তত্ত্বাবধায়কের অধীনেই নির্বাচন চাইলেন বিএনপি সমমনারা

আবারও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি ব্যক্ত করলো বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা দল ও জোটগুলো।

সরকার পতনের একদফা দাবিতে শুক্রবার (১১ আগস্ট) রাজধানীতে গণমিছিল করেছে যুগপৎ আন্দোলনের বিভিন্ন দল ও জোট। পৃথক কর্মসূচিতে নেতারা অবিলম্বে সংসদ বিলুপ্ত করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থার আহ্বান জানান।

এদিন বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গণমিছিলের আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে গণতন্ত্র মঞ্চ। জোটের সমন্বয়ক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ূম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব প্রমুখ।

সাইফুল হক বলেন, সরকার ও সরকারি দল পুরোপুরি দেউলিয়া বলেই তাদের বিরোধী দলের লেজুড়বৃত্তি করতে হচ্ছে, বিরোধী দলের পেছনে পেছনে হাঁটতে হচ্ছে। বিরোধী দল যেদিন কর্মসূচী ঘোষণা করছে, একই দিন তারাও মাঠে নামছে।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ১৫ বছর ধরে অবৈধ ক্ষমতাসীন সরকার অত্যাচার, নিপীড়ন, নির্যাতন চালিয়েছে। গুম, ক্রসফায়ার, মামলা, গ্রেফতার করে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে দমন করেছে। লুটপাট, দুর্নীতির মাধ্যমে লাখ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে তারা দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। এখন সেসব তথ্য বের হয়ে আসছে। এরা কেউ ছাড় পাবে না।

জোনায়েদ সাকি বলেন, এ সরকার এখন পুলিশনির্ভর হয়ে দমন-নিপীড়ন চালিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখার অপচেষ্টায় লিপ্ত।

শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, অবৈধ ক্ষমতাসীন সরকার সারা পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সব গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এ সরকারের ওপর থেকে সমর্থন তুলে নিয়েছে। এদের পায়ের তলায় মাটি নেই। স্বৈরাচার, ভোট ডাকাত, অগণতান্ত্রিক সরকারের দিন শেষ। পালানোর জায়গা খুঁজে পাচ্ছে না।

শুক্রবার বিকালে বিজয়নগর পানির ট্যাংকিসংলগ্ন সড়ক থেকে গণমিছিল বের করে ১২ দলীয় জোট। গণমিছিলপূর্ব এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে নেতারা বলেন, সরকারের পদত্যাগ এবং বিজয়ের প্রতিধ্বনি পাওয়া যাচ্ছে। জোট প্রধান জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, আদায় না হওয়া পর্যন্ত জনগণের ভোটের অধিকারের দাবিতে আন্দোলন চলবে।

সমাবেশ ও গণমিছিলে আরও অংশ নেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা, বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) রাশেদ প্রধান প্রমুখ।

আর বিকালে পূর্ব পান্থপথস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে গণমিছিল বের করে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি)। মিছিলটি মালিবাগ মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলের পূর্বে এক সমাবেশে এলডিপি প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। তাই তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ নয়। দেশবাসী অশান্তি ও কষ্টে থাকলে তাদের কিছু আসে যায় না। আওয়ামী লীগ অতীতে রাজনীতি ধ্বংস করেছিল, বর্তমানে মনুষ্যত্ব ও দেশ ধ্বংস করে দিয়েছে। তাই বলছি, অবিলম্বে পদত্যাগ করুন।

গণমিছিলে আরও অংশ নেন এলডিপির কেন্দ্রীয় নেতা নূরুল আলম তালুকদার, ড. নেয়ামুল বশির, ড. আওরঙ্গজেব বেলাল, অ্যাডভোকেট এসএম মোরশেদ, অধ্যক্ষ সাকলায়েন, মাহে আলম চৌধুরী, অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান, অধ্যাপিকা কারিমা খাতুন, বিল্লাল হোসেন মিয়াজি, অ্যাডভোকেট আবুল হাশেম, অ্যাডভোকেট নিলু, মেহেদী হাসান মাহবুব, আলী আজগর বাবু, ওমর ফারুক সুমন, ঢাকা মহানগরের মো. সোলায়মান, সাহাদাত হোসেন মানিক, অবাক হোসেন রনি, গণতান্ত্রিক যুবদলের আমান সোবহান, গণতান্ত্রিক শ্রমিক দলের এফএমএ আল মামুন, গণতান্ত্রিক স্বেচ্ছাসেবক দলের খালিদ বিন জসিম, গণতান্ত্রিক কৃষক দলের এবিএম সেলিমসহ প্রমুখ।

পুরানা পল্টন মোড়সংলগ্ন আল রাজি কমপ্লেক্সের সামনে থেকে গণমিছিল বের করে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট। মিছিলটি পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেস ক্লাব, বিজয়নগর হয়ে পুনরায় আলরাজি কমপ্লেক্সের সামনে গিয়ে শেষ হয়। গণমিছিলপূর্ব সমাবেশে জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২৫টির বেশি আসন পাবে না। সে কারণে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে ভয় পায় তারা। এতে আরও অংশ নেন বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টির সুকৃতি কুমার মণ্ডল, জাগপার সভাপতি খন্দকার লুৎফর, এনপিপির মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, বিকল্পধারার শাহ আহমেদ বাদল, বাংলাদেশ ন্যাপের এমএন শাওন সাদেকী প্রমুখ।

এছাড়া রাজধানীতে গণমিছিল করেছে মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ লেবার পার্টি, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), গণফোরাম (একাংশ) ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টি, ড. রেজা কিবরিয়া নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ, নুরুল হক নুর নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো।