‘তিন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা’য় জিম্মি কুলাউড়া হাসপাতাল!

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলা ৫০ শয্যা হাসপাতাল যেন অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার এক দুর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। এমনকি যেন স্বঘোষিত দুই কর্মকর্তাসহ তিনজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তার হাসপাতালও বটে। হাসপাতালে কর্মরত তিন কর্মকর্তার ক্ষমতার অপব্যবহারে অতিষ্ট সেবা গ্রহিতরা। প্রতিদিন উপজেলার তেরোটি ইউনিয়ন থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগিরা পোহাতে হচ্ছে না দুর্ভোগ। হাসপাতালের আবাসিক অফিসার ও স্যানিটারি ইন্সপেক্টর দু’জনই অঘোষিত উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তায় পরিণত হয়েছেন।

এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মন্ত্রীর ভাগ্না হওয়ায় প্রশাসনিক কাজে তার দেখা পাওয়াটা দুষ্কর।

জানা যায়, ২০১০ সালে কুলাউড়া হাসপাতালে যোগদান করা আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. জাকির হোসেনের বাড়ি একই উপজেলায় এবং এক যুগের বেশি সময় একই হাসপাতালে থাকায় রোগির ঝুঁকটা বেশি। তাই এটাকে তিনি সেবায় নয় রূপ দিয়েছেন ব্যবসায়। বিকেল ৪টা থেকে রাত ১২ পর্যন্ত চেম্বারে ক্লান্তিহীন রোগির সেবা দিলেও হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দিতে তাঁর অনিহা। সারাদিন বসে থাকেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার অফিসে। যেন তিনিই অঘোষিত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। ওয়ার্ডে অন্তত ২ বার ভিজিট করার কথা থাকলেও তিনি ভুলেও সেদিকে ফিরেও তাকান না।

স্যানিটারি ইন্সপেক্টার জসিম উদ্দিন। হাসপাতালে তার কোন দায়িত্ব না থাকলেও তিনিও বসে থাকেন বড় কর্তার অফিসে। শুধু বসেনই না তিনি তদারকি করেন ওই অফিসের সকল কাজ কর্মের। তিনিও যেন আরেক অঘোষিত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।

২০২১ সালের মার্র্চ মাসে কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফেরদৌস আক্তার। তাঁর বাড়ি পার্শ্ববর্তী বড়লেখা উপজেলায়। কুলাউড়ায় তিনি পরিচয় দেন বন পবিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিনের ভাগ্না। তিনি যোগদানের পর থেকে মুলত কুলাউড়া হাসপাতালে অব্যবস্থাপনা চরম আকার ধারণ করে। হাসপাতালের করণিক ও অফিস সহকারিরা নানা অজুহাতে কর্মকর্তা কর্মচারীদের কাছ থেকে অনেকটা জিম্মি করে আদায় করেন টাকা।

সকাল ৯টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত হাসপাতালের কার্যক্রম চলার নিয়ম থাকলেও শুরু হয় অনিয়মে। সকাল ১০টায় আউটডোরে টিকিট বিক্রি শুরু হয়। ডাক্তাররা ইচ্ছামত আসেন আর চলেও যান দুপুর দেড়টার আগে। জরুরী বিভাগে কোন ডাক্তার দায়িত্ব পালন করেন না। সেকমো এবং ব্রাদার দিয়েই চালানো হয় জরুরি বিভাগ। জরুরি বিভাগে কোন রোগি আসলেই তাকে রেফার্ড করা হয়।

সরেজমিন হাসপাতালে গেলে নিচতলার টয়লেট থেকে আসা দুর্গন্ধে স্বাগত জানায় সেবা নিতে আসা রোগিদের। ২য় তলার ওয়ার্ডেও বাথরুমের অবস্থা আরও করুণ। মাসেও এগুলো পরিষ্কার করা হয় কিনা সন্দেহ। রোগীদের অভিযোগের কোন শেষ নেই।

জয়চন্ডী ইউনিয়নের রংগীরকুল গ্রামের আব্দুল আহাদ ও রামপাশা গ্রামের মামুনুর রহমান অভিযোগ করেন, হাসপাতালের তারা মহিলা রোগী নিয়ে আসেন ডা. মমতাজ খলিল মুন্নির কাছে। তিনি তাদের সাথে খারাপ আচরণ করেন। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেন কিন্তু তিনি কোন প্রতিকার নেননি।

উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফাতেহা ফেরদৌস চৌধুরী অভিযোগ করেন, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বেলা ৩টায় তাঁর দেবর মুজিবুল আলম সোহেল গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ডাক্তারের জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও আবাসিক মেডিকেল অফিসারকে কমপক্ষে অর্ধশতাধিক বার কল করেন। কিন্তু কেউই কল রিসিভ করেননি। তিনি বিষয়টি উপজেলা পরিষদের মিটিংয়ে উত্থাপন করবেন বলে জানান।

হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে ডা. ফেরদৌস আক্তার তিন দিনের প্রশিক্ষণে। কিন্তু বাস্তবে তিনি ৩ দিনের পারিবারিক ছুটি নিয়ে ঢাকায় অবস্থান করছেন। বক্তব্য জানতে মোবাইল ফোনে কল দিলে যথারীতি ফোন রিসিভ করেন নি।

মৌলভীবাজার জেলা সিভিল সার্জন ডা. চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ জানান, ইউএইচএফপিওদের অনেক সময় ঢাকায় প্রশিক্ষণে যেতে হয় তবে বর্তমানে তিনি প্রশিক্ষণে নয়, পারিবারিক কারণে তিন দিনের ছুটি নিয়েছেন।

হাসপাতাল কোয়ার্টারে তাদের না থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যখন সরেজমিন পরিদর্শনে যাই তখন দেখা যায় সব ঠিক থাকে। তবে এবার সামগ্রিক সকল অভিযোগ খতিয়ে দেখতে শীঘ্রই হাসপাতালে যাবো। তাছাড়া উনার মোবাইল ফোন চুরি হয়েছে শুনেছি তাই আমিও দুইদিন যোগাযোগ করতে পারিনি।