সুনামগঞ্জের অন্যতম পর্যটন এলাকা তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটাকে বলা হয় রূপ-সম্পদ ও সমৃদ্ধের নদী। নদীটি ভারতের খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড় থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। দেশের খনিজ ও পর্যটন শিল্পে যাদুকাটার রয়েছে ব্যাপক অবদান।
চলতি বছর বাংলা সনের পহেলা বৈশাখ হতে যাদুকাটা বালুমহালের ইজারা দেয় সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন। যেখানে বলা হয়েছে কেবল সনাতন পদ্ধতিতে নদী থেকে বালু উত্তোলন করা যাবে।
কিন্তু প্রশাসনের নিয়মনীতি অমান্য করে যাদুকাটার বুকে সন্ধ্যা নামতেই শুরু হয় ড্রেজার তান্ডব। রাত-বিরাতে ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে এক শ্রেণির বালুখেকো চক্র। ফলে নদীটি তার রূপসৌন্দর্য্য হারাচ্ছে। হুমকিতে রয়েছে নদী তীরবর্তী বসতি, দেশের সবচেয়ে বড় শিমুল বাগান, যাদুকাটা সেতুসহ বিভিন্ন স্থাপনা। বিপর্যয়ের মুখে এখানকার পরিবেশ ও প্রকৃতি।
এদিকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে নির্বিচারে এই বালু উত্তোলনের ফলে বিপাকে পড়েছে এখানকার কয়েক হাজার বালু শ্রমিক। যাদের যাদুকাটা নদীতে বালু উত্তোলনের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করা ছাড়া বিকল্প কর্মসংস্থান নেই।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নদীতে বালু শ্রমিকরা সনাতন পদ্ধতিতে অর্থাৎ বেলচা-বালতি দিয়ে ছোট ছোট নৌকা নিয়ে বালু উত্তোলন করতো। কিন্তু সম্প্রতি এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা বেশি লাভের আশায় ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন শুরু করে। অভিযোগ রয়েছে এসব ব্যবসায়ীদের অনেকেই নদীর ইজারাদারদের লোকজন যারা সরকার দলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের অনুসারী এবং এলাকার প্রভাবশালী। যে কারনে ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে চাইনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যাদুকাটা নদীর এক বালু শ্রমিক বলেন ‘ভাই, যেভাবে পারেন ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করান, না হলে যাদুকাটার শ্রমিকরা না খেয়ে থাকবে, নদীর পাড়ের গ্রামগুলোও বিলীন হবে অচিরেই’
যাদুকাটা-২ বালুমহালের ইজারাদার খন্দকার মঞ্জুর আহমদ বলেন, ড্রেজার কে বা কারা চালায় এর সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। যাদুকাটা বালুমহালের ইজারাদার হিসেবে এটা আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার হচ্ছে।
তাহিরপুর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) আসাদুজ্জামান রনি বলেন, যাদুকাটায় পরিবেশ বিধ্বংসী ড্রেজার মেশিন নিষিদ্ধ। এর বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। গতকাল (শনিবার) রাতেও অভিযান চালিয়ে তিনটি ড্রেজার মেশিন জব্দ করা হয়েছে।
এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, যাদুকাটা নদীর পরিবেশ রক্ষায় কোনো আপোষ নেই। সামনে জাতীয় নির্বাচন তাই কিছু লোক আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জন করতে চাচ্ছে।
সিলেট ভয়েস/এএইচএম