তীব্র গরম, তবুও বৃষ্টি চান না হাওরের কৃষকরা

খলায় চলছে ধান শুকানো। কৃষকের প্রার্থনা বৃষ্টি না হওয়ার। ছবি: সিলেট ভয়েস

বৈশাখের আগমনীর সাথে সাথে সুনামগঞ্জের বিস্তীর্ণ হাওরাঞ্চলে ধুম লাগে ধান কাটা, মাড়াই ও শুকানোর।

প্রায় সব হাওরেই ধানক্ষেতের পাশে তৈরি করা হয়েছে খলা (ধান শুকানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট স্থান)। গৃহস্থরা কাটা ধান মাড়াই করে রাখছেন খলায়। এরপরই কড়া রোদে ধান শুনিয়ে গোলায় তোলার পালা।

এ প্রক্রিয়ায় একমাত্র প্রাকৃতিক বাধা—বৃষ্টি। ভারতের মেঘালয় পাদদেশের এ অঞ্চলে বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকভাবেই বেশি আর প্রায় প্রতিবছরই আগাম বৃষ্টিপাত বান ডেকে নিয়ে আসে, তলিয়ে যায় সোনালী ফসল।

বেশ কয়েক বছর পর এবার বৃষ্টি বা বন্যা আঘাত হানেনি হাওরাঞ্চলে। বৈশাখের শুরু থেকেই কাঠফাটা গরমের মধ্যেও খুশি মনে ফসল ঘরে তুলছেন কৃষকরা।

তবে গত দুইদিনের সামান্য বৃষ্টিপাত শঙ্কা সৃষ্টি করেছে কৃষকের মনে। বৃষ্টি হলে ধান শুকানো যাবে না আর ধান না শুকিয়ে স্তুপ করে রাখলে অঙ্কুরিত হয়ে যাবে বীজ, এতে নষ্ট হয় যাবে চাল।

এরই মধ্যে মে মাসের ৩ তারিখ থেকে মেঘালয় ও সিলেট অঞ্চলে ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরও ৩মের মধ্যে দ্রুত ধান কাটার আহান জানিয়েছে।

তবে পূর্বাভাস যাই হোক, আগামী ১০-১৫ দিন তীব্র রোদ কামনা করছেন কৃষকরা যাতে ধান শুকিয়ে নির্বিঘ্নে গোলায় তুলতে পারেন তারা।

তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওরের গৃহস্থ আওয়াল মিয়া জানান, ‘এ বছর ধানের ফলন খুব ভাল হয়েছে। আবহাওয়াও অনুকূলে ছিল। তবে গত দুই দিন দিনের বেলা ও রাতে কিছু বৃষ্টি হলেও আজকে আবার বৃষ্টি হয় নি। তাই খলায় ভাল করে ধান শুকাতে পারছি। মনেপ্রাণে চাই আরও কয়েকদিন যদি বৃষ্টি না হয় তা হলে আমরা ধানগুলো শুকিয়ে ভালভাবে ঘরে তুলতে পারব।‘

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খড়চার হাওরের কৃষক মনফর আলী বলেন, ‘আমরা এবার অনেক খুশি, ধানের ফলন খুব ভাল হয়েছে। অন্যান্যবার বন্যা বৃষ্টির চোখ রাঙানি থাকতো, কিন্ত এবার কিছুই নেই। আবহাওয়া আমাদের পক্ষে। এখন গরম লাগছে কিন্ত আমাদের ধানের জন্য ভাল। আরও কয়েকটা দিন এভাবে গেলে আমরা ধান শুকিয়ে ফেলতে পারবও। এখন গরম লাগলেও বৃষ্টি চাই না আমরা।‘

সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জেলার ছোট-বড় ১৩৭টি হাওরে এবার ২ লাখ ২৩ হাজার ৪০৭ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ১৩ লাখ ৭০ হাজার ২০০ মেট্রিক টন যার বাজারমূল্য ৪৩৮০ কোটি টাকা।

সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানান, ‘প্রায় ৭৩ শতাংশ ধান কাটা শেষ হয়ে গেছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে হাওরের ধান কাটা মোটামুটি শেষ হয়ে যাবে। ধান কাটায় কৃষকদের সকল ধরণের ধরনের সহযোগিতা করছে কৃষি বিভাগ।‘