তিস্তার পানি না দিলে ইলিশও দেবো না : শেখ হাসিনা

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বয়ে যাওয়া তিস্তা নদীর পানি ঢাকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক এই নদীর পানির ন্যায্য পাওনা নিশ্চিতে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা চালালেও নানা কারণেই এই পানি ভাগাভাগি চুক্তি বিলম্বিত হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে ভারত সফরে থাকা অবস্থায়ই তিস্তার পানি নিয়ে ভারতকে ‘বার্তা’ দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আপনি (ভারত) আমাদের পর্যাপ্ত পানি দিচ্ছেন না, তাই আমি এখনই আপনাকে ইলিশ মাছ দিতে পারছি না।’

মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিতে ব্যর্থতার জন্য ভারত সরকারকে কৌতুকপূর্ণভাবে তিরস্কার করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার তিনি বলেছেন, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে মতপার্থক্যের কারণে ২০১১ সাল থেকে আটকে থাকা এই চুক্তি দেশটিতে (ভারত) ইলিশ মাছ সরবরাহও আটকে রেখেছে।

সোমবার দিল্লিতে একটি কূটনৈতিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিস্তা ও অন্যান্য নদীতে পানির নিম্ন প্রবাহের বিষয়টি সামনে এনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাসতে হাসতে বলেন, ‘আপনি (ভারত) আমাদের পর্যাপ্ত পানি দিচ্ছেন না, তাই আমি এখনই আপনাকে ইলিশ মাছ দিতে পারছি না। কিন্তু আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আসন্ন পূজা মৌসুমের মধ্যে (অক্টোবরে) ইলিশ সরবরাহ করতে পারবো।’

দ্য হিন্দু জানিয়েছে, মঙ্গলবার ভারত ও বাংলাদেশ— উভয় দেশের মধ্যকার অভিন্ন নদীগুলোর যৌথ ব্যবস্থাপনার বিষয়ে কিছু চুক্তি স্বাক্ষর এবং পানি বণ্টনে সহযোগিতার বিভিন্ন উপায় নিয়ে আলোচনা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ভারত ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক এজেন্ডায় পানি ভাগাভাগির বিষয়টি কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটি বিবেচনায় সোমবারের এই কূটনৈতিক সংবর্ধনার আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ হাইকমিশন। দিল্লিতে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে মন্ত্রী, কূটনীতিক এবং সামরিক কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

দ্য হিন্দু বলছে, বিশেষ সংবর্ধনার জন্য আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে নৈশভোজে প্রতিটি টেবিলের নামকরণ বাংলাদেশের নদীর নামে করা হয়েছিল। একটি টেবিলের নাম তিস্তা ছাড়াও মেঘনা, পদ্মা, খোয়াই ও কুশিয়ারা নামকরণও করা হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকের আশা করেছিলেন, কিন্তু তা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি (মমতা) আমার বোনের মতো, আমি যখনই চাই তার সঙ্গে দেখা করতে পারি। আমাদের সবসময় ভালো সম্পর্ক ছিল।’

সাংবাদিকদের বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতীতের সফরের মতো এবারও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পরে জানতে পারেন যে, মমতা দিল্লিতে আসছেন না। তার ভাষায়, ‘মমতা আমার বোনের মতো এবং আমরা যেকোনও সময় দেখা করতে পারি। কিছু সম্পর্ক ব্যক্তিগত, রাজনীতির বাইরে। ঠিক গান্ধীদের সাথে আমার সম্পর্কের মতো।’

মূলত ভারতের শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিক এবং দেশটির প্রধান বিরোধী দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা এই কথা বলেন। ইতালিতে নিজের মায়ের মৃত্যুর কারণে সোনিয়া গান্ধী এখন ভারতের বাইরে অবস্থান করছেন।

এছাড়া সফরের প্রথম দিন সোমবার রাজধানী নয়াদিল্লির নিজামুদ্দিন দরগাহ ও মাজারে গিয়ে কার্যত আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, নিজের পিতার হত্যার পরে দিল্লিতে নির্বাসনে থাকার সময় তিনি প্রথম এই দরগাহ পরিদর্শন করেছিলেন।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার এই সফর সম্পর্কে একটি অস্বাভাবিক অনুভূতি ছিল, এটি খুব আধ্যাত্মিক জায়গা। আমি তখন গিয়ে আমার বাবার (বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের) ডায়েরি পড়ি এবং জানতে পারি, তিনি ১৯৪৬ সালের ৯ এপ্রিল নিজামুদ্দিনের দরগায় এসেছিলেন।’

আগামী বৃহস্পতিবার ভারতের রাজস্থান রাজ্যের আজমীর শরীফ দরগাহ পরিদর্শন করবেন শেখ হাসিনা।