সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানাধীন নাজিরবাজারে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে মালবাহী ট্রাক ও শ্রমিক বহনকারী পিকআপের সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা ১৫ জনে গিয়ে পৌছেছে।
বৃহস্পতিবার (০৮ জুন) ভোরের দিকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরেকজন মারা যান। বাদশা (২২) নামের ওই যুবক দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের মায়েদ নুরের ছেলে।
এর আগে বুধবার (০৭ জুন) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে মর্মান্তিক এ সড়ক দুর্ঘটনাটি ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই ১১জন মারা যান।
খবর পেয়ে ফায়ারসার্ভিস ও দক্ষিণসুরমা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আহত ১৮ জনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠালে সেখানে পর্যায়ক্রমে আরও ৪ জনের মৃত্যু হয়। গুরুতর আহত বাকি ১৪ জন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন, সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের মৃত সজিব আলীর ছেলে রশিদ আলী (২৫), শান্তিগঞ্জ উপজেলার মুরাদপুর গ্রামের মৃত হারুন মিয়ার ছেলে দুলাম মিয়া (২৬), একই উপজেলার বাবনগাঁ গ্রামের মৃত ওয়াহাব আলীর ছেলে শাহিন মিয়া (৪০), দিরাই উপজেলার আলীনগর গ্রামের মৃত শিশু মিয়ার ছেলে হারিস মিয়া (৬৫), হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার হলদিউড়া গ্রামের আব্দুর রহিমের স্ত্রী আমিনা বেগম (৪৫), সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের মৃত মফিজ মিয়ার ছেলে সায়েদ নূর (৫০), শান্তিগঞ্জ উপজেলার তলেরতন গ্রামের মৃত আওলাদ উল্লার ছেলে আওলাদ হোসেন (৬০), দিরাই উপজেলার পাথারিয়া গ্রামের মৃত ছলিম উদ্দিনের ছেলে একলিম মিয়া (৫৫), গচিয়া গ্রামের বারিক উল্লার ছেলে সিজিল মিয়া (৫৫), ভাটিপাড়া গ্রামের সিরাজ মিয়ার ছেলে সৌরভ মিয়া (২৭), নেত্রকোনার ভারহাট্টা উপজেলার দশদার গ্রামের ইসলাম উদ্দিনের ছেলে আওলাদ মিয়া (৩০), সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের শমসের নুরের মেয়ে মেহের (২৪), দিরাই উপজেলার মধুপুর গ্রামের সোনা মিয়ার ছেলে দুদু মিয়া (৪০), একই গ্রামের শাহজাহানের ছেলে বাদশা (২২) ও দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের মায়েদ নুরের ছেলে বাদশা (২২)।
ঘটনার পর সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, মানুষে বুকফাটা কান্না-আর্তনাদ। যে আর্তনাদ স্বজন হারানোর। এদের কেউ হারিয়েছেন একমাত্র ছেলে, কেউ হারিয়েছেন স্বামী কিংবা স্বজনদের। একটা পরিবার নিঃশেষ হওয়ার কষ্ট-আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রাঙ্গণ। এ যেন এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য। স্বজনহারাদের এমন কান্না দেখে উপস্থিত অনেকেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেন নি।
নিহতদের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, তাদের বেশিরভাগই সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। স্বজনরা জানান, নিহত সবাই নির্মাণ শ্রমিক। দৈনিক মজুরীতে তারা বাসার ছাঁদ ঢালাইয়ের কাজ করতো। বুধবার ভোরেও তারা একটি বাসার ঢালাইকাজের জন্য সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলায় যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যেই দুর্ঘটনার শিকার হন তারা।
আরও পড়ুন : সিলেটে সড়ক দুর্ঘটনা, ভাটিপাড়ায় শোকের মাতম
ফায়ার সার্ভিস সিলেটের উপ পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান জানান, মালবাহী একটি ট্রাক সিলেটের দিকে আসার পথে বিপরিত দিক থেকে আসা একটি শ্রমিক বহনকারী একই পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন সিলেটের জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পরে জেলা প্রশাসক দুর্ঘটনায় নিহত প্রতি পরিবারকে ২০ হাজার ও আহতদের ১০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা ঘোষণা করেন।
আরও পড়ুন : সিলেটে সড়ক দুর্ঘটনা, ভাটিপাড়ায় শোকের মাতম
এছাড়া দুর্ঘটনার পর সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এসময় তিনি হাসপাতালে হতাহতদের খোঁজ খবর নেন। পরে তিনি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ২৫ হাজার টাকার অনুদান প্রদান করেন।