তুমব্রু সীমান্তের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হতে পারে আজ

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে এক মাসের বেশি সময় ধরে প্রতিদিনই সংঘর্ষ চলছে। গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কেঁপে উঠছে সীমান্তঘেঁষা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের গ্রামগুলো। এতে আতঙ্কে দিন কাটছে ওই ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তের বাসিন্দাদের। এই পরিস্থিতিতে তাদের নিরাপত্তার বিষয়‌টি সর্বা‌ধিক গুরুত্ব দি‌চ্ছে জেলা প্রশাসন। সেখান থেকে ৩০০ পরিবারের প্রায় দেড় হাজার বাসিন্দাকে স‌রি‌য়ে নেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। এ বিষয়ে আজ সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে জানা গেছে।

সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরী‌জি বলেন, ‘আমি সীমা‌ন্ত এলাকায় যা‌চ্ছি। এখ‌নও প‌থে আছি। সেখা‌নে পৌঁছা‌নোর পর সীমান্ত এলাকার বাংলাদেশিদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে সম্ভাব্য পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হবে।’

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্যের সদস্য আনোয়ার হোসেন জানান, সীমান্তের কাঁটাতারের ৯০০ ফুটের মধ্যে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের নিরাপত্তার স্বার্থে করণীয় বিষয়ে গতকাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ আলোচনা হয়েছিল। আজ জেলা প্রশাসক এসে পৌঁছা‌লে আলোচনা সাপেক্ষে তাদের সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপা‌রে সিদ্ধান্ত হতে পারে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সালমা ফেরদৌস জানান, সীমান্ত এলাকায় প্রায় তিন শতাধিক বাংলাদেশি বসবাস করছেন। তাদের নিরাপত্তার জন্য করণীয় সম্পর্কে জনপ্রতিনিধি কাছ থেকে মতামত নি‌য়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, এক মাসের বেশি সময় ধরে রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর গোলাগুলি চলছে। এতে সীমান্তঘেঁষা বাংলাদেশিরা উদ্বিগ্ন। স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছেন না তারা। সবসময় আতঙ্কে থাকছেন। কৃষকরা মাঠে নামতে পারছেন না। পাঠের পরিবেশ হারাচ্ছে শিক্ষার্থীরা।

গত ২৮ আগস্ট বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের জিরো পয়েন্ট সংলগ্ন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম এলাকার জনবসতিতে দুটি মর্টারশেল এসে পড়ে। এতে কেউ হতাহত না হলেও সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই থেমে গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। বিস্ফোরণে কম্পিত হচ্ছে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম, তুমব্রু ও বাইশফারিসহ কয়েকটি সীমান্ত লাগোয়া গ্রাম। এতে চরম আত‌ঙ্কে দিন পার করছেন স্থানীয়রা। এর মধ্যে দুটি যুদ্ধ বিমান ও দুটি ফাইটিং হেলিকপ্টার থেকে বাংলাদেশের ভেতরে গোলা নিক্ষেপ করা হয়।

এসব ঘটনায় ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তিন বার তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আবার এ ধরনের ঘটনা ঘটলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ফোরামে যাবে বলে তখনও হুঁশিয়ারি দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। কিন্তু গত শুক্রবার মর্টারশেল ও ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে হতাহতের পর উদ্বেগ বেড়ে যায়। এ ঘটনায় এক মাসে চতুর্থবারের মতো গতকাল মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।