তাওহীদ রহমানের কবিতা ‘একুশ- বাঙালির আত্মপরিচয়’
তা ও হী দ. র হ মা ন
একুশ তুমি,
বাঙালির শাশ্বত চেতনার উন্মেষ,
রক্তে জ্বালিয়ে দেয়া অধিকারের নেশা।
তোমার সংগ্রামী চেতনায় গ্রথিত করেছে দুটি ধারা-
রাজনৈতিক আর সাংস্কৃতিক আন্দোলন।
আর যা কি-না মুক্তিসংগ্রামের মোহনায় গিয়ে ঠেকেছে।
একুশ তুমি,
বাঙালির স্বাধিকার চেতনার ভিত্তিমূল।
যে চেতনায় উজ্জীবিত বাঙালি –
একাত্তরে ঝাঁঁপিয়ে পড়েছিল মুক্তিযুদ্ধে।
জন্ম দিয়েছিল একখণ্ড অখণ্ড ভূমি-
আমাদের স্বাধীন মাতৃভূমি বাংলাদেশের।
একুশ তুমি,
বাঙালির স্বাধীনতার প্রথম স্পর্শ,
মায়ের ভাষাকে উচ্চাসনে অধিষ্টিত করার মাধ্যম।
তোমার স্পর্শে বাঙালি লাভ করেছিল আত্মমর্যাদার চেতনা,
পেয়েছিল রাষ্ট্রভাষাকে মর্যাদাদানের প্রেরণা,
আর অনুভব করেছিল ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা।
একুশ তুমি,
সুযোগ করে দিয়েছ সকল মাতৃভাষাকে বিকশিত হওয়ার,
দুর্বল বলে কোনো ভাষার ওপর প্রভুত্ব করার অপচেষ্টাকে করেছ নস্যাৎ,
দিয়েছ ছোটবড় সকল ভাষাকে সম্মান,
বিশ্ববাসীকে করেছ একুশের চেতনাকে ধারণ করে মাতৃভাষাকে ভালবাসায় অনুপ্রাণিত,
রক্ত দিয়ে গোটা বিশ্বকে শিখিয়ে দিয়েছ ভাষাকে ভালবাসার মন্ত্র।
একুশ তুমি,
শামসুর রাহমানের ‘বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা’
আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ’র ‘মাগো ওরা বলে’ কিংবা –
মুনীর চৌধুরীর ‘কবর’ নাটকে বাঙালি সংস্কৃতি চেতনার স্বাক্ষর।
চুয়ান্ন সনে বাঙলা একাডেমী প্রতিষ্ঠার অবদান,
প্রাণের মহোৎসব একুশে বইমেলা তো তোমারই সৃষ্টি।
একুশ তুমি,
রফিক-সালামের খুনে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস,
৩৬৬ দিন হতে রক্তিম শালুক ফুলের মতো-
ছিঁড়ে আনা একটি অমর, অম্লান চিরবিভাময় দিন।
যে দিনকে অন্য দিনের সাথে মিশিয়ে ফেলা বাঙালির পক্ষে দুষ্কর,
দুষ্কর সে দিনের সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তকে প্রাকৃতিক ঘটনা বলে ভুলে থাকা।
একুশ তুমি,
বাঙালি মুক্তিপাগলদের জাতীয় উৎসব,
বিশ্বজনীন স্বীকৃতিপ্রাপ্ত এক মহান দিন,
প্রাণের কথা আপন ভাষায় প্রকাশ করার বেড়ে ওঠা হৃদস্পন্দন,
গর্বিত বাঙালির গৌরবময় ইতিহাসের অকাট্য দলীল,
মায়ের ভাষায় কথা বলা আর স্বাধীন আশায় পথচলার সারথি।