গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কমিটি করে সাংগঠনিক কর্মকান্ড পরিচালনা হচ্ছে : আলী মর্তুজা
গঠনতন্ত্র বিরোধী কার্যক্রমে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দিয়েছি : অমল কর
আবির হাসান-মানিক, তাহিরপুর
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের বিবদমান দুই গ্রুপের বিভাজন স্পষ্ট হয়ে উঠছে। গ্রুপ দুটি একে উপরের বিরুদ্ধে এখন কাদা ছোড়াছুঁড়িতে লিপ্ত। তৃণমূল আওয়ামী লীগ বলছে মূলত কাউন্সিলকে কেন্দ্র করেই উপজেলা আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষ হয়েছে। দুই পক্ষই পাল্টাপাল্টি গনসংযোগ, কর্মসূচি নিয়ে ব্যস্ত। যেখানে প্রকৃত অর্থে দলই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং স্বাধীনতাবিরোধী পক্ষ ফায়দা নিবে।
জানা যায়, ২০১৫ সালে আবুল হোসেন খানকে সভাপতি ও অমল কান্তি করকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩ বছর মেয়াদী ৬৭ সদস্য বিশিষ্ট তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটির অনুমোদন দেয় সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ। বিগত দিনে ওই কমিটির ৫জন নেতা মারা গেছেন।
এদিকে ৩ মাস আগে এক জরুরি সভা ডেকে কমিটির ৪৭জন সদস্যর লিখিত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে অনাস্থা জানিয়ে সভাপতি আবুল হোসেন খান ও সাধারণ সম্পাদক অমল কান্তির করকে দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেয় একটি পক্ষ। ওইদিনই আলী মর্তুজাকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও শফিকুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করা হয়।
সভাপতি আবুল হোসেন খান ও সাধারণ সম্পাদক অমল কান্তি করের বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র বিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার অভিযোগ এনে উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানান, কমিটি গঠনের পর পদবীপ্রাপ্তরা নিয়ম অনুযায়ী পরিচিতি সভা করার কথা থাকলেও তা করেনি। সাড়ে সাত বছর পেরিয়ে গেলেও একটি বর্ধিত সভা তারা করতে পারেননি, যা সম্পূর্ণ গঠনতন্ত্র বিরোধী।
আরো অভিযোগ তুলেন, বিগত উপজেলা ও ইউনিয়ন নির্বাচনে দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী মাঠে বিগত কমিটির দায়িত্বশীল নেতারা কাজ করেছেন। এ নিয়ে ঢাকায় লিখিত অভিযোগও করা হয়েছে।
অপরদিকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আলী মর্তুজা ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলামের দিকে দলীয় নিয়মভঙ্গের নানা অভিযোগের আঙুল তুলে উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা জানান, দলের অনুপ্রবেশকারীরা উপজেলা আওয়ামী লীগে কোন্দল ও গ্রুপিং তৈরিতে অপপ্রয়াস চালাচ্ছে।
নেতারা আরো অভিযোগ করেন, দলের চিহ্নিত অনুপ্রবেশকারী আজ নেতা বনে গেছেন। সাংগঠনিক নিয়মের তোয়াক্কা না করে অগঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নিজেদের সভাপতি আর সাধারণ সম্পাদক দাবি করছে, যেখানে তৃণমূলের কোনই সম্পৃক্ততা নাই।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ছাত্রনেতা গোলাম সরোয়ার লিটন বলেন, তাহিরপুরে একটা সময় মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের রাজনৈতিক শক্তিগুলো এক ছিল। আজ তা চোখে পড়েনা। নেতারা কেবল নিজেদের আখের গোচানোর কাজে ব্যস্ত। এর বিরূপ প্রভাব পড়বে গণ-মানুষের মধ্যে। তাছাড়া দলে নেই কোন রাজনৈতিক চর্চা। সবাই কেবল নিয়ম রক্ষার কর্মসূচি পালনে ব্যস্ত।
তাহিরপুরের সন্তান সুনামগঞ্জ জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. সেলিম আহমেদ বলেন, তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগে কোনো গ্রুপ নেই। বিগত কমিটির ৪৭জন সদস্য জরুরি এক সভা ডেকে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী মেয়াদউর্ত্তীন কমিটি, দলীয় কর্মকাণ্ডে নিষ্ক্রিয়তা, স্বাধীনতা বিরোধীদের সাথে যোগসাজশ রক্ষা ইত্যাদি কারণে তৎকালীন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দিয়েছেন। এখন উনারা স্বাধীনতা বিরোধীদের সাথে নিয়ে ১৫ আগস্টের মত একটি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে তৃণমূলে বিভাজন ও দলকে দুর্বল করে রাখার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন। তবে দলের সাংগঠনিক সিস্টেমের বিরুদ্ধে যাওয়ায় তাদের এসব কর্মকাণ্ড তৃণমূল নেতাকর্মীরা গ্রহণ করেনি।
২০১৫ সালের কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমল কান্তি কর জানান, আজকে যিনি নিজেকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দাবি করছেন তিনি ২০০১ সালে বিএনপি থেকে বহিস্কৃত নেতা। নেত্রীর কাছে দলে অনুপ্রবেশকারীর তালিকায় সিলেট বিভাগের যাদের নাম রয়েছেন সেখানে তিনিও রয়েছেন। তাদের এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে দায়িত্বশীলদের চিঠি দিয়েছি। তিনি আরো যোগ করেন, ‘আমরা শহীদ পরিবারের সন্তান। কে রাজাকার, আর কে বিএনপির এজেন্ট তা উপজেলাবাসী জানেন।’
এক পক্ষের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আলী মর্তুজা জানান, ‘গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ৪৭ সদস্যর স্বাক্ষরিত মতামতের ভিত্তিতে যে কমিটি গঠন হয়েছে তা জেলার নেতৃবৃন্দের কাছে জমা দেয়েছি। নিয়ম অনুযায়ী ৩মাসের মধ্যে জেলার সিদ্ধান্ত জানানোর কথা। না জানালে বিধি অনুযায়ী মেনে নিতে হবে জেলা আওয়ামী লীগ তাতে সম্মতি দিয়েছেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘বিগত কমিটির পাঁচজন নেতা মারা গেছেন কিন্তু শূন্যপদ পূরণে কোনও সভা ডাকেনি বিগত কমেটি। তাছাড়া উপজেলার বিএনপির চিহ্নিত এক নেতাকে সাথে নিয়ে দলীয় কাজে অংশ নিচ্ছেন। আমরা যা করেছি বিধি অনুযায়ী সাংগঠনিক নিয়মে তৃণমূলকে সাথে নিয়েই করেছি। পুরো বিষয়টি জেলার দায়িত্বশীলরা অবগত আছেন।’
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ অন্যতম বৃহৎ দল। এখানে মান-অভিমান থাকবে, স্বাভাবিক। তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের কর্মকাণ্ড বিষয়ে আমরা অবগত হয়েছি। একটি পক্ষ সদস্যর আধিক্যর ভিত্তিতে কমিটি করে কার্যক্রম চালাচ্ছে তাও আমাদের গোচরে এসেছে। গ্রুপ দুটির কর্মকাণ্ড সাংগঠনিক সিস্টেমে তদন্ত হবে এবং জেলা আওয়ামী লীগের পরবর্তী কার্যকরী সভায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিষয়গুলো নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।’