সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায় মাত্র ২ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি দুই বছরেও। কাজে বিলম্ব ছাড়াও নিম্নমানের ইট, কংক্রিট ও টিলার মাটি দিয়ে সড়ক নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এতে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা।
মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) সরেজমিন উপজেলার পশ্চিম আমুড়া ইউনিয়নের চান্দের দোকান হইতে আমনিয়া বাজার পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ কাজ দেখতে গেলে স্থানীয়রা এমন অভিযোগ করেন।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, গোলাপগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম আমুড়া ইউনিয়নের অন্তর্গত চান্দের দোকান হইতে আমনিয়া বাজার পর্যন্ত ২ কিলোমিটার সড়কের কাজে বরাদ্দ ৯০ লাখ টাকা। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে খানাখন্দে ভরা সড়কটির কাজ শুরু হয়েছিলো দুই বছর আগে। কাজ পান এলজিইডির ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মা এন্টারপ্রাইজ। তবে অদৃশ্য কারণে ২ বছরেও ওই সড়কের কাজ শেষ হচ্ছেনা।
স্থানীয়রা জানান, কিছুদিন পর পর কাজ শুরু করে আবার হঠাৎ বন্ধ করে দেন ঠিকাদার। আবার নির্মাণ কাজেও আছে নানা অনিয়ম।নিম্নমানের ইট, কংক্রিট ও টিলার মাটি ব্যভহার করা হয় রাস্তার নির্মাণ কাজে। এসব নিয়ে কথা বলতে গেলে কাজ বন্ধ করে চলে যাওয়ার হুমকি দেন ঠিকাদার। শুধু তাই নয়, এরপর সংসদ সদস্য বললেও আর কাজ করবেন না বলে শাসান ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন।
স্থানীয় বাসিন্দা কাইয়ুম আহমদ বলেন, এক পাশে ৩ নাম্বার ইট ও লাল মাটি দিয়ে সড়কের কাজ হচ্ছে। অন্য পাশের অবস্থা বেহাল। এ সড়কে গাড়ি চলাচল করতে পারেনা। বেশির ভাগ কষ্ট হয় রোগী নিয়ে যেতে।
সোহেদ আহমদ নামে এক যুবক বলেন, ঠিকাদারের লোকজন এসে ৭/৮ দিন কাজ করার পর আবার ফেলে চলে যায়। দীর্ঘদিন ধরে কোন অদৃশ্য কারণে সড়কের কাজ শেষ হচ্ছেনা। কোন সিন্ডিকেটের কারণে সরকারের উন্নয়নের টাকা মেরে খাচ্ছে। রাতের আঁধারে সড়কের মধ্যে টিলার মাটি ব্যবহার করা হয়েছে। উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারের কাছে অভিযোগ দিলে তিনি বলেন এটা এভাবেই হয়। কোন সমস্যা নাই।
এবিষয়ে বক্তব্য জানতে মা এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদারকে কল করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে পরে কথা বলছি বলে ফোন রেখে দেন। পরবর্তীতে বার বার কল করেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
তবে এ ব্যাপারে অবগত নয় বলে জানান স্থানীয় চেয়ারম্যান সৈয়দ হাসিন আহমদ মিন্টু। তিনি বলেন, নিম্নমানের কাজ করলে আমরা আপত্তি দেব এবং ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করব।
তবে উপজেলা প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসানের সাথে কথা বললে তিনি ঠিকাদারের পক্ষেই সাফাই গান। তিনি বলেন, এটা বহু আগের কাজ। ঠিকাদার কাজ করবে না, জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। ঠিকাদারকে ধরে এনে অনেক হাতে-পায়ে ধরে বলে বলে কাজ করাতে হয়। এখন কাজটা বতিল করে দিতে পারি। ঠিকাদার এখন কাজটা করতে আসছে। ঠিকাদার যেটুুকু কাজ করছে যথেষ্ট সুন্দরভাবে করছে। কিন্তু মানুষের না জেনে না বুঝে অভিযোগ দেয়। অভিযোগ দিলে বা ঠিকাদারকে ডিস্টার্ব দিলে ঠিকাদার আবারও কাজ ফেলে চলে যাবে। এটাই হয় ঘটনাটা, তাই ঘটে। ঠিকাদারকে বলা হচ্ছে, কাজটা তুমি মোটামুটি শেষ করো, না হলে তোমার জরিমানা হবে।
অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসান বলেন, আমি পরীক্ষা করে দেখছি। সাইট পরিদর্শন করেছি। কাজ শেষে উপরের লেয়ারে সম্পাদিত কাজ যেন গাড়ির চাকায় যেন উঠে না যায় সেজন্য আমরা একটি লেয়ারে বালু ছিটিয়ে দেই। আবার এটা যখন কয়েকদিন পরে গাড়ি চলে লেয়ারটা শক্ত হয়ে যাবে, বসে যাবে সুন্দর মত, তারপর আমরা এগুলো পরিষ্কার করে প্রাইম কোট দিয়ে তারপর কার্পেটিং করি। অভিযোগ জনগণ জনগণের বোঝ দিয়ে বলছে। কিন্তু ওখানে কোন সমস্যা নেই। কাজ সুন্দর হচ্ছে। আর কয়েকদিন পরে আমরা পরিষ্কার করে কার্পেটিং করবো।