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন ও ডক্টর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) এর যৌথ উদ্যোগে, সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির সার্বিক তত্ত্বাবধানে বন্যাদুর্গত মানুষদের জন্য ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প, বিনামূল্যে ওষুধ প্রদান ও দরিদ্রদের মাঝে কাপড় বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে সূচিত অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন সিলেট জেলা ড্যাবের সভাপতি ডা. নাজমুল ইসলাম।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক এই মন্ত্রী আরও বলেন, স্মরণকালের এই ভয়াবহ বন্যায় পুরো সিলেটজুড়ে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের সকল নেতাকর্মী মানুষের পাশে ছিলেন। আজ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কোনো নেতা বা সংগঠন মানুষের চিকিৎসার জন্য আসে নাই। সিলেটের কৃতী সন্তান ডা. জোবায়দা রহমান দেশ এবং দেশের মানুষকে ভালোবাসেন। এজন্য সুদুর লন্ডনে থেকেও বারবার নিজ এলাকার মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বন্যার সময় ত্রাণ সহায়তা দিয়েছেন। এখন বন্যা পরবর্তী সময়েও মানুষের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। এই দেশ কারও দয়ার দান নয়। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে বন্যার সময় মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়েছিলেন। এখন হেলিকপ্টার থেকে বন্যাদুর্গগতদের জন্য ত্রাণ ফেলা হয় এবং সেই ত্রাণ মাথায় পড়ে মানুষ মারা যায়। এই দেশ ৩০ লক্ষ শহীদের বিলিয়ে দেয়া তাজা রক্তের অর্জন। দেশের স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রাখার প্রয়োজনে মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম আবারও বুকের তাজা রক্ত বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত আছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রী আমানউল্লাহ আমান বলেন, বন্যা শুরু হওয়ার পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান সকল সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড স্থগিত করে দিয়ে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেন। এরপর দলের স্থায়ী কমিটি থেকে শুরু করে সকল অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্র থেকে শুরু করে সকল স্তরের নেতাকর্মী জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ জনগণের পাশে না দাঁড়িয়ে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের নামে গান-বাজনা ও আলোকসজ্জা করে জনগণের শত শত কোটি টাকা নষ্ট করেছে। জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা না থাকায় তারা জনগণের পাশে দাঁড়ায়নি। অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারে করে সিলেটে ঘুরে গেছেন। বন্যার্তদের জন্য তারা কিছুই দেয়নি। কিন্তু আপনারা দেখেছেন বিগত দিনে বন্যার সময় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নিজে ভিজে ভিজে গিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এটাই হলো জনগণের দলের সাথে জনবিচ্ছিন্ন দলের পার্থক্য।

তিনি বলেন, সিলেটের কৃতী সন্তান ইলিয়াস আলী আজ কোথায়? এর উত্তর সরকার প্রধানের জানা আছে। ইলিয়াস আলীকে গুম করে রাখার কারণ হচ্ছে ইলিয়াস আলী জনগণের পক্ষে কথা বলতেন। এটি আওয়ামী লীগের পুরাতন স্টাইল। তারা দেশে বাকশাল কায়েম করে মানুষের বাকস্বাধীনতা হরণ করেছিল। তারা রাতের আঁধারে বিরোধীদলের ৪৫ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছিল। তাদের পাতানো নির্বাচনে কেউ যায়নি। ভোট সেন্টারে কুকুর ঘুমিয়ে ছিল। আওয়ামী লীগের স্টাইলে নির্বাচনে যাওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই। ভোটারবিহীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধিনে দেশে আর কোনো নির্বাচন হবে না। দেশে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধিনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য প্রয়োজন হলে হাজার হাজার নেতাকর্মী জীবন দেবে। ইনশাআল্লাহ সিলেটের এই পবিত্র মাটি থেকেই আওয়ামী লীগের পতন শুরু হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এনি বলেন, সরকারের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও দেশনায়ক তারেক রহমান আপনাদের পাশে আসতে পারেননি। তাদের নির্দেশেই বিএনপি আপনাদের পাশে আছে। বন্যা পরবর্তী সময়ে আপনাদের সুচিকিৎসার জন্য দেশনায়ক তারেক রহমনের নির্দেশে এবং সিলেটের কৃতী সন্তান ডা. জোবায়দা রহমানের তত্ত্বাবধানে আজ জেডআরএফ ও ড্যাব পাশে দাঁড়িয়েছে। বন্যায় আওয়ামী লীগ জনগণের পাশে দাঁড়ায়নি, কারণ তারা লুটপাটে ব্যস্ত। তাই বিএনপি দেশবাসীর প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে অতীতের মতো জনগণের পাশে রয়েছে।

ড্যাবের কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে এবং জেডআরএফ’র মনিটর ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম ও জেডআরএফ’র সদস্য ড. খায়রুল ইসলাম রুবেলের যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রী আমানউল্লাহ আমান, ড. এনামুল হক চৌধুরী, খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এনি, ড্যাবের মহাসচিব ডা. আব্দুস সালাম, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, সিলেট মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকী, ড্যাবের সহ-সভাপতি ও ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প উপ-কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. সিরাজুল ইসলাম, সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী, সিলেট মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মিফতাহ্ সিদ্দিকী, জেডআরএফ সিলেট বিভাগের মনিটর প্রকৌশলী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইকবাল, ড্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি তা. এম এ সেলিম, কোষাধ্যক্ষ ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব ডা. মেহেদী হাসান, যুগ্ম-মহাসচিব ডা. পারভেজ রেজা কাকান, ডা. শাহ মুহাম্মদ আমান উল্লাহ, ওসমানী মেডিকেল ড্যাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. শাহনেওয়াজ চৌধুরী, জেডআরএফ’র মনিটর প্রকৌশলী মো. মাহবুব আলম, সিলেট জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমদ, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহাব উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক কোহিনুর আহমদ।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা জি কে গৌছ ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী।

ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের অর্ধশতাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিনব্যাপী রোগীদের বিনামূল্যে ব্যবস্থাপত্র ও বিনামূল্যে ওষুধ প্রদান করেন।