তিন মাসের মধ্যে নির্ণয় করা যাবে ‘অটিস্টিক শিশু’

‘অটিস্টিক শিশু’ ও ‘ডাউন শিশু’ জন্মহার কমাতে হলে নারী-পুরুষ উভয়কেই বেশি বয়সে বিয়ে করা ঠিক হবে না, উপযুক্ত বয়সে বিয়ে করতে হবে বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেছেন, এখন থেকে অটিস্টিক শিশু ও ডাউন শিশু গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসের মধ্যে স্কিনিংয়ে নির্ণয় করা যাবে।

মঙ্গলবার (১৪ জুন) সকালে হাসপাতালের শহীদ ডা. মিলন হলে দেশে প্রথমবারের মতো গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে ভ্রুণের ক্রোমোজোমাল বা জিনগত ত্রুটি নির্ণয় চালু অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

পরীক্ষাটি প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগ, ফিটোম্যাটারনাল মেডিসিন বিভাগ, রেডিওলজি ইমেজিং বিভাগ এবং ল্যাবরেটরি মেডিসিন বিভাগের সমন্বয়ে চালু হয়েছে।

উপাচার্য বলেন, ভ্রুণে ক্রোমোজোমাল বা জেনেটিক ত্রুটির মধ্যে ডাউন সিনড্রোম অন্যতম। ডাউন সিনড্রোম সম্পর্কে সচেতনতা না থাকায় দিন দিন দেশে ডাউন শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। বেশির ভাগ ডাউন শিশুর জন্মগত হার্টের সমস্যা থাকে বলে অনেক শিশু জন্মের পর মারা যায়, যা নবজাতকের মৃত্যুহার বাড়ায়। আর যারা বেঁচে থাকে তারা মানসিক প্রতিবন্ধী হিসেবে সংসার ও দেশের বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। প্রসবজনিত জটিলতায় মাতৃমৃত্যুরোধের বিষয়টি যেভাবে প্রাধান্য পেয়েছে, অনাগত শিশুর ডাউন সিনড্রোমের মতো জেনেটিক বা জন্মগত ত্রুটির বিষয়টি সেভাবে আলোচনায় কখনো আসেনি।

শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমেরিকার মতো উন্নত দেশে গর্ভবতী মায়ের সেবা দেওয়ার সময় মাকে ডাউন সিনড্রোম সম্পর্কে ধারণা দেওয়া চিকিৎসকের জন্য বাধ্যতামূলক হলেও আমাদের দেশে তা উপেক্ষিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, দেশে প্রতিবছর প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার অর্থাৎ প্রতিদিন প্রায় পনেরোটি ডাউন শিশুর জন্ম হয়। নারী যত বেশি বয়সে মা হবেন, তার সন্তান ডাউন শিশু হবার সম্ভাবনাও তত বেশি হবে। যেমন ২৫ বছর বয়সের প্রতি ১ হাজার ২০০ জন গর্ভবতী মায়ের মধ্যে একজনের, ৩০ বছর বয়সের প্রতি ৯০০ জন মায়ের মধ্যে একজনের ডাউন শিশু হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, ডাউন শিশু বেশির ভাগ ৩৫ বছর বয়সের পর ঝুঁকি দ্রুত বাড়তে থাকে। ৩৫ বছর বয়সের প্রতি ৩৫০ জন গর্ভবতী মায়ের মধ্যে একজনের এবং ৪০ বছর বয়সের প্রতি ১০০ জন মায়ের একজনের ডাউন শিশু হতে পারে। আজ থেকে বিএসএমএমইউ তে দেশেই মায়ের গর্ভে ১১ হতে ১৪ সপ্তাহে অর্থাৎ বাচ্চার আকার যখন দেড় থেকে দুই ইঞ্চি তখনই মায়ের গর্ভে ভ্রুণ ডাউন সিনড্রোম ও অন্যান্য ক্রোমোজোমাল ত্রুটিতে আক্রান্ত কি না তার ঝুঁকি নির্ণয় করা যাবে। পরীক্ষায় উচ্চ ঝুঁকি পাওয়া গেলে তা আরেকটি পরীক্ষার মাধ্যমে শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যাবে। সারা বিশ্বে ২১ মার্চ ডাউন সিনড্রোম দিবস পালিত হয়।

অনুষ্ঠানে দেশে ডাউন সিনড্রোম নিয়ে জন্মগ্রহণ করা শিশুদের সংখ্যা ও সমাজে তার প্রভাব নিয়ে আলোকপাত করেন প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রেজাউল করিম কাজল। তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে প্রায় আড়াই লাখ ডাউন শিশু আছে।

অনুষ্ঠানে গর্ভাবস্থায় ভ্রুনে জেনেটিক ত্রুটি নির্ণয়ের প্রযুক্তিগত ব্যবহার নিয়ে কথা বলেন রোস ডায়াগনস্টিকের বৈজ্ঞানিক ডা. দিপিকা জিনদাল। তিনি জানান, আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে মায়ের পেটে ১১ থেকে ১৪ সপ্তাহের শিশুর ঘাড়ের পেছনের তরলের মাত্রা, গর্ভবতী মায়ের শরীরেও ‘প্যাপ এ’, ও ‘বিটা এইচসিজি’ নামক হরমোনের মাত্রা একটি সফটওয়্যায়ের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে রিপোর্ট তৈরি করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন, প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রেজাউল করিম কাজল, রোস ডায়াগনস্টিকের বৈজ্ঞানিক ডা. দিপিকা জিনদাল। এ ছাড়া হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা উপস্থিত ছিলেন।