জ্বালানি তেলের এই বৈশ্বিক সংকটের সময় বাংলাদেশের জ্বালানিনীতি নিয়ে যখন সমালোচনা হচ্ছে, তখন পেট্রোবাংলা জানিয়েছে, ২০২৫ সালের মধ্যে ১৭টি অনুসন্ধান কূপ খনন করতে চায় তারা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে গ্যাসের উৎপাদন ব্যবস্থায় আগে থেকে নজর দিলে সংকট এতটা গভীর হতো না।
‘এই সংকটের মূল কারণই জ্বালানির অভাব,’ মন্তব্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম দেশ টিভিকে বলেছেন, ‘সরকার বেশ কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন উৎস থেকে জ্বালানি সংগ্রহের চেষ্টা করেছে। কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে গ্যাসের উৎপাদন ব্যবস্থা নিয়ে। আমাদের দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের ওপর অতিরিক্ত ভর করা হয়েছে। ২০০৯-১০ সালের দিকেও গ্যাস দিয়ে আমরা ৯০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছি। গ্যাসের প্রাপ্তি যেন বজায় থাকে, সেই ব্যবস্থা আমাদের করা উচিত ছিল।’
বাংলাদেশে ধারাবাহিকভাবে গ্যাসের উৎপাদন কমতে থাকায় সরকার উচ্চমূল্যের এলএনজিতে নির্ভর করেছিল। এখন রাশিয়া থেকে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় উন্নত দেশগুলো এই এলএনজি কিনছে। তাদের সঙ্গে দামে পেরে উঠছে না বাংলাদেশ। গত কয়েক মাসে বিশ্ববাজারের যে অবস্থা তাতে এখন সরকারকে এলএনজি কিনতে হলে প্রায় সাতগুণ দাম দিতে হবে!
সংকট যখন এমন পর্যায়ে তখন নড়েচড়ে বসছে সরকার। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান সোমবার (৮ আগস্ট) গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘উচ্চ দামে গ্যাস আমদানি না করে দেশে উৎপাদন বাড়াতে সর্বোচ্চ জোর দেওয়া হচ্ছে। ২০২৫ সালের মধ্যে ১৭টি অনুসন্ধান কূপ খনন করা হবে। এ ছাড়া নতুন পিএসসি তৈরি করা হচ্ছে।’
জ্বালানি তেলের শোধনক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়েও এখন নজর দিচ্ছে সরকার। বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে অনেক আগে থেকে তাগাদা দিলেও এতদিনে তেমন কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জ্বালানিবিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ড. ম. তামিম এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমরা অনেকদিন ধরে এই প্রসঙ্গে তাগাদা দিয়ে আসছি। সরকারের দিক থেকেও নীতিগতভাবে দ্বিতীয় শোধনাগারের কথা বলা হয়েছে। এক দশক ধরে পরিকল্পনা হচ্ছে। এখন টেন্ডারের জন্য অপেক্ষা করছে। আমি জানি না, কেন হচ্ছে না, কেন হয়নি। এর পেছনে বিনিয়োগ একটা ব্যাপার আছে। প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার মতো লাগবে। কিন্তু বাংলাদেশে বিনিয়োগ তো কোনো ইস্যু না। শোধনাগারের সক্ষমতা বাড়লে অনেক লাভ।’