নবীগঞ্জ শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া শাখা বরাক নদীর দৈন্যদশা চরমে উঠেছে। এক সময় এ নদী দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। জেলেদের মাছ ধরাসহ নদীর পানি দিয়ে জমি চাষ করতেন চাষিরা। আজ অবৈধ দখল আর নদীতে ময়লা-আবর্জনা ও বর্জ্য ফেলার কারণে প্রশস্ততা কমে গিয়ে নদীটি এখন পরিত্যক্ত একটি খালে পরিণত হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে নদীর দু’কূল ছাপিয়ে বন্যার সৃষ্টি হলেও শুকনো মৌসুমে তা বিরাণ ভূমিতে পরিণত হয়। কচুরিপানার বর্জ্যে ভরপুর হয়ে শাখা বরাক হারাচ্ছে তার স্বাভাবিত চরিত্র।
১৫-২০ বছর আগেও যে নদীতে ৫শ’ মণের ওজনের নৌকা ধান, ইট, বালু নিয়ে যাতায়াত করত, সময়ের পরিক্রমায় সেই খাল দিয়ে রাস্তার ও বসতবাড়ির বৃষ্টির পানি পর্যন্ত ঠিকভাবে নিষ্কাশিত হতে পারছে না। বর্তমানে খালটি নবীগঞ্জ বাজারের ময়লা-আবর্জনা ফেলার স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। খালের উপর জমেছে ময়লার স্তূপ। যার ফলে শহরে ড্রেনের পানি নিষ্কাশিত হতে পারে না। বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি এ খাল দিয়ে বের হতে না পারায় শহরতলীর বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়ির উঠানে ও রাস্তায় সব সময় পানি লেগে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
সরজমিন দেখা যায়, নদীর উভয় পাড় দখলদারদের কবলে পড়ে প্রশস্ততা হারিয়ে ছোট খালের আকার ধারণ করেছে। বর্তমানে এই নদী পূর্ব তিমিরপুর পর্যন্ত দেখতে খালের মত। তিমিরপুরের পর থেকে কালিয়ারভাঙা পর্যন্ত নদীর অস্তিত্ব বোঝাই যায় না, এরপর আবার খালের মত কোনো রকমে টিকে আছে। অধিকাংশ স্থানেই বেদখল হয়ে যাওয়ায় নদীর চিহ্নই আর নেই। নদীর সঙ্গে যেসব খাল সংযুক্ত রয়েছে সেগুলোর অবস্থাও একেবারেই শোচনীয়। নদীটির বিভিন্ন স্থানে কচুরিপানা আটকে রয়েছে মাসের পর মাস। নদী তীরবর্তী নবীগঞ্জ বাজারের অনেক বাসার পয়ঃনিষ্কাশনের পাইপ সরাসরি নদীতে যুক্ত রয়েছে।
এ ছাড়া গবাদিপশুর বর্জ্য, হাসপাতাল-ক্লিনিকের ময়লা, মুরগির উচ্ছিষ্ট অংশসহ নানা ধরনের ময়লা প্রতিনিয়ত মিশে দূষণ হচ্ছে নদীর পানি। এতে একদিকে কচুরিপানায় সাপ, মশা ও পোকা-মাকড়ের উপদ্রব বেড়েছে, অন্যদিকে ময়লা অবর্জনায় দূষিত পানিতে মাছের আবাদ ও নৌকা চলাচল যেন দুঃস্বপ্ন। নদীপাড়ের মানুষ নদীর পানি ব্যবহার করতে পারছেন না। ফলে পরিবেশের ভারসাম্য মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
স্থানীয়রা শাখা বরাক নদীর দূষণ রোধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।