চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সপ্তাহব্যাপী সমাবেশ শেষে হয়েছে, আগামী ৫ বছরের জন্য দেশটির ক্ষমতাসী কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে নির্বাচিত হয়েছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। যা দেশটির গণপ্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা নেতা মাও সেতুংয়ের পর চীনের সবচেয়ে শক্তিশালী শাসক হিসাবে তার স্থানকে মজবুত করবে।
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সিজিটিএন জানিয়েছে, রোববার বেইজিংয়ে গ্রেট হল অব পিপলসে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) ২০তম পলিটব্যুরা স্ট্যান্ডিং কমিটির (পিএসসি) প্রধান হয়েছেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এ বিষয়ে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। তবে চীনের ক্ষমতাসীন দলের পলিটব্যুরা স্ট্যান্ডিং কমিটিতে ব্যাপক রদবদল অনুমোদন করেছে। যেখানে দেশটির প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংসহ অনেক শীর্ষ কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন।
রোববার শি এই অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। অধিবেশনে সিপিসির ২০তম কেন্দ্রীয় কমিটির ২০৩ জন সদস্য ও ১৬৮ জন বিকল্প সদস্য উপস্থিত ছিলেন।অধিবেশনে সিপিসির কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবেও শি-র নাম ঘোষণা করা হয়। এর পাশাপাশি অধিবেশনে সিপিসি কেন্দ্রীয় কমিটির পলিটব্যুরোর সাত সদস্যের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যদেরও নির্বাচিত করা হয়। কমিটির সদস্যরা হলেন শি জিনপিং, লি ছ্যাং, চাও লে চি, ওয়াং হানিং, কাই চি, তিং শেইশাং ও লি শি। কমিটির ৭ সদস্যের মধ্যে তিনজন গতবারের সদস্য। বাকি চার নতুন সদস্য জিনপিং ঘনিষ্ঠ হিসেবেই পরিচিত।
সর্বোচ্চ ক্ষমতাশীল এই কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী লে কেকিয়াং ও উপদেষ্টা কমিটির শীর্ষকর্তা ওয়াং ইয়াং। কারণ দুজনই জিনপিংয়ের বিরোধী গোষ্ঠীর মুখ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। রাজনৈতিক মহল বলছে, এই রদবদলের পর চীনা কমিউনিস্ট পার্টির শেষ কথা হয়ে দাঁড়ালেন শি জিনপিং-ই। প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরের স্থান নেই দলে, স্পষ্ট করে সেই বার্তাই দিয়ে রাখলেন চিনের প্রেসিডেন্ট।
এদিকে, স্ট্যান্ডিং কমিটি ২৫ জন পলিটব্য়ুরো সদস্যকেও নির্বাচন করা হয়েছে। যারা জিনপিংয়ের সহযোগী হিসেবে রাষ্ট্র পরিচালনা করবে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে এবার পলিটব্যুরোয় কোনও নারী প্রতিনিধি নেই। গতবারের পলিটব্যুরোয় একজনই নারী সদস্য ছিলেন। তিনি অবসর নেয়ায় এবারের পলিটব্যুরো নারীশূন্য। যা গত ২৫ বছরের ইতিহাসে প্রথমবার।
উল্লেখ্য, সমস্ত রীতি ভেঙে আজীবন দেশ, দল ও সেনা বাহিনীর সর্বাধিনায়ক থাকার জন্য আগে থেকেই রাস্তা পরিষ্কার করে রেখেছিলেন শি জিনপিং। নিয়মঅনুসারে দু’দফার পর জিনপিংয়ের পদ ছেড়ে দেয়ার কথা। কিন্তু শি যাতে ২০২৩ সালের পরেও প্রেসিডেন্ট থাকতে পারেন। এমনকী যত দিন ইচ্ছা, তত দিনই থাকতে পারেন তার জন্য দেশের সংবিধান সংশোধনও করা হয়। পার্টির সাধারণ সম্পাদক এবং সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের চেয়ারম্যান পদেও দু’বারের বেশি থাকার ব্যবস্থা নেই চীনে। কিন্তু সেই প্রাচীর আগেই ভেঙে দিয়েছিলেন জিনপিং। চীনের সংসদে বিল পাশ করিয়ে ফেলেছিলেন ২০১৮ সালে। ৯৫ শতাংশ ভোট পড়েছিল তার পক্ষেই। পার্টি কংগ্রেসের শেষে সে প্রসঙ্গে জিনপিং বলেন, দলের ক্ষমতা আরও সুদৃঢ় করতে সংবিধানের এই সংশোধন অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিল।
সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি