ঢাকা-সিলেট ছয় লেন মহাসড়ক : দুই লটের চুক্তি সই

ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণে দুই লটের চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। চুক্তির আওতাধীন লট দুটির বাস্তবায়নের সময়কাল ৪ বছর এবং সড়ক ব্যবস্থাপনার সময়কাল ৬ বছর।

এ প্যাকেজের আওতায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল-বিশ্বরোড, শাহবাজপুর, রামপুর ও বীরপাশা এবং হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলাধীন আন্দিউরা ও বেজুরায় বিপজ্জনক বাঁক সরলীকরণের মাধ্যমে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত হবে। একই সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার চান্দুরা বাজার অংশে ওভারপাস নির্মাণের মাধ্যমে যানজট নিরসন হবে।

বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের সঙ্গে দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান HEGO-MIR AKHTER JV ও CHSIETC-SLGC-PDL JV এর সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়েছে।

দুই অংশে বিভক্ত প্যাকেজের লট নং-DS-5 এর জন্য সওজের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান HEGO- MIR AKHTER JV এর। এ চুক্তিটির মূল্য ১২৩২ কোটি টাকা।

এ অংশে সরাইল ইন্টারসেকশন হতে বুধন্তি বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত ১৫.৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হবে। এ প্রকল্পের আওতায় ১১টি কালভার্ট ও ১১টি সেতু। একই সঙ্গে একটি ওভার পাস (দৈর্ঘ্য: ৬৯০.০০ মিটার, চান্দুরা) ও ২টি ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হবে।

অন্যদিকে পট নং DS-6 এর জন্যে সওজের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান CHSIETC-SLGC-PDL JV এর। এ অংশে বুধন্তি বাসস্ট্যান্ড হতে এস এম স্পিনিং মিল পর্যন্ত চেইনেজ পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ করা হবে। এ চুক্তির মূল্য ১০৮৫.৩৪ কোটি। এ DS-6 এর অধীনে ২৫টি কালভার্ট, ২টি ফুট ওভারব্রীজ ও ৭টি সেতু নির্মাণ করা হবে।

Package: WP-03 (লট নং DS-5 এবং লট নং DS-6) এর আওতাভূক্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জ জেলার মোট ৩৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মহাসড়কের নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নের চুক্তি সম্পাদন করা হচ্ছে।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, এই প্রজেক্টটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। দুই বছর আগেই শেষ হতো এ প্রকল্পের কাজ।

বিএনপির অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের সময় এই মহাসড়ক দুই লেনে করা হয়, তার সমালোচনা করেছেন ওবায়দুল কাদের। এ বিষয়ে তিনি বলেন, শুরুতেই চার লেন করা উচিত ছিল। এটা একটা ভুল। প্রকল্প নিতে এসব ভুল করা উচিত নয়। সাইফুর রহমান সাহেব কেন এই ভুল করেছে, এটা বোধগম্য নয়।

কাদের বলেন, এডিবি ফান্ডিং করেছে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংককে ধন্যবাদ। ১৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ব্যয়ের মধ্যে এডিবি দিচ্ছে ১৩ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা।

সড়ক অতিদ্রুত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে কাদের বলেন, যারা কাজ করছেন তারা ভালো ঠিকাদার, সুনাম আছে। কিন্তু সড়ক ফোর লেন করবো, একবছর- দুই বছরের মধ্যে সড়ক নষ্ট হবে এটা তো হবে না।

বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, দেশ আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে। মেট্রোরেল, পাতালরেল, বঙ্গবন্ধু টানেলের সঙ্গে সিলেট মহাসড়কও যুক্ত হলো। এর মাধ্যমে সিলেটের রাস্তাও আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হবে।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী, সাসেক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এ কে এম ফজলুল করিম, প্রাণ-আরএফএলের এমডি আহসান খান চৌধুরী।

এ প্রকল্পে যৌথভাবে অর্থায়ন করছে বাংলাদেশ সরকার ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। প্রকল্প ব্যয় ১৬৯১৮.৫৮৮১ কোটি টাকা। এডিবি প্রকল্প সাহায্য দিচ্ছে ১৩২৪৪.৬৮৯৫ কোটি টাকা ও সরকার দিচ্ছে ৩৬৭৩.৮৯৮৬ কোটি টাকা।

২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৬ পর্যন্ত। এ প্রকল্পের অবস্থান নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট জেলা।

এ প্রকল্পের মোট দৈর্ঘ্য ২০৯.৩২৮ কিলোমিটার। এ প্রকল্পের আওতায় সেতুর ৬৬ টি ৬.০২ কিলোমিটার ও ৮ টি রেলওয়ে ওভারপাস দৈর্ঘ্য ৫.৩৯৫ কিলোমিটার। এ প্রকল্পের জন্যে ভূমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে ১০৩৩.৫৭ একর।

ভৌগলিকভাবে স্ট্র্যাটেজিক লোকেশনের কারণে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটি এশিয়ান হাইওয়ে (AH-1 ও AH-2), বিমসটেক করিডোর (করিডোর-৩) এবং সার্ক হাইওয়ে করিডোর (SHC-5) এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী সড়কটিকে উভয় পাশে ধীরগতির যানবাহনের জন্য পৃথক সার্ভিস লেনসহ ৬ লেনে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে ‘সাসেক ঢাকা-সিলেট করিডোর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। এই প্রকল্পের সার্বিক নির্মাণ কাজ এবং সামাজিক ও পরিবেশগত সুরক্ষা কার্যক্রম তদারকির জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করা হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য Package: WP-06 (লট নং DS-11 ও লট নং DS-12) এর আওতাভুক্ত সিলেট জেলার মোট ২৫.২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য মহাসড়কের নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নের চুক্তি সম্পাদন করা হচ্ছে। এই চুক্তির আওতাধীন লট দুটির প্রতিটির কনস্ট্রাকশন ফেইজের (Construction Phase) সময়কাল ৪ বছর এবং মেইনটেনেন্স ফেইজের (Maintenance Phase) সময়কাল ৬ বছর। পরিবেশের প্রভাব ও স্থায়িত্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ মহাসড়ক নির্মাণে পলিমার মডিফাইড বিটুমিন ব্যবহার করা হবে।

প্রসঙ্গত, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাওয়ায় এ মহাসড়ককে কেন্দ্র করে কয়েকটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সিলেট বিভাগে তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ, বন, চা-বাগান, পাহাড়, হাওড় ইত্যাদি প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর যা বৃহত্তর সিলেট বিভাগের ৪ টি জেলাকেই পর্যটন সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলেছে যেখানে প্রতিবছর লাখ লাখ দেশি-বিদেশি পর্যটক ভ্রমণ করেন। যেখানে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের ফলে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করবে।