তাহিরপুরে ১০০ টাকার ভাড়া দেড়শ’, কাঁচা মরিচে ‘আগুন’

”তেলের দাম বাড়ছে আমার কি, অত টাকা ভাড়া দিতে পারতাম না! সবখানে জিনিসপত্রের দাম বাড়তি। এখন সবার দেখাদেখি মোটরসাইকেলের তারাও ভাড়া বাড়াই দিছে।”

ক্ষোভ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন তাহিরপুরের বাদাঘাট থেকে সুনামগঞ্জ জেলা শহরের গন্তব্যে রওয়ানা করা রবিউল (২৭) নামের এক মোটরসাইকেল যাত্রী।

রবিউল আরো জানান, এতদিন মোটরসাইকেল চালকরা তাহিরপুর থেকে সুনামগঞ্জের আব্দুজ জহুর সেতু পর্যন্ত ১০০ টাকা ভাড়া নিত। এখন পেট্রোলের দাম নাকি বেড়েছে, তাই ১৫০ টাকা নিবে। প্রয়োজনীয় জরুরি কাজের জন্য শহরে যেতে হয়। তাছাড়া মোটরসাইকেল ছাড়া পর্যাপ্ত বিকল্প বাহনও নেই। যাত্রীরা নিরুপায়।

২৫ বছর ধরে তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ রোডে মোটরসাইকেলে ভাড়ায় যাত্রী বহন করার কাজ করছেন আব্দুল খালেক(৬৩)। তিনি উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের কামড়াবন্দ গ্রামের বাসিন্দা। ৩৫টাকা লিটারের তেল দিয়ে ভাড়ায় যাত্রী বহনের কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। বর্তমানেও এই পেশায় রয়েছেন।

আব্দুল খালেক বলেন, ২৫ বছর আগে বাদাঘাট বাজার থেকে সুনামগঞ্জ শহরে দুইজন যাত্রী নিয়ে গেলে ৫০০টাকা ভাড়া নিতাম। কারণ তখন যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল ছিলনা। যাত্রী নিয়ে শহরে গিয়ে আবার দিনে-দিনে ফিরে আসা যেত না। সুনামগঞ্জ শহরে হোটেলে রাতে থেকে পরের দিন ফিরতে হত। আগের চেয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল হয়ছে, তাই দুইজন যাত্রীর ভাড়া ২০০টাকা নেয়। এখন তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার এই ভাড়ায় পোষাবে না। তাছাড়া নিত্য প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্রের দাম বাড়তি।

দিঘীরপাড় গ্রামের বাসিন্দা ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালক কামাল হোসেন বলেন, তেলের দাম লিটারে ৪০ টাকা বাড়ছে। যাত্রীদের কাছে ভাড়া বেশি চাইলে কথা কাটাকাটি হচ্ছে। আমরা চালকরা কি করতাম? তাছাড়া অধিকাংশ গাড়ির চালক কিস্তির টাকা ও মালিককে ভাড়ার টাকা পরিশোধ করে অল্প আয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। আগের ভাড়ায় কিভাবে পোষাবে? এমন হলে ড্রাইভারদের এই পেশা বাদ দিয়ে অভাব-অনটনে দিন কাটাতে হবে।

উপজেলার অগ্রনী মোটরসাইকেল চালক সমবায় সমিতির সভাপতি আজিজুর রহমান জানান, ‘তাহিরপুরে ৫ হাজারের বেশি ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল রয়েছে। এর মাধ্যমে তারা জীবিকা নির্বাহ করে। উপজেলা জুড়ে সমিতি আছে ২০টির মতো। পেট্রোলের দাম বাড়ার কারণে সমিতির সদস্যরা ভাড়া বাড়ানোর জন্য আমাদের অনুরোধ জানাচ্ছে। আমরা বলেছি কত টাকা বাড়ানো যায় তা আলোচনা করে তারপর সমিতির সিদ্ধান্ত জানাব।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান কবির বলেন, ‘উপজেলার ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলগুলো যেন জ্বালানি তেলের দামের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ভাড়া নির্ধারণ করে, বিষয়টি সমিতিগুলোকে বলে দেওয়া হবে।’

এদিকে তাহিরপুরে কাঁচা মরিচের দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে ২০০ টাকা থেকে বেড়ে একলাফে ৩০০ টাকায় উঠেছে। কাঁচা মরিচ ছাড়াও সব ধরনের সবজির দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজি প্রতি ৪০-৫০ টাকা করে বেড়েছে। তাছাড়া ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ৩০ টাকা। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের এমন চড়া দামে সাধারণ মানুষ তাদের আয়ের সাথে ব্যয়ের সামঞ্জস্য খুঁজতে গিয়ে দিশেহারা।

কাঁচা মরিচ কিনতে আসা বাদাঘাট বাজারের ভাই ভাই হোটেলের মালিক আবুল হোসেন জানান, এক সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০০ টাকা। দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত উর্ধ্বগতিতে ব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষ সবাই দিশেহারা।

উপজেলার সবচেয়ে বড় হাট বাদাঘাট বাজারের সবজি বিক্রেতা জজ মিয়া বলেন, কাঁচা মরিচের চালান অনেক কম। আমরা পাইকার থেকে যে দামে কিনি, পরে কেজিতে ২০টাকা লাভে খুচরা বাজারে বিক্রি করি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসান-উদ-দৌলা জানান, ‘বন্যার কারণে সবজির উৎপাদন কম হওয়ার এর প্রভাব পড়েছে দামের উপর। আমরা পরামর্শ দিচ্ছি, সবাই যেন ব্যক্তি পর্যায়ে সবজির চাষাবাদ বাড়ান।’