দিরাই-শাল্লা মহাসড়ক একনেকে অনুমোদন, উচ্ছ্বসিত হাওরবাসী

স্বাধীনতার ৫১ বছর পর সুনামগঞ্জ জেলার হাওরবাসীর বহুল প্রত্যাশিত দিরাই-শাল্লা মহাসড়ক (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) একনেকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রয়াত জাতীয় নেতা বাবু সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের হাতে শুরু সুনামগঞ্জ-দিরাই -শাল্লা-আজমিরীগঞ্জ-বানিয়াচং- হবিগঞ্জ- ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের চলমান কাজের মদনপুর- দিরাই -শাল্লা অংশের প্রকল্প মঙ্গলবার একনেক বৈঠকে অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দিরাই-শাল্লার সংসদ সদস্য ড. জয়া সেন গুপ্তা।

হাওরবাসীর পক্ষ থেকে অভিনন্দন, ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, হাওর এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের কষ্ট লাঘবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অতীতের মত হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।

স্বপ্নের বাস্তবায়ন হতে চলছে হাওরবাসীর উল্লেখ করে ড. জয়া সেন গুপ্তা বলেন, আঞ্চলিক মহাসড়কটি নিঃসন্দেহে আমাদের এলাকার দুই উপজেলার যোগাযোগের অন্যতম সড়ক। এটি শুধু অত্র এলাকায় নয়, এ সড়কটি বাস্তবায়িত হলে নেত্রকোনার খালিয়াজুড়ি, হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলাকেও সংযুক্ত করবে।

তিনি বলেন, আমি দিরাই-শাল্লাবাসীর আশীর্বাদে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর থেকেই এই সড়কটিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাই।

স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষিত দিরাই-শাল্লা সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত না হওয়ায় হাওর–অধ্যুষিত সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার যোগাযোগ ক্ষেত্রে অনুন্নত ও দুর্গম এলাকা হিসেবে খ্যাত ছিল। সুনামগঞ্জ থেকে দিরাই উপজেলা পর্যন্ত সরাসরি সড়ক যোগাযোগ থাকলেও দিরাই থেকে শাল্লার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়নি। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়াত নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের চেষ্টায় ২০১১ সালে দিরাই-শাল্লা ১৯ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের একটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু এ প্রকল্পের কিছু কাজ হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফলতিতে সেই কাজ টেকসই হয়নি। অনেক সেতু ও কালভার্টের সংযোগ সড়ক সমাপ্ত করা হয়নি। বর্ষায় হাওরের ঢেউয়ে কোথাও কোথাও সড়কের মাটি ভেসে গেছে। ফলে সড়ক যোগাযোগ আর পূর্ণতা পায়নি।

বর্ষায় নৌকা আর হেমন্তে দিরাই উপজেলা থেকে পায়ে হেঁটে বা ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে শাল্লায় যাতায়াত করা লোকজনের চরম ভোগান্তির নাম শাল্লা উপজেলা। এলাকার বর্তমান সাংসদ জয়া সেনগুপ্ত এ সড়ক নির্মাণের বিষয়ে একাধিকবার জাতীয় সংসদে কথা বলেন। জয়া সেনগুপ্তার প্রচেষ্টায় এ সড়ক নির্মাণের জন্য নতুন প্রকল্প নেওয়া হয়।

২০১১ সালে এ সড়কের কাজ শুরু হলেও ঠিকাদার এবং সওজ কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে জলে যায় বরাদ্দের ১১৯ কোটি টাকা।

জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী’র প্রতিশ্রুত এই প্রকল্পে ২০১০ সালের শেষের দিকেই বরাদ্দ হয় ১১৯ কোটি টাকা। ২০১১ সালে দরপত্র প্রক্রিয়া শেষে সড়কে কাজ শুরু হয়। তবে সড়কের কাজ শেষ হতে না হতেই অনেক স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। সড়কের লোপ ঠিকভাবে না হওয়ায় বেশির ভাগ অংশ ভেঙ্গে যায়। হাওরের ঢেউ থেকে সড়ক রক্ষা করার জন্য দেয়া বলক অনেক স্থানেই ছুটে যায়। সড়কের ছোট ছোট ৩টি সেতুতে অ্যাপ্রোচ সড়ক নেই। ১৭টি কালভার্ট’র বেশির ভাগেরই অ্যাপ্রোচে মাটি নেই।

স্থানীয়রা বলছেন, যেখানে সেতু বা কালভার্ট প্রয়োজন সেখানে হয়নি, আবার যেখানে প্রয়োজন নেই, সেখানে সেতু কালভার্ট হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বছর এই সড়কটির প্রকল্প প্রস্তাবনা সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। অভ্যন্তরীণ যাচাই-বাছাই কমিটিতে সড়ক নির্মাণের জন্য ৫৫১ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাবনা নির্ধারণ করা হয়। পরে ডিজাইন সেকশন থেকে সরজমিন পরিদর্শন করে প্রকল্প প্রস্তাবনা ৮৫৭ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। প্রকল্প ব্যয় অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. জাকির হোসেনের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ দল গত ১৭ই মে সরজমিন সড়কটি আবারও পরিদর্শন করেন। এরপর ১৪ জুন (মঙ্গলবার) দিরাই-শাল্লাবাসীর স্বপ্নের এই সড়কটি একনেকে অনুমোদন করা হয়।