সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে নৌকাঘাটের ইজারা আদায়ের জন্য খাস কালেকশনের নামে চলছে অর্থ হরিলুটের মহোৎসব।
অভিযোগ উঠেছে, প্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজসে এসব নৌকাঘাট থেকে খাস কালেকশনের নামে অতিরিক্ত টোল আদায় করছে কিছু সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট। তাছাড়া আদায়কৃত টোল সরকারি কোষাগারে নামমাত্র জমা করে এর সিংহভাগ চলে যাচ্ছে ওই সিন্ডিকেটের পকেটে। এতে কয়েক কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
তাহিরপুর উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত ১৪২৯ বাংলা সনে পাতারগাঁও নৌকাঘাট থেকে ৪১,৮৬৮ টাকা, ঘাগড়া হতে লাউড়েরগড় নৌকাঘাট থেকে ৮৮ লাখ ৯হাজার ৬৫০ টাকা, ডাম্পের বাজার নৌকাঘাট থেকে ১৮লাখ, বাদাঘাট বাজার নৌকাঘাট থেকে ১লাখ ৩০ হাজার এবং শ্রীপুর বাজার নৌকাঘাট থেকে ৮০ লাখ ৩৮ হাজার ৫’শ টাকা মূল্যে ইজারা প্রদান করা হয়েছিল। সম্প্রতি এসব নৌকাঘাটের ইজারার মেয়াদ শেষ হলে পুনরায় ইজারার জন্য দরপত্র আহবান করা হয়। কিন্তু আগ্রহী দরদাতা না পাওয়ায় ও মামলা জটিলতা থাকায় এসব নৌ ঘাটের ইজারা প্রদান করা যায়নি। ফলে খাস কালেকশনের মাধ্যমে টোল আদায় চলছে। তবে অভিযোগ রয়েছে, ইজারা মেয়াদ উর্ত্তীন এসব নৌকাঘাট খাস কালেকশনের জন্য উন্মুক্ত নিলাম পদ্ধতি অনুসরণ করেনি উপজেলা প্রশাসন।
এদিকে উপজেলার অন্যতম ঘাগড়া-লাউড়েরগড় নৌকা ঘাটটি দিয়ে প্রতিদিন সহস্রাধিক মালবাহী নৌকা চলাচল করে। এ ঘাটটি তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অধীনে খাস কালেকসনের জন্য দেওয়া হয়েছে। যেখানে যাদুকাটা নদীর উভয় পাশে কার্গো বা দেশীয় বালু পাথর ও অন্যান্য সকল ধরনের মালামাল বহনকারী নৌকা থেকে নুন্যতম একশ থেকে সর্বোচ্চ সাতশ টাকা টোল আদায় করার কথা। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে এসব মালবাহী নৌকা থেকে প্রশাসনের নাম ভাঙিয়ে পাঁচশ থেকে তিন হাজার হাজার টাকা পর্যন্ত টোল আদায় করছে স্থানীয় একটি সিন্ডিকেট। এবং নৌকাঘাটে প্রতিদিন প্রায় লাখ টাকা টোল আদায় করা হলেও সরকারি কোষাগারে সর্বসাকূল্যে জমা করা হচ্ছে প্রতিদিন গড়ে এক হাজার থেকে পনের’শ টাকা। একই চিত্র উপজেলার খাস কালেকশনকৃত অন্য নৌকাঘাট গুলোর।
তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিস সূত্রটি জানায়, এ বছর পয়েলা বৈশাখ থেকে গত দেড় মাসে ঘাগড়া-লাউড়েরগড় নৌকাঘাট থেকে খাস কালেকশনের মাধ্যমে টোল আদায় হয়েছে ৬০ হাজার টাকা।
ঘাগড়া-লাউড়েরগড় ঘাটে চলাচলকারী বালুবাহী এক নৌকার মালিক বলেন, গত বছরের তুলনায় তিনগুণ বেশি হারে টোল নেওয়া হচ্ছে। টোলের রশিদ দেওয়া হলেও তাতে টাকার পরিমাণ উল্লেখ করা হয় না।
যাদুকাটা বালুমহালের গত বছরের ইজারাদার ও জেলা শ্রমিকলীগ সভাপতি সেলিম আহমেদ বলেন, সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন নিজের প্রভাব খাটিয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে চাপে ফেলে তার অনুসারীদের দিয়ে এসব নৌকাঘাটে খাস কালেকশনের নামে চাঁদাবাজি করাচ্ছেন।
উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, স্থানীয় প্রশাসনকে উন্মুক্ত নিলামের মাধ্যমে খাস কালেকশনের উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তা না করে রাজনৈতিক চাপের মুখে নামমাত্র এসব ঘাটের খাস কালেকশন দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। এতে করে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে।
এদিকে অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়টি অস্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমা বলেন, প্রশাসনের লোকজন দিয়েই খাস কালেকশন করা হচ্ছে, এখানে কোনো সিন্ডিকেট নেই।
সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন সিলেট ভয়েসকে বলেন, মামলা জটিলতা থাকায় এসব নৌকাঘাটে যে নিয়মনীতি অনুযায়ী খাস কালেকশন করার কথা সেভাবেই স্থানীয় প্রশাসন উদ্যোগ নিয়েছেন। খাস কালেকশনে আমার লোকজনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
সিলেট ভয়েস/এএইচএম