ত্রাণ নয়, প্রাণ বাঁচানোর আকুতি বানভাসি মানুষের

হঠাৎ করে বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় একরকম দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সিলেট অঞ্চলের বন্যাকবলিত মানুষ। বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) সন্ধ্যার হাঁটুপানি রাত হতেই রূপ নেয় কোমর পানিতে। শুক্রবার (১৭ জুন) সকালে দৃশ্যপট পাল্টে আরও ভয়াবহ রূপ নেয়। জলে ভাসা সড়ক ধরে শুধু ছিল মানুষের স্রোত। বানের জলে বসতভিটা হারিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খুঁজে ছুটছিলেন বানভাসি মানুষেরা। ত্রাণের জন্য নয়, তাদের মুখে ছিল শুধু প্রাণে বাঁচার আকুতি, আশ্রয়ের অনুরোধ। আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটে চলা মানুষের এই স্রোতই বলে দেয় পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ।

শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির এমন দৃশ্য। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গ্রামের পর গ্রাম ডুবে গেছে পানিতে। কোনটা ঘরের উঠান, কোনটা মাঠ আর কোনটা সড়ক সেটি বোঝার উপায় নেই। সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন। এমন পরিস্থিতিতে বানভাসিদের সাহায্য করার জন্যও যেতে পারছে না কেউ।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান জানান, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, সিলেট সদর ও বিশ্বনাথ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে লাখ লাখ মানুষ। এরই মধ্যে জেলা সদরের সাথে বিভিন্ন উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বেশ কয়েকটি উপজেলার অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে। জেলা প্রশাসনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধারে সহায়তা করতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা কাজ শুরু করেছেন।

এদিকে চলমান ভয়াবহ বন্যার পানি বিদ্যুৎ উপ-কেন্দ্রে প্রবেশ করায় পুরো সিলেট অন্ধকারে নিমজ্জিত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে কুমারগাঁও ও বরইকান্দিতে বিদ্যুৎ উপ-কেন্দ্রে পানি প্রবেশ করেছে। কুমারগাঁওয়ে জাতীয় গ্রিডের উপ-কেন্দ্রের মাধ্যমে পুরো সিলেটে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।

ইতোমধ্যে কুমারগাঁওয়ের ১৩২/৩৩ কেভি উপ-কেন্দ্রের সুইচ ইয়ার্ডে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। বর্তমান ধারায় পানি বৃদ্ধি হতে থাকলে অচিরেই কন্ট্রোল রুমের ভেতরে পানি প্রবেশ করবে। তখন পুরো সিলেটের বিশাল অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করতে হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বন্যা পরিস্থিতির কারণে ২৫ জুন পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া আগামী ৩ দিন বন্ধ থাকবে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সকল কার্যক্রম। ফলে এই সময়ে ওঠা-নামা করবে না কোনো ফ্লাইট।