শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) বেগম সিরাজুন্নেসা হলের প্রভোস্টের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলরত শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশের হামলায় গুরুতর আহত সজল কুণ্ড ফের প্ল্যাকার্ড হাতে রাস্তায় নেমেছেন। ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার রুটি রুজি বন্ধ করে পেটে লাথি মেরেছে’ এমন অভিযোগ এনে ফের অবস্থান কর্মসূচিতে নেমেছেন তিনি।
রবিবার দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনের রাস্তায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তিনি। এসময় ‘পেটে লাথি মারা বন্ধ হোক, সহানুভূতি নয়, অধিকার চাই, স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে চাই’ এমন লিখা সংবলিত প্লেকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তিনি। একই সাথে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।
সজলের দাবি, ‘গত ১৬ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায় পুলিশ। এ সময় তার শরীরে প্রায় ৮৩টি স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়। তখন সজলের শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে শিক্ষার্থীরা দুটি দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু একটি দাবিও এখনো মানা হয়নি। এছাড়া হামলার পরের দিন ১৭ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ‘আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা ব্যয়ভার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বহন করবে।’ কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে একদিন এম্বুলেন্স সেবা ছাড়া আরো কোনো সহযোগিতা পান নি তিনি। উল্টো তিনি যে ক্যাফেটেরিয়া পরিচালনা করতেন সেটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং এখনো বন্ধ রয়েছে।’ ফলে কষ্টে দিন পার করছেন তিনি। এছাড়া ওই ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে অজ্ঞাত ৩০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা হয়েছিল। যা পরবর্তীতে উঠিয়ে নেওয়ার আশ্বাস দিলেও এখনো প্রত্যাহার করা হয়নি বলে জানান তিনি। সজল বলেন, ‘মামলাগুলো না উঠালে যেকোনো সময় যে কাউকে গ্রেফতার করতে পারে পুলিশ।’ এছাড়া সজলকে চাকুরীর ব্যবস্থা করে দেয়ার আশ্বাস দিলেও সেটিও এখনো কার্যকর হয় নি বলে জানান তিনি।
জানা যায়, সজল বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ২০১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থী ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে জীবনযাপনের জন্য কখনো টিউশনি, কখনো আবাসিক হলে হলে মিষ্টি ও চা বিক্রি করেছে। সর্বশেষ গত ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনের ক্যাফেটেরিয়া পরিচালনার দায়িত্ব পান এবং পরে গত ২ জানুয়ারি থেকে ক্যাফেটেরিয়া পরিচালনা করছিলেন তিনি।
সজলের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ১৬ জানুয়ারি থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ক্যাফেটেরিয়া বন্ধ থাকে। পরে ২৪ তারিখ থেকে তিনি ফের ক্যাফেটেয়িা চালু করেন। তবে গত ঈদুল ফিতরের ছুটিতে তাঁর কাছ থেকে চাবি নিয়ে নেয় প্রশাসন। এরপর প্রশাসনের কাছে বারবার ধরনা দিলেও চাবি পান নি তিনি। বরং ‘দর বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে’ এমন কথা বলে বন্ধ রাখা হয়েছে ক্যাফেটেরিয়া।
সজল বলেন, ‘প্রশাসন ক্যাফেটেরিয়া বন্ধ রেখে আমার পেটে লাথি মারছে। আমি ক্যাফেটেরিয়ার দায়িত্ব ফিরে পেতে চাই।’
ক্যাফেটেরিয়ার বিষয়ে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. জহিরুল ইসলালকে একাধিকবার কল দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য, গত ১৩ জানুয়ারি বেগম সিরাজুন্নেসা হলের প্রভোস্ট বিরুদ্ধে ‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগ এনে ছাত্রীরা পদত্যাগের দাবি জানায়। পরে এ ঘটনায় ১৬ জানুয়ারি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিনকে ছাত্রীরা অবরুদ্ধ করেন। উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করলে পুলিশ শিক্ষার্থীদের উপর লাঠিচার্জ, রাবার বুলেট এবং সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দিয়ে উপাচার্যকে উদ্ধার করেন। পুলিশি এই হামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৪০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। এসময় সজল কুণ্ডু গুরুতর আহত হন। পরে ওই ঘটনায় অজ্ঞাত ৩০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দেয় পুলিশ।