হিন্দু শাস্ত্রমতে মহানবমী বা দুর্গা নবমী হল আসুরিক শক্তি বধে বিজয়ের দিন। শ্রী শ্রী চণ্ডী থেকে জানা যায়, দুর্গা রুদ্ররূপ (মা কালী) ধারণ করে মহিষাসুর এবং তাঁর তিন যোদ্ধা চণ্ড, মুণ্ড এবং রক্তবিজকে হত্যা করেন।
নবমী তিথি শুরুই হয় সন্ধিপূজা দিয়ে। সন্ধিপূজা হয় অষ্টমী তিথির শেষ ২৪ মিনিট ও নবমীর সূচনার প্রথম ২৪ মিনিট জুড়ে। মূলত দেবী চামুন্ডার পূজা হয় এই সময়ে। একশো আটটি মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে ও একশ আটটি পদ্মফুল নিবেদন করা হয় দেবীর চরণে। আর ঠিক এই কারণে পূজার মন্ত্রেও সেই বিশেষত্ব উল্লেখ করা হয়েছে ।
নবমীর বিশেষত্ব যদি কিছু থাকে তা হল হোম-যজ্ঞ অনুষ্ঠানের মধ্যে। নবমীতেই মূলত হোম হয়ে থাকে, ব্যতিক্রমী নিয়মও থাকতে পারে। মূলত আটাশটা বা একশো আটটা নিখুঁত বেলপাতা লাগে। বালি দিয়ে যজ্ঞের মঞ্চ বানিয়ে বেলকাঠ ঠিকভাবে নিয়ম মতো সাজিয়ে পাটকাঠি দিয়ে আগুন ধরিয়ে ঘি’তে চুবিয়ে বেলপাতাগুলো নিবেদন করা হয়। তারপর সবার শেষে একটি কলা চেলীতে বেঁধে পান নিয়ে সেটা ঘি’তে চুবিয়ে পূর্ণাহুতি দেওয়া হয়। তারপর তার মধ্যে দই দেওয়া হয় ও দুধ দিয়ে আগুন নেভানো হয়।
অন্যদিকে, নবরাত্রির নবমীতে দুর্গার নয়টি রূপ হিসেবে মেয়েদের পূজা করে খাওয়ানোর রীতিও রয়েছে। হিন্দু ধর্মে দুর্গা নবমীর অনেক গুরুত্ব রয়েছে। মহা নবরাত্রিতে দেবী দুর্গার আরাধনার অনেক গুরুত্ব রয়েছে। যদিও সারা বছর ধরে যে উৎসবের জন্য অপেক্ষা করা হয়, তার বিদায় ঘণ্টা বাজিয়ে দেয় এই নবমী নিশি। তাই নবমী নিশিকে সবাই ধরে রাখতে আকুতি জানায়। বাজতে থাকে একটাই সুর- “ওরে নবমী-নিশি, না হইও রে অবসান”।
এর আগে মহাষষ্ঠী পূজার মধ্যদিয়ে শনিবার শুরু হয় পাঁচ দিনব্যাপী সার্বজনীন শারদীয় দুর্গোৎসব। বিজয়া দশমীতে দেবী বিসর্জনের মধ্যদিয়ে আগামী ৫ অক্টোবর দুর্গোৎসব শেষ হবে।
সনাতনী শাস্ত্র অনুযায়ী আরও জানা যায়, এবার দেবীদুর্গা জগতের মঙ্গল কামনায় গজে (হাতি) চড়ে মর্ত্যলোকে (পৃথিবী) এসেছেন। এতে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঝড় বৃষ্টি হবে এবং শস্য ও ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। অন্যদিকে স্বর্গে বিদায় নেবেন নৌকায় চড়ে। যার ফলে জগতের কল্যাণ সাধিত হবে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, এবার সারাদেশে ৩২ হাজার ১৬৮টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপন করছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। এসব মণ্ডপে শারদীয় উৎসব নির্বিঘ্নে উদযাপন করার জন্য প্রশাসনের পাশাপাশি প্রতিটি পূজা উদযাপন কমিটিও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে। মণ্ডপে মণ্ডপে লাগানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা যায়, এ বছরের শারদীয় দুর্গোৎসব শান্তিপূর্ণভাবে যেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা উদযাপন করতে পারেন সেজন্য কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সারাদেশের মণ্ডপে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য র্যাব ও পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকছে। এছাড়া প্রতিটি মণ্ডপে পূজার চলাকালীন আনসার সদস্য মোতায়েন রয়েছেন নিরাপত্তার কাজে।