দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা অভ্যর্থনা

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লিতে পৌঁছেন। প্রধানমন্ত্রীকে পালাম বিমানবন্দরে লাল গালিচা অভ্যর্থনা জানানো হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানিয়েছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি চার্টার্ড ফ্লাইট আজ স্থানীয় সকাল সময় ১১টা ৪০ মিনিটে নয়াদিল্লির পালাম বিমানবন্দরে অবতরণ করে।’

সেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ভারতের রেল ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী দর্শনা বিক্রম এবং ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুহাম্মদ ইমরান অভ্যর্থনা জানান।

শেখ হাসিনার সম্মানে বিমানবন্দরে লাল গালিচা বিছানোর পাশাপাশি ৬-৭ সদস্যের একটি সাংস্কৃতিক দল স্বাগত নৃত্য ও বাদ্যযন্ত্র পরিবেশন করে।

এর আগে সকাল ১০টা ১৭ মিনিটে তার ফ্লাইট ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যায়।

ইউক্রেন সংকট, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা এবং চলমান কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে এই সফরকে তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ, দুই দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশী দেশ চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে সহযোগিতা বাড়াতে চায়।

হায়দ্রাবাদ হাউসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকে নিরাপত্তা সহযোগিতা, বিনিয়োগ, বর্ধিত বাণিজ্য সম্পর্ক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সহযোগিতা, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, মাদক চোরাচালান ও মানবপাচার রোধ সংক্রান্ত বিষয়গুলো অগ্রাধিকার পাবে।

এদিকে আজ বিকালে রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শ্রদ্ধা জানানোর কথা রয়েছে। দিল্লিতে নিজামুদ্দিন আউলিয়ার দরগাহও পরিদর্শন করবেন তিনি। আজই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের দ্বিতীয় দিনে ৬ সেপ্টেম্বর হায়দ্রাবাদ হাউজে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা এবং একান্ত বৈঠক করার কথা রয়েছে। সেখানে নরেন্দ্র মোদি তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভ্যর্থনা জানাবেন এবং তাকে আনুষ্ঠানিক গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে।

দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পর, দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং পরে একটি প্রেস বিবৃতি জারি করা হবে। শেখ হাসিনা পরে তার সম্মানে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেবেন।

সেদিন শেখ হাসিনা ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জগদীপ ধনখারের সঙ্গে পৃথক সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন বলেও আশা করা হচ্ছে। একই দিনে ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তার দেখা করার কথা রয়েছে।

সফরের তৃতীয় দিনে (৭ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পৃথকভাবে সাক্ষাৎ করবেন ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের উন্নয়নমন্ত্রী জি কিষাণ রেড্ডি এবং নোবেল বিজয়ী কৈলাশ সত্যার্থী। সেদিন ভারতের শীর্ষ শিল্প গ্রুপ আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানিরও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে।

একই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশটির শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ বা গুরুতর আহত ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর অফিসারদের বংশধরদের ‘মুজিব বৃত্তি’ প্রদানের একটি অনুষ্ঠানে ভাষণ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

আগামী ৮ সেপ্টেম্বর চার দিনের সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে। তবে তার আগে তিনি দিল্লি থেকে রাজস্থানে যাবেন। সেখানে খাজা গরীব নওয়াজ দরগাহ শরীফ ও আজমির (আজমির শরীফ দরগাহ) পরিদর্শন করবেন।

কোভিড-১৯ মহামারীর প্রাদুর্ভাবের আগে ২০১৯ সালে শেষবার সফর করার পর থেকে তিন বছর পর ভারত সফর করছেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী একটি উচ্চ-পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন যার মধ্যে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, সচিব এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রয়েছেন। খবর বাসস।