দুর্নীতির অভিযোগে জরিমানা গুনলেন শাল্লার সেই প্রধান শিক্ষক

বিগত কয়েকবছরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক হিসাব ঠিকমতো না দিতে পারায় ও বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িত থাকার দায়ে ৮৫ হাজার টাকা জরিমানা গুনলেন বহুল আলোচিত শ্যামসুন্দর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নীহার রঞ্জন চৌধুরী।

গত ৩ অক্টোবর ধার্য্য করা জরিমানার ৮৫ হাজার টাকা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।

এলাকাবাসী ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে জানা যায়, শ্যামসুন্দর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নীহার রঞ্জন চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে। তার অনিয়ম ও দুর্নীতিতে বিদ্যালয়ের অনেক ক্ষতিসাধন হয়। বিদ্যালয়ের বিগত নিয়োগ পরীক্ষায় ৯০ হাজার টাকা খরচ দেখিয়েছেন প্রধান শিক্ষক, প্রকৃতপক্ষে এতো টাকা খরচ হয়নি বলে জানান বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি। এছাড়াও বিগত কয়েক বছরের বিদ্যালয়ের আয়ব্যয়ের হিসাব দিতে ব্যর্থ হন নীহার রঞ্জন চৌধুরী।

বিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি হিসাবে নয়-ছয়ের প্রমাণ পায় বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি। এ কারণে নীহার রঞ্জন চৌধুরীকে ৩ লক্ষ টাকা জরিমানা করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। পরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, এলাকার মুরব্বি ও বয়োজ্যেষ্ঠদের মধ্যস্থতায় ৮৫ হাজার টাকা জরিমানা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ও এলাকাবাসীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন নীহার রঞ্জন চৌধুরী। তারা জানান, মানবিক দিক বিবেচনা করে ৮৫ হাজার টাকা জরিমানার মাধ্যমে ওই প্রধান শিক্ষককে ক্ষমা করা হয়েছে।

এবিষয়ে জানতে চাইলে শ্যামসুন্দর উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি পলাশ রঞ্জন দাস বলেন, বোর্ড বসেই ৮৫ হাজার টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, তাকে (প্রধান শিক্ষককে) প্রথমে ৩ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল কিন্তু মানবিক দিক বিবেচনা করে ৮৫ হাজার টাকা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে ৮৫ হাজার টাকা নগদ দেননি, ইউপি চেয়ারম্যান টাকা আদায়ের দায়িত্ব নিয়েছেন।

এব্যাপারে নানা অভিযোগে অভিযুক্ত শ্যামসুন্দর স্কুলের প্রধান শিক্ষক নীহার রঞ্জুর চৌধুরীর সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও কোন সাড়া না পাওয়ায় তার কোন বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

প্রসঙ্গত, সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার শ্যামসুন্দর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতি নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে সিলেট ভয়েস। এরপর থেকেই মূলত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় স্কুল পরিচালনা কমিটি।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২ আগস্ট চারটি পদে স্কুলে নিয়োগ পরিক্ষা নেওয়া হয়। তবে নজিরবিহীন দুর্নীতির দায়ে পরিক্ষার ১৮ দিনের মাথায়ই বির্তকিত নিয়োগটি বাতিল করতে বাধ্য হন বিদ্যালয় পরিচালনা ও নিয়োগ কমিটি। পরীক্ষার পরের দিনই নিয়োগে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণাদিসহ অভিযোগ তুলে বিশাল মানববন্ধন ও স্কুল ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেন এলাকাবাসী ও নিয়োগ বঞ্চিত মেধাবী শিক্ষার্থীরা।

অবশেষে এলাকাবাসী ও ছাত্রছাত্রীদের তোপের মুখে পড়ে এই নিয়োগ বাতিল করা হয়। তবে অবৈধ ও বিতর্কিত নিয়োগ দুর্নীতিতে প্রধান শিক্ষক নীহার রঞ্জন চৌধুরী আর্থিক লেনদেনে সরাসরি জড়িত থাকার বেশকিছু প্রামাণ পাওয়া গেছে।