পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিপাতের কারণে গোলাপগঞ্জের বাঘা ইউনিয়ন পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ওই ইউনিয়নের হাজারো মানুষ। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে ঘর থেকে বের হয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারছেন না অনেকেই। দেখা দিয়েছে নৌকার সংকট। নিরাপদ আশ্রয়ে আসার জন্য আর্তনাদ করছেন তারা।
শুক্রবার (১৭ জুন) দুপুরে উপজেলা বাঘা ইউনিয়নে গেলে দেখা যায়, বেশ কয়েকটি এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। সড়কে পানি উঠায় বন্ধ রয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। সকাল থেকে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে পরিবার পরিজন নিয়ে ছুটছেন তারা।
এদিকে শুধু বাঘা ইউনিয়ন নয়। পানিতে প্লাবিত পৌর এলাকার স্বরস্বতী, কামারগাঁও, ছিটাফুলবাড়ি, ফুলবাড়ি পূর্বপাড়া। ফুলবাড়ি ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি এলাকা দিয়ে সুরমা উপচে পানি ঢুকছে। স্থানীয়রা বালুর বস্তা দিয়ে বাঁধ দিয়ে পানি আটকানোর চেষ্টা করছেন।
যেভাবে পানি বাড়ছে, এভাবে বাড়তে থাকলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হবে। পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা আরও বাড়বে।
পানিবন্দি এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে খাবারের অভাব, নিরাপদ পানির সংকট। পানিবন্দি মানুষ গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে ছুটছেন অন্যত্র। পানিতে তলিয়ে গেছে লাখ-লাখ টাকার ফিসারির মাছ। জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।
এদিকে এখন পর্যন্ত বন্যাদুর্গত এলাকাগুলোতে সরকারিভাবে কোন ত্রাণসামগ্রী পৌঁছেনি।
দক্ষিণবাঘা গ্রামের রুম্মান আহমদ বলেন- পানির কারণে ঘর থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না। যত সময় যাচ্ছে পানি বাড়ছে।
লালনগর এলাকার তছন মিয়া বলেন- ঘরের মধ্যে পানি উঠে গেছে। পরিবারের ৫ সদস্যকে নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছি। কিছুই করার নেই।
বাঘা ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান বাহা উদ্দিন কান্নাজড়িত কন্ঠে পানিবন্দি মানুষের জন্য সকলের কাছে সহযোগীতা চান। তিনি বলেন- বার বার আমার কাছে কল আসছে পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসার জন্য। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকার কারণে বার বার ব্যর্থ হচ্ছি। সরকারিভাবে এখনো কোন ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছেনি।
এদিকে বন্যার্তদের জন্য উপজেলার বাঘা ইউনিয়নে ৫টি আশ্রয় কেন্দ্র, পৌর এলাকায় ২টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বাঘা ইউনিয়নের আশ্রয়কেন্দ্রগুলো হলো- নলুয়া কান্দিগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণবাঘা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্বগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর গোলাপনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পালানডুলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
এছাড়া পৌর এলাকার হাজি জছির আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও এমসি একাডেমি মডেল স্কুল ও কলেজে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসকল আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ঠাই নিচ্ছে বানভাসি মানুষ।
শুক্রবার সকাল থেকে পৌর এলাকার পানিবন্দি মানুষের খোঁজখবর রাখছেন পৌর মেয়র আমিনুল ইসলাম রাবেল। তাদের জন্য খাবারেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগামীতে তিনি যে কোন দুর্যোগে মানুষের পাশে থাকবেন বলে জানান তিনি।